'আগোত আলু আখার জইনতে এত ট্যাকা নাগে নাই'

  • বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

আগোত আলু আখার জইনতে এত ট্যাকা নাগে নাই৷ আগোত ৯০ কেজি বস্তা নিছলো ৩০০ ট্যাকা। আর এ্যালা ৫০ কেজির বস্তা নেওছে ৩৬০ ট্যাকা। এমার গুল্যার জইনতে হামরা আলুর লাব পাইনা। এমরা যদি বস্তাপ্রতি ২৪০ ট্যাকাও নেয় তাও লাব থাইকপে ১২০ ট্যাকা। এ্যালার মতো এতো দাম আছলো না আগোত। সবাইগুলা কয় এই বৎসরে আলু চাষ করিয়া হামার গুলার কপাল ফিরছে। তাতে হইবে কি হিমাগারোত ভাড়াও বাইচ্ছে৷ এভাবে আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রংপুরের ময়নাকুটির কৃষক হাবিব মিয়া।

রংপুরের হিমাগারগুলোতে ভাড়া বেশি নেওয়ায় ২ দিন আগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তবুও এখনো কমেনি হিমাগারের ভাড়া। আলু সংরক্ষণের একমাত্র ভরসা হিমাগার। আলুর দামের সাথে পাল্লা দিয়ে হিমাগারের বাড়তি ভাড়া গুণতে বিপাকে আলু চাষী ও ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

ভাড়া কমেছে বলে লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লেও সরেজমিনে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বিষয়টি নিশ্চিত করে অভিযোগ করেন জেলা হিমাগার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুরের একটি হিমাগারের ব্যবস্থাপক বলেন, সংরক্ষণ পর্যায়ে এ বছর ৫০ কেজি আলুর দাম গড়ে যা ছিল তার সঙ্গে হিমাগার ভাড়া,বস্তা ও পরিবহন খরচ কেজিপ্রতি বেড়েছে ৮ টাকা। সে হিসাবে ১ কেজি আলু হিমাগার থেকে বের হওয়া পর্যন্ত খরচ ২৮ টাকা। এজন্য এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু।

বিজ্ঞাপন

হিমাগারের ভাড়া নিয়ে জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, ৫০কেজি বস্তাতে আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে। ৭০ কেজি বস্তা হলে বাড়তি ২০ কেজির টাকা নেওয়া হয়। জানতে পেরেছি ৫০কেজি আলুর বস্তা হিমাগারে রাখলে অন্য জেলায় নেওয়া হয় ২৫০-২৮০ টাকা। সেক্ষেত্রে রংপুরে নেওয়া হচ্ছে ৩৮০-৪২০ টাকা। এভাবে অযৌক্তিকভাবে ভাড়া নেওয়ায় আলু চাষীরা দুই মাস আগে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। তারপরেও হিমাগার মালিকরা একই ভাড়া নিচ্ছেন। আলুর দাম বৃদ্ধির মূখ্য হচ্ছে হিমাগারে ভাড়া বেশি নেয়া৷

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তদারকির অভাবে কম দামে কেনা আলু হিমাগারে সংরক্ষণের পর মজুতদার ও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত বছর হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে তিন গুণ মুনাফা হওয়ায় পুরোনো মজুতদারের সঙ্গে এবার নতুন মজুতদারও যুক্ত হয়েছেন। চাষিদের কাছ থেকে কম দামে লাখ লাখ বস্তা আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণের পর কয়েক মাসের ব্যবধানে কয়েক গুণ বেশি দামে এখন বিক্রি করছেন মজুতদারেরা। তাই প্রকারভেদ আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭৫ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রংপুর অঞ্চলের চলতি অর্থ বছরে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ টন। যা গত বছরের তুলায় ৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে।