অপসারণে নেমেছে স্বেচ্ছাসেবী-প্রশাসন

ভুলুয়া নদীর ২০টি ডুবন্ত বাঁধে আটকে আছে বন্যার পানি 

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভুলুয়া নদীর ২০টি ডুবন্ত বাঁধে আটকে আছে বন্যার পানি 

ভুলুয়া নদীর ২০টি ডুবন্ত বাঁধে আটকে আছে বন্যার পানি 

লক্ষ্মীপুরে ভুলুয়া নদীর ২০টি ডুবন্ত বাঁধে বন্যার পানি আটকে আছে। এই নদীর দুই তীরের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় প্রসাশনের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। গত কয়েকদিন ধরে ভুলুয়াতে থাকা অবৈধ বাঁধ, মাছ শিকারের বেল জালসহ নানা প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে চলছেন তারা।

স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি এ আইনজীবী জেলার বন্যা কবলিত বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষায় ভুলুয়া নদীসহ জেলার নদী-খালের অবৈধ দখল ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন।

আদালত নদী-খালের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

বিজ্ঞাপন

এরপর স্থানীয় প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে রিটকারী আইনজীবী আবদুস সাত্তার পলোয়ান স্বেচ্ছাসেবকদের উজ্জীবিত করে নিজেও নামেন এসব নদী-খালের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে।

জানা যায়, প্রায় দেড় মাস ধরে পানিবন্দী লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদীর দুই পাড়ের লাখ লাখ বাসিন্দা। ভুলুয়ার তলদেশে ডুবন্ত বাঁধ আর মাছ শিকারের জাল বসানোর কারণে পানি প্রবাহে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এতে পানি যেন নামছেই না। ফলে দীর্ঘ মেয়াদী বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা এবং রামগতি উপজেলার চর রমিজ, চর বাদাম ও চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের বাসিন্দারা৷

স্বেচ্ছাসেবীরা জানায়, প্রতিবন্ধকতা অপসারণে নেমে ভুলুয়ার পদে পদে কৃত্রিম বাঁধ দেখতে পান তারা। স্থানীয় গুটি কয়েক লোভী বাসিন্দারা ভুলুয়ার অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়েছে। কেউ ভুলুয়ার পাড় দখল করে বসতি করেছেন। কেউ বাঁধ দিয়ে জাল বসিয়ে মাছ শিকার করছেন। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে ভু্ুলুয়ার পানি প্রবাহের গতি নেই বললে চলে।

ভুলুয়া নদীতে এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে বন্যার পানি নামছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তভোগীদের।


তারা জানান, নোয়াখালী অঞ্চল থেকে আসা পানি ভুলুয়া নদী হয়ে কমলনগর ও রামগতি হয়ে এ দুই উপজেলার পূর্বাঞ্চলের পানি মেঘনা নদীতে প্রবাহিত হয়। সেই পানি গিয়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরে।

রিটকারী আবদুস সাত্তার পলোয়ান বলেন, ভুলুয়া নদীতে পানির নিচে প্লাস্টিক নির্মিত গোপন বাঁধের সন্ধান পাওয়া গেছে। মাত্র পাঁচ কিলোমিটার অংশে ২০টির বেশি তৈরি কৃত্রিম বাঁধ আবিষ্কার করেছি আমরা। ভুলুয়া তীরের মানুষদের ৫০ দিনের বন্যার অন্যতম কারণ এই প্লাস্টিক বাঁধ। ১০ ফুট নেট জালে পুরো নদীর মাছ যাতে ঢুকতে বাধ্য হয় সেজন্য এপাশ থেকে ওপাশে ২০০ ফুট প্লাস্টিক বাঁধ দিয়ে রেখেছে। যা দিয়ে ১ ফোঁটা পানিও প্রবাহ হতে পারেনা, ইট, পাথর, রড, সিমেন্ট দিয়ে বানানো বাঁধ যেমন পানি আটকে রাখতে পারে, এটাও তার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ৫০ ফুট অন্তর অন্তর এরকম বাঁধ।

এ আইনজীবী বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীর বন্যা সত্যি 'মনুষ্য সৃষ্ট' বন্যা। এসব প্রতিবন্ধকতা অপসারণে সবার সহযোগিতা এবং সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নদী-খালের প্রতিবন্ধকতার জন্য অনেকাংশে দায়ী এলাকার কিছু জনগণ। আমাদের এবারের বন্যা ভবিষ্যতের জন্য অশনির সংকেত খাল ও নদীগুলো পুনরুদ্ধার করতেই হবে। খাল এবং ভুলুয়া নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি রোগ দেখা দিবে।