পাহাড়ের বৈষম্য দূরীকরণে এক টেবিলে বিএনপি-জামায়াত

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

এক টেবিলে বিএনপি-জামায়াত/ছবি: বার্তা২৪.কম

এক টেবিলে বিএনপি-জামায়াত/ছবি: বার্তা২৪.কম

পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্য দূরীকরণে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এবং জামায়াতের নেতারা।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানান তাঁরা। বৈষম্যবিরোধী পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐক্য পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমীর সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ। বৈষম্যবিরোধী পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী তৌহিদুল ইসলাম আজাদের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী চৌধুরী। এছাড়া বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আহসান উল্লাহ চৌধুরী, বান্দরবান জেলা আমীর এস এম আব্দুস সালাম আজাদ, খাগড়াছড়ি জেলা আমীর সৈয়দ আবদুল মোমিন, চট্টগ্রাম মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আর এই সমস্যা সমাধানের পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশের এই ৫৩ বছরে সবচেয়ে বেশি কার্যকর অবদান যিনি রেখেছিলেন তিনি হচ্ছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি যেসব কার্যকর ভূমিকা আর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেগুলোকে অবহেলা করার কারণে আজকে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের এই সমস্যা ঘাড়ের ওপর রেখে বাংলাদেশের সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এজন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব এবং উনার উপদেষ্টামণ্ডলিকে আহ্বান করব-গত তিনদিন আগে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সমাধানের জন্য অতিসত্বর উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারে একটি বিশেষ অ্যাকশন কমিটি গঠন করা দরকার।’

পার্বত্য এলাকায় মুসলমান-হিন্দু ও পাহাড়ি যারা রয়েছেন তাঁরা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উল্লেখ করে শাহজাহান চৌধুরী আরও বলেন, ‘পার্বত্য এলাকায় যারা উপজাতী আছে তাদের দাবি দাওয়া আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশি মুসলমান-হিন্দু ও পাহাড়ি যারা রয়েছেন তাদের ব্যাপারে যে অবজ্ঞা এবং যেভাবে তাদের নাগরিক হিসেবে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আগের সরকার যা করেছে তা অন্যায় করেছে। সেজন্য এখন উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আহ্বান করব অতিসত্বর এই সমস্যার সমাধান দরকার।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে যা হচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক। আপনারা সবাই জানেন আসলে এই সমস্যার শুরু হয়েছে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব যখন বাঙালি জাতী হিসেবে ঘোষণা করলেন তখন থেকেই। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেকে বলেছেন আমরা বাঙালি না, এখানে অনেক জাতীগোষ্ঠীর মানুষ আছে। তখন থেকেই বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয় এই ভূখণ্ডে। আমরা অনেক রক্ত দেখেছি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদ থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ করলেন। শেখ হাসিনা যতই লম্বা লম্বা কথা বলুক, উনি যখন বিদেশে লাল পাসপোর্ট নিয়ে যান তখন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ লেখা পাসপোর্ট নিয়েই উনাকে যেতে হয়।’

পার্বত্য চট্টগ্রামে বৈষম্যের জন্য এরশাদ উল্লাহ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা সৃষ্টির জন্য তৎকালীন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) নিজেই দায়ী, কেননা ১৯৯৬ সালে তিনি যে শান্তি চুক্তি তিনি করেছিলেন, সেখানেই বৈষম্য রয়ে গেছেন। দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হওয়ার পর শান্তিচুক্তিতে যেসব বৈষম্য রয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখে সংশোধন করে আমাদের যেমন বাঙালিদের স্বার্থও দেখতে হবে, তেমনি পাহাড়িরাও যেহেতু আমাদের এইদেশের অদিবাসী তাঁদের স্বার্থও দেখতে হবে। দুটোকে ভারসাম্য করে আমি মনে করি একটা সুন্দর সমাধান করা উচিত। কেননা এটা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আর এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী অবৈধ ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে।’

মতবিনিময় সভায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র এবং বৈষম্য দূরীকরণে’ বৈষম্যবিরোধী পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ১০টি এবং পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ৮টি দাবি দেওয়া হয়।