যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবক খুন: মামলা করলেন আ'লীগ নেতা!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে কৃত্রিম খেলার মাঠ টার্ফ নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে জুবায়ের উদ্দিন বাবু (২৬) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা সম্পর্কে নিহত যুবকের ভগ্নিপতি।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে চান্দগাঁও থানায় এই মামলা করা হয়। মামলায় আরও ২০-৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নিহত জুবায়ের নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসাইনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাঁর ফেসবুকেও মোশাররফের সঙ্গে একাধিক ছবি দেখা গেছে। তবে নগর যুবদলের আরেক অংশের নেতাদের দাবি, জুবায়ের যুবলীগের কর্মী। তিনি যুবদলের কেউ নন। একটি সূত্র জানিয়েছে, নিহত জুবায়ের এতদিন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি পূর্ব সম্পর্কের রেশ ধরে যুবদল নেতা মোশাররফের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে শুরু করেন।

শুক্রবার বিকেলে চান্দগাঁও স্পোর্টস জোন কমপ্লেক্সে খুনের ঘটনাটি ঘটে। মূলত ওই কমপ্লেক্সটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ দশমিক ২২ কাঠা জায়গায় নির্মাণ করা হয় এ আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স। চলতি বছরের জুন মাসে এটি উদ্বোধন করেন সাবেক সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, স্পোর্টস কমপ্লেক্সটি ১০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে মোশাররফ হোসাইন নামের কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। গত শুক্রবার এটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসাইন। অনুষ্ঠানে মোশাররফ হোসাইন এবং নগর যুবদলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক নুরুল আমিনের অনুসারীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীদের ভাষ্য, মোশাররফ হোসাইন টার্ফটি ইজারা নিয়েছেন বলে দাবি তাঁর পক্ষের লোকজনের। তবে নুরুল আমিন গ্রুপের লোকজন টার্ফটি দখল নিতে চেয়েছেন। এর সূত্র ধরেই সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এতে মোশাররফের পক্ষের জুবায়ের নিহত এবং কয়েকজন আহত হন। জুবায়ের নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্তের পাশাপাশি যুবদল নেতা মোশাররফ ও নুরুল আমিনকে বহিষ্কারও করে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি।

মোশাররফের সঙ্গে রাজনীতি করলেও জুবায়েরকে নিজেদের মানতে নারাজ মহানগর যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ। তিনি বলেন, নিহত বাবু আমাদের যুবদলের কেউ নন। তিনি যুবলীগের কর্মী। তাঁর ফেসবুকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ছবি ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের ছবি রয়েছে। মামলার বাদী নাজিম উদ্দীনও আওয়ামী লীগ নেতা।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আফতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘টার্ফ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জুবায়ের উদ্দিন বাবু নামে এক যুবক ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।’

এই মামলার ১২ নম্বর আসামি ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতারের কথাও জানিয়েছেন ওসি। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতেই অভিযান চালিয়ে নাজিম উদ্দিন নামে একজনকে গ্রেফতার করে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেসবক দলের নেতা।’

মামলার আবেদনের এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বাদীর শ্যালক জুবায়ের উদ্দিন বাবু ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চান্দগাঁও থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসের পাশেই চান্দগাঁও স্পোর্টস জোন নামে একটি টার্ফ উদ্বোধনে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে খেলার আগমুহুর্তে আসামিরা পুর্বশত্রুতার জের ধরে দেশী অস্ত্রশস্ত্রসহ টার্ফের মালিকপক্ষ, আয়োজক কমিটি ও দর্শকদের ওপর হামলা করে। এসময় টার্ফের ভেতরে থাকা বাদীর শ্যালক জুবায়ের উদ্দিন বাবুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন—নুরুল আমিন, জাশেদুর রহমান নওশাদ, মো. আলফাজ, আবির রহমান রুবেল, ফয়সাল মোরশেদ, মো. ফাহিম, মো. জাহেদ, মো. নয়ন, মো. হাছান ওরফে ঢাকাইয়া হাছান, মো. পারভেজ, জয়নাল আবেদিন সাকিব, নাজিম উদ্দিন, মো. হাকিম, মো. আমজাদ, মো. সালাউদ্দিন, মুনতাছির মাহিন, কুতুব উদ্দিন জাহেদ, আরিফ মঈনুদ্দিন, মো. সোহান, মো. ফাহিম, মো. খোকন।

এছাড়াও রয়েছেন—মো. সাকিব, রনি, সাইমন, আবছার, রিয়াদ, খলিল, জুয়েল, সোহেল, রিয়াদ, খোকন, আবছার, আলী খাঁন লিটন, নেজাম উদ্দিন, মহিউদ্দিন বাবু, ইরফান, মিরাজ, তারেক, মুরসালিন এবং ফারুক। তারা সকলেই চান্দগাঁও থানা এলাকার বাসিন্দা।