‘মানুষ ক্ষমতা-কাঠামোর পালাবদলের বন্দোবস্ত চাইছে’

  • ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। ছবি: সংগৃহীত

মাহফুজ আলম ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। অভ্যুত্থানের পরে ছাত্র, নাগরিক ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির তিনি ছিলেন সমন্বয়ক। আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশাস্ত্রের এই স্নাতক ছিলেন রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগীর দায়িত্বে। ‘গুরুবার আড্ডা’ নামে এক পাঠচক্রের তিনি সংগঠক এবং পূর্বপক্ষ, রণপা ও সিনেযোগ পত্রিকার সম্পাদক। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ছাত্রদের আন্দোলন এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরে তাদের ভাবনা জানিয়েছেন মাহফুজ আলম। বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবুহু প্রকাশিত হলো: 

আন্দোলন দিয়েই শুরু করি। ছাত্ররা যে এত বড় একটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিল, তাদের মোর্চা দানা বাঁধল কী করে?

বিজ্ঞাপন

মাহফুজ আলম: ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বেশ বড় দুটি আন্দোলন হয়েছিল—নিরাপদ সড়ক আর কোটা সংস্কার নিয়ে। আন্দোলন দুটিতে দেখা গেল, রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করতে ছাত্র-তরুণদের একটা অংশ রাস্তায় নেমে পড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ দেশের জনগণ আগেরবারের মতো আবারও প্রতারিত হলো। পরের দু-তিন বছর নানা সংকটের কারণে ছাত্র-তরুণেরা আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। প্রধানতম সংকট ছিল রাজনৈতিক অভিমুখের অভাব। ছাত্র-তরুণেরা রাজনীতিতে বড় কয়েকটি দাগে বিভাজিত ছিল। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী আর বামপন্থী রাজনীতির ক্ষীণ ধারার বাইরে তারা কিছু কল্পনা করতে পারছিল না।

আমাদের কাছে স্পষ্ট ছিল যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির যে বয়ান আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে, সেটি টিকিয়ে রেখে আওয়ামী লীগকে কখনোই পরাজিত করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের পরে আওয়ামী লীগের কারণে জাতীয়ভাবে রিকনসিলিয়েশন (পুনর্মিলন) না হতে পারা একটা বড় ব্যর্থতা। আমরা দেখতে পেলাম, ভাবাদর্শ আর সাংস্কৃতিক ফল্টলাইনে (বিভাজক রেখায়) বাংলাদেশকে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। এই বিভাজক রেখা নিয়ে বিভিন্ন ক্রীড়নকেরা ভূমিকা রাখছে। আমাদের তাই চিন্তা ছিল এই বিভাজক রেখাকে কীভাবে মুছে ফেলা যায়, কীভাবে এর মীমাংসা করা যায়। গত ৫০ বছরে এর মীমাংসা হয়নি, কিন্তু আমাদের চেষ্টা ছিল।

আপনারা কী চেষ্টা করেছিলেন?

মাহফুজ আলম: আমরা কিছু পাঠচক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করি। জোনাকি গলির কারখানার ব্যানারে ফিল্ম অ্যাকটিভিজম করি। নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সীমান্ত-হত্যা বন্ধের দাবিতে ৫৪ দিন একটানা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করেছিলেন। সে অবস্থানের সমর্থনে আমরা পুস্তিকা আর পত্রিকা বের করেছি। আবার বুয়েটের আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আটস্তম্ভ প্রস্তাব করেছিলাম। সেগুলোর ভাবার্থ ছিল নিছক ভারত-বিরোধিতা না করে কীভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।

আমরা পড়াশোনা করলাম, নানাজন নানা উদ্যোগ নিল। দেখলাম, এভাবে হচ্ছে না। ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে আমরা ‘গুরুবার আড্ডা’ নামে শুরু পাঠচক্র করলাম। প্রথমে নাহিদ ইসলামসহ আমরা ছিলাম চারজন। পরে আবু বাকের মজুমদারসহ আরও তিনজন যুক্ত হলেন।

গুরুবার, মানে বৃহস্পতিবার আমাদের আড্ডাটা বসত। আমরা নানা প্রশ্ন নিয়ে ভাবতাম—রাষ্ট্র, সমাজ, দর্শন, ইতিহাস আর ধর্মতত্ত্ব, যেটা অনেকে বাদ দিয়ে যান। আমরা কামরুদ্দীন আহমেদের লেখা যেমন পড়েছি, তেমনই লেনিনের বা ইসলামি রাষ্ট্রভাবনার বাস্তবতা নিয়েও আলোচনা করেছি। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, ইকবালকে নিয়ে আলোচনা করেছি। এভাবে আমরা চিন্তা ও সাংস্কৃতিক রাজনীতির ব্যবধান যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। ছাত্রদের বিভিন্ন আন্দোলনে আমরা ছিলাম। আবার বড় বড় আন্দোলন হলে তার তাত্ত্বিক ভিত্তি দেওয়ারও চেষ্টা করেছি।

আন্দোলনের সূচনা হলো কোটা সংস্কার নিয়ে। একপর্যায়ে সেটা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফায় গিয়ে পৌঁছাল। ধাপে ধাপে আন্দোলনটা যে সেখানে গিয়ে পৌঁছাল, তার কি কোনো গোপন লক্ষ্য আগে থেকেই ছিল?

মাহফুজ আলম: আমাদের প্রাথমিক বাসনা ছিল সারা বাংলাদেশে ছাত্রশক্তিকে বিস্তৃত করা। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সুযোগ তৈরি হবে। কিছু নেতৃত্বও তুলে আনা যাবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে সরকারের পতনের বিষয়টি তো ছিলই। আমাদের ভাবনা ছিল ছাত্রশক্তি আগে শক্তিশালী হবে। তারপর আমরা রাজনৈতিকভাবে আবির্ভূত হব। সাংস্কৃতিক পরিসর, কলকারখানা, বিদ্যায়তন—সবগুলো ক্ষেত্রেই আমরা সম্পৃক্ত হব।

৫ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সময়টা ছাত্রশক্তির সদস্যরা বাংলাদেশে আন্দোলনের সাংগঠনিক বিস্তার ঘটালেন। ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আমরা সেই অর্থে কোনো রাজনৈতিক, এমনকি বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থনও পাইনি৷ সবাই ভেবেছিল, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো আঁতাত আছে। কিন্তু অভিনব কর্মসূচির কারণে দিনে দিনে ক্যাম্পাসে আর নগরাঞ্চলে আন্দোলনের শক্তি বেড়ে যাচ্ছিল। আমরা ভাবছিলাম, একে বড় একটা ছাত্র-নাগরিক আন্দোলনে পরিণত করে তোলা যায় কি না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সাল, কিন্তু সুযোগ তৈরি হলে এখনই কেন নয়!

কখন মনে হলো যে সুযোগটা চলে এসেছে?

মাহফুজ আলম: ৬ জুলাই বাংলা ব্লকেড ঘোষণা করার পরে। বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিটা বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, এতে অনেক বেশি জনসম্পৃক্ততা ঘটে গেছে। আমরা সবাই মিলে ছাত্রশক্তির একটা ধারণাপত্র লিখেছিলাম। শুরুতে এ অভ্যুত্থানকে আমরা বলেছিলাম ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থান। এর মূলে ছিল ছাত্রশক্তির ছাত্র-নাগরিক সংহতির ধারণা। সেই সংহতির পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি সাজানো হয়েছিল। কর্মসূচিটা বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্ররা চলে গেল। নাগরিকেরা এসে যোগ দিল। গত ১৬ বছরে কিন্তু এটা সম্ভবপর হয়নি।

আপনাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের একাত্মতা আপনারা কখন উপলব্ধি করলেন?

মাহফুজ আলম: বাংলা ব্লকেডের পরের সপ্তাহজুড়ে। আগের ১৫ বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর জনমুখী সংযোগ আমরা ঘটাতে পারিনি। বাংলা ব্লকেডের মাধ্যমে ঢাকা শহরের জনসমর্থন আদায় করতে সমর্থ হলাম। এত দিন যারা প্রতিবাদ করতে পারেনি, তারা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করল। সরকার তখনো ছাত্রদের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। আমরা সেই সুযোগটা গ্রহণ করেছি। আন্দোলনে ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে এসে সমন্বয়ক ও কর্মী হিসেবে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করলেন। আমরাও চেয়েছি সবাই থাকুক, গণ-আন্দোলন হোক। এ আন্দোলন ব্যর্থ হলে ছাত্রশক্তিই বা কীভাবে টিকে থাকবে! ফলে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা স্লোগানগুলো বানাচ্ছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল স্লোগানগুলোকে জাতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। নইলে পরবর্তী সময়ে আমরা রাজনীতি করে টিকে থাকতে পারব না।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নানা স্তরের মানুষ যুক্ত হয়েছিল—ছাত্র, শ্রমিক, পাহাড়ি, নারী—বিচিত্র ধরনের। সেখান থেকে আপনি কী পাঠ করলেন?

মাহফুজ আলম: এই গণ-অভ্যুত্থানকে আমি অনেক কিছুর মীমাংসা আকারে দেখি। সাংস্কৃতিক প্রশ্নে মীমাংসা, আদর্শিক প্রশ্নে মীমাংসা। বড় একটা স্ফুরণ ঘটিয়ে মীমাংসাগুলো হয়তো নানা দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছে। তবে অভ্যুত্থান নিজেই একটা বড়সড় মীমাংসা বা বন্দোবস্ত ছিল।

প্রশ্নটা অন্যভাবে করি। যেকোনো অভ্যুত্থানে দুইটা দিক থাকে—একটা পতন, আরেকটা পত্তন। প্রথমটা অর্জিত হয়েছে। পত্তনের অর্থে এই আন্দোলনে নাগরিকদের নানা আকাঙ্ক্ষার অলিখিত ইশতেহারটা কী?

মাহফুজ আলম: নতুন বাংলাদেশে অনেকেই অনেক কিছু দেখতে চায়। তরুণেরা প্রাথমিকভাবে চায় প্রতিনিধিত্ব। শুধু নির্বাচনে নয়, সবখানেই। তারা বাক্‌স্বাধীনতা চায়। গণতান্ত্রিক শিল্পী-সাহিত্যিকেরা কথা বলতে চায়। দিনমজুর চায় প্রতিদিনের প্রাপ্য মজুরি। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরও নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা আছে। শুরুর দিকে না নামলেও পরের দিকে আলেমরা নেমে পড়ল। গোষ্ঠী আকারে গত ১৫ বছরে তারা নিপীড়িত হয়েছে। আন্দোলনে যখন কমপ্লিট শাটডাউন চলছে, তখন শ্রমিকদের একটা বড় অংশকে আমরা দেখলাম। ১৫ বছর ধরে শ্রেণি আকারে তারা নিপীড়িত হয়েছে। সবাই একটা চূড়ান্ত বদ্ধ দশা থেকে মুক্তি চাইছিল। নইলে কি কেউ মরার জন্য বুলেটের সামনে বুক পেতে দেয়?

এই আন্দোলনে মেয়েদের সম্পৃক্ততা ছিল বিরাট। এখন অনেকে ভুলে গেলেও এ কথাটা সত্য যে মেয়েরা না থাকলে এই আন্দোলন কোনোভাবেই সফল হতো না। ১০ শতাংশ কোটা থাকা সত্ত্বেও মেয়েরা এসে বলল, আমরা কোটা চাই না। কেন? কারণ তাদের আত্মমর্যাদায় লাগছিল। এই লড়াইটা আত্মমর্যাদাবোধেরও ছিল। শেখ হাসিনা দেশের আপামর মানুষের আত্মমর্যাদা ভেঙে ফেলেছিল। আন্দোলনকারীরা যে নিজেদের ‘রাজাকার’ হিসেবে স্লোগান দিল, সেটা কিন্তু ‘রাজাকার’ বলে তাদের আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত দেওয়া হয়েছে বলেই। সুতরাং এ আন্দোলনকে আপনি মর্যাদাবোধের পুনরুদ্ধার প্রকল্প আর নানা শ্রেণি-আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিনিধিত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেও দেখতে পারেন।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা শোনা যাচ্ছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নাগরিকেরা কোন ধরনের রাষ্ট্র দেখতে চাইছে?

মাহফুজ আলম: রাষ্ট্রের একটা থাকে ওপরের দিক, আরেকটা অন্তস্তলের দিক। অন্তস্তল ঠিক না করে উপরিতল ঠিক করার অর্থ হলো পুরোনো ময়লার ওপর নতুন চাদর বিছিয়ে দেওয়া। মানুষ কেবল ক্ষমতার পালাবদল চাইছে না, বরং ক্ষমতা-কাঠামোর পালাবদলের বন্দোবস্ত চাইছে। তারা চায় আত্মসম্মান আর সমতা। সাংস্কৃতিক ও আদর্শগত জায়গায় বিভাজনের রাজনীতির একটা মীমাংসা তারা চায়। এমন এক পরিসর চায় যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে। কোনো রকমের যদি আর কিন্তু ছাড়াই মৌলিক মানবাধিকার আর নাগরিক অধিকার তারা ভোগ করবে। ভাবাদর্শিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক—মোটা দাগে আগের সরকারের এই চারটি বন্দোবস্তকে পরিপূর্ণভাবে ফেলে দিয়ে নতুন বন্দোবস্তের দিকে যেতে হবে।

আপনারা বলছেন পুরোনো ব্যবস্থা বহাল রেখে নির্বাচনে গেলে অন্য দল এলেও তারা অগণতান্ত্রিক রূপ ধারণ করবে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানকে কী চোখে দেখছেন?

মাহফুজ আলম: বিএনপি ও জামায়াত গত ১৫ বছরে অনেক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তারা এখন ক্ষমতার হিস্যা নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আবার যারা বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষায় গণ-অভ্যুত্থান করেছে, তারাও যে আন্তদলীয় সংস্কার চাইবে, এটাও তো স্বাভাবিক। কেউ কেউ এসে দাবি করছে, এই আন্দোলনে একমাত্র তারাই ছিল। কিন্তু একমাত্র বলে তো কেউই ছিল না। আন্দোলনটা ছিল প্রবহমান নদীর মতো। নানা স্রোত এসে তাতে মিশেছে। এখন যমুনা আর মেঘনার স্রোতোধারার সব আলাদা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও একটা ঐক্য আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পুরোনো অভ্যাস ও সংস্কৃতি বজায় রাখতে চাইবে। অথচ আমাদের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন করতে হবে, দলগুলোতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে। তরুণেরা বাংলাদেশে প্রচলিত ক্লাব রাজনীতি চাইছে না। তাদের চাওয়া দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতি। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে কীভাবে রাজনৈতিক পরিসরে একত্রিত করা যায়, তারা সে কথা ভাবছে। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহযোদ্ধারা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করে, তাহলে তারাসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে আমরা আহ্বান জানাতে পারি, নিছক ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ছেড়ে তারা যেন রাষ্ট্র গঠনের দৃষ্টিভঙ্গিটা নিয়ে আসে। কেবল রাষ্ট্র সংস্কার করলেই তো হবে না। দলগুলোর ভেতরেও সংস্কার দরকার। রাজনৈতিক নেতৃত্ব কীভাবে নির্বাচিত হবে, তার প্রক্রিয়া সংস্কার করা উচিত। তাদের অর্থনৈতিক সংস্কারেরও প্রয়োজন। দলগুলোর বিশুদ্ধিকরণের জন্য সামাজিক চাপ তৈরি করতে হবে। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর বদভ্যাস টিকিয়ে রাখার জন্য তো এত মানুষ জীবন দেয়নি।

প্রথম আলো’র সৌজন্যে