বন্যায় নেত্রকোনার ১৮৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নেত্রকোনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

নেত্রকোনায় উজান থেকে নেমে আসার ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে চারটি উপজেলার ১৮৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্গাপুরের ৬২টি, পূর্বধলার ১১টি, কলমাকান্দার ৯৩টি ও সদরের ২০টি।

রোববার (৬ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইমদাদুল হক।

বিজ্ঞাপন

ইতিমধ্যে টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার বৃদ্ধি পেয়েছে কংস, সোমেশ্বরী ও উপদাখালী সহ বেশ কিছু নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে দুপুর ২ টায় কংস নদের পানি বিপদসীমায় ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত। সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং অবধা খালি নদীর পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বাড়ায় কংস নদের তীরবর্তী গ্রামগুলো ইতোমধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পানি ঢুকতে শুরু করেছে নতুন নতুন গ্রামে।

পানি বাড়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে পূর্বধলার নাটেরকোণার প্রায় ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। স্থানীয়রা বস্তা ও মাটি ফেলে কোন রকমের টিকিয়ে রেখেছে বাঁধটি। দুপুর দুইটার পর স্থানীয়দের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও অংশ নেয়। স্থানীয়রা বলছেন কোন কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ভেঙে গেলে পুরো পূর্বধলা উপজেলা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দীর সংখ্যাই বাড়ছে। ইতিমধ্যে উপজেলাটিতে ৬৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ মোট ৭২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এই দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র বলছে বাংলাদেশের ইতিহাসে নেত্রকোনা জেলার সর্বোচ্চ পরিমানে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে।

গতকাল শনিবার সকাল ৯ টার পর থেকে আজ রবিবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার জারিয়াজানজাইল নামক স্টেশনে ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বশেষ ৭২ ঘন্টায় (৩ দিনে) এই স্টেশনে ৭৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের অভ্যন্তরে ৩ দিনে ৭৫৮ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টিপাত সম্ভবত আর কোন জেলায় হয়নি।

এদিকে বন্যার্তদের সহযোগিতায় ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। তবে এলাকাগুলোতে এখনো সংকট রয়েছে বিশুদ্ধ পানিসহ ত্রাণ সহায়তার।

কলমাকান্দা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হওয়াতে নদীতে পানি বাড়ছে তবে তা এখনো সব পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি, বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ রেডি আছে। প্রয়োজন পড়লে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

দুর্গাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে উপজেলার কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ও কাকৈরগড়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।