সাতক্ষীরা পৌরসভার কাটিয়া সরকারপাড়ায় চাঁদাবাজি করার অভিযোগে অস্ত্রসহ তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে যৌথবাহিনী।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাতে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার রাজারবাগান উত্তরপাড়ার রেজাউল ইসলাম খোকন (৪৫), মোহাম্মদ আলী (৪০) ও সাইফুল ইসলাম (৪৬)।
বিজ্ঞাপন
কাটিয়া সরকারপাড়া এলাকার ভাড়াটে বাসিন্দা আব্দুল অহিদ সরদার জানান, আটক ব্যক্তিরা তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকে ধরে স্থানীয় সাইফুলের দোকানে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাছে থাকা দুই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এসময় তারা মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বাকী টাকা না দিলে হত্যার হুমকি দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করি।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, যৌথ বাহিনীর অভিযানে চাঁদার টাকা ও একটি ওয়ান শ্যুটারগানসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এঘটনায় ভুক্তভোগী অহিদ সরদার বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
কক্সবাজারের পেকুয়ায় নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর মৎস্য ঘের থেকে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৮) ও নাজেম উদ্দিন (৫) নামে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আবু বক্কর ছিদ্দিক ও নাজেম উদ্দিন ওই এলাকার ওয়াজ উদ্দিন এবং নজরুল ইসলামের ছেলে। তারা দুইজনই চাচাতো ভাই ও স্থানীয় নুরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।
রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার পেকুয়া সদর ইউপির পশ্চিম সিরাদিয়া এলাকায় বাড়ির পাশের একটি মৎস্য ঘের থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.মানিক।
ইউপি সদস্য মোঃ মানিক জানান, সকাল ১০টার দিকে আবু বক্কর ছিদ্দিক ও নাজেম উদ্দিন খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরিাবরের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করে আত্মীয় স্বজনরা। পরে স্থানীয়রা বিকেল ৪টার দিকে মৎস্য ঘেরের ঝিঁক থেকে মাছ উঠানোর সময় ওই দুই শিশুর লাশ দেখতে পায়। পরে পারিবারিকভাবে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান ওই ইউপি সদস্য।
আল্লাহর ধন আল্লাহ নিয়্যা গেইচে, লাশ কাটি ছিড়ি আর কি লাভ হইবে? আইতত এ্যাটে লাশ থুইলে বিয়ান বেলায় ডোমেরা লাশটাক কাটিয়া কলিজা,ফ্যাপরা সউগে বের করবে। থোয়ার দরকার নাই হামরা গরিব মানুষ বাবা, লাশটাক কষ্ট দেওয়ার থাকি বাড়িত নিয়্যা য্যায়া দাফন করিয়্যা মাটি দেওয়্যা ভালো।
প্রতিবেশীদের এমন মন্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর নগরীতে নিহত মকুল মিয়ার মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করেন ভুক্তভোগী পরিবার। অশ্রুসিক্ত কন্ঠে এসব বলেন নিহত মকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নিহত বাবুর্চি মকুলের পরিবার। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ৩ কন্যা সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা মকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করায় সরকারি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় প্রণোদনা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে মকুল মিয়ার পরিবার।
নিহতের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ১টায় মকুল মিয়া (৫০) কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হয় কাচারি বাজার আঙ্গুর মিয়ার হোটেল অভিমুখে। পথিমধ্যে সিটি মার্কেটের সামনে গেলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার ওপরে গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে প্রাণের ভয়ে মানুষ যে যার মতো পালাতে থাকলে মকুল মিয়াও জীবন বাঁচাতে দৌড় দেয়। সে সময় কাঁদানে গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।বেশ কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর পথচারীরা তাকে চিনতে পেয়ে নিয়ে যায় আঙ্গুর মিয়ার হোটেলে।
৪ আগস্ট ছিল রংপুরজুড়ে রণক্ষেত্র অবস্থা। রিকশা-ভ্যান চলছিল একেবারেই কম। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় নগরীর গুপ্ত পাড়ার ভাড়া বাড়িতে। এতে মকুল মিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ভ্যানে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই দিন সন্ধ্যায় তার লাশ দাফন করেন পরিবার।
ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করার বিষয়টি নিয়ে নিহত মকুল মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, প্রতিবেশীদের মন্তব্যে লাশটাকে কষ্ট না দিতে পোস্টমর্টেম ছাড়াই দাফন করা হয়। এখন শুনতেছি ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করার জন্য সরকারি তালিকাভুক্ত হয় নাই হামার স্বামীর নাম। আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল। আমি এখন তিনটা বেটিক নিয়া কি করিয়া চলব। মুইতো মাইনসের বাড়িত কোন রকমে কাম করি খাওছো। ছাওয়া গুলাক পড়াইম কি দিয়া। খিলাইম কি? কেউ হামার খোঁজ নেয় না।
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘ এক যুগ থেকে রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়া খরমপট্টিতে হারুনের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে রংপুর সদরের ময়নাকুটি এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মকুল মিয়া (৫০)।
মকবুল হোটেলের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার জানান, দীর্ঘ ১৪ বছর থেকে আমার এখানে বাবুর্চির কাজ করেছিল মকুল। তার অবর্তমানে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। তার তিন মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মকুলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার আহবান করছি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মানিক মিয়া বলেন, নিহত মকুল হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবারের মৃত্যু সম্পর্কে কোন দাবি না থাকায় ঘটনার দিনেই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। তিন উপজেলার ২১ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিন উপজেলাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষজন। অতিবৃষ্টিতে জেলাজুড়ে মৎসখাতে ৫ হাজার ৯৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন, জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এখন নারী শিশুসহ দেড় সহস্রাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তিন উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের। তবে, এখন পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সুত্র জানায়, ধোবাউড়া বন্যা দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করছেন প্রশাসন। এছাড়াও নেতাই নদীর আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। উপজেলার কলসিন্দুর, জিগাতলা, পঞ্চনন্দপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে পুরো উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।
ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের আংশিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবাজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সিরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে হালুয়াঘাটের প্রায় সব ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান, সবজি খেত ও ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। ঘরের মধ্যে পানি ঢোকার কারণে রান্নার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে তারা।
জেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় নিমজ্জিত ধান ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর, সম্পুর্ণ নিমজ্জিত ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ৪ হাজার ২০০ হেক্টর ও সবজি ৬০ হেক্টর। হালুয়াঘাটে নিমজ্জিত ধান ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর, সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ৪ হাজার ১০০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর ও সবজি ৭৫ হেক্টর। ফুলপুরে নিমজ্জিত ধান ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর, সম্পুর্ণ নিমজ্জিত ১ হাজার ৪৮০ হেক্টর, আংশিক নিমজ্জিত ২ হাজার ১৫০ হেক্টর ও সবজি ৬২ হেক্টর।
আমতৈল গ্রামের সিদ্দিক মিয়া বলেন, রাস্তাঘাটে পানি, ঘরে, রান্না ঘরে পানি। কোথায় কোন শুকনা খাবার পেলাম না। তাই খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
কৈচাপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, এমন বন্যা আগে কখনও দেখি নাই। ১৯৮৮ সালের বন্যা দেখেছি, এমন পানি ছিল না। বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। গরু ছাগল নিয়ে বিপদে আছি। গরু পানির মধ্যে বাধাঁ। আমরা খুব সমস্যা আছি। চলাফেরা খুব সমস্যা, রাস্তায় বুক সমান পানি। ফসলের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয়ছে। আমন ধান পানির নিচে পড়ে গেছে। এবার আমন ধান পাবো, এমন আশা করা যায় না। অনেক শাকসবজী জমি তলিয়ে গেছে।
বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সিমান্তবর্তী হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি এসব এলাকায় পাহাড়ি ঢল এবং অতিবৃষ্টির কারণে যেমন প্লাবিত হয়েছে, এরকম পানি বিগত ১৫-২০ বছরে আমরা দেখেনি। এখানে রাস্তা ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, মানুষের বাড়ী ঘর, জমির ফসল গরু ছাগল, হাঁস মুরগী সব নষ্ট হয়ে গেছে। এমন একটা পরিস্থিতির জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। হঠাৎ করেই পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি, এখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়ার জন্য। আজকে এখানে বিভাগীয় কমিশনার এসেছিলেন, উনার সাথে কথা বলেছি এবং অন্যান্য প্রশাসনের লোকজনের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে পর্যাপ্ত ত্রাণ তারা দিবেন। আমরা নিজেদের যা সামর্থ্য আছে সেটা নিয়ে জনগনের পাশে আমরা দাঁড়াচ্ছি। আমরা প্রথম দিন থেকেই মানুষকে উদ্ধার, আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, খাবার বিতরণ করে আসছি। প্রত্যেকটা ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
ময়মনসিংহ জেলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৭ হাজার ৮০ জন মৎসচাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১৭ লাখ, ভেসে গেছে ৫ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ ও রেনু পোনা ভেসে গেছে ১৪৯ লাখ টাকার। মৎসখাতে মোট ৫ হাজার ৯৮৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, আমাদের সকল ধরণের প্রস্তুতি আছে। বন্যাদুর্গত মানুষের খাদ্যসহ, যে চাহিদা সে মোতাবেক সরকার আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় আমাদের সচিব স্যার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাথে কথা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলাগুলোতে ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। সবাই একসাথে কাজ করছে। তাদের জন্য রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। সবাই মনে করছি যদি বৃষ্টিটা কমে যায় তাহলে পানি নেমে যাবে তবে বৃষ্টিটা কমছে না। আবহাওয়া অফিস বলছে আরও একদিন বৃষ্টি থাকতে পারে। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।
ফেনীতে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যা, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনে জনপ্রতিনিধিদের আত্মগোপন ও পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে ভাঙচুর ও নানা ঘটনাপ্রবাহের কারণে ফেনীতে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে ভাটা পড়েছে। জেলায় প্রতিমাসে ৩ হাজার ৩৫৯ জনের জন্মনিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ও ১ হাজার ৭৭ জনের মৃত্যু নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিগত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও অর্জিত হয়নি।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে জুলাই মাসে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে চট্টগ্রামে বিভাগে প্রথম ও দেশের মধ্যে ১২তম অবস্থানে ছিল ফেনী। সাম্প্রতিক বন্যায় ও সরকার পতনের সময় ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বেশকিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে এবং জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে গত দুইমাসে কম হলেও এখন ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে পূর্বের ন্যায় ভালো অবস্থানে যাওয়ার জন্য কাজ করছে বলে জানান স্থানীয় সরকার বিভাগ।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই জনপ্রতিনিধি শূন্য ফেনী। যার প্রভাব পড়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কার্যক্রমে। সরকার থেকে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিলেও ভোগান্তি যেন কাটছেই না সাধারণ মানুষের। জনপ্রতিনিধি না থাকায় অনেকে নিবন্ধন সার্টিফিকেট পেয়েও স্বাক্ষর পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেন। বর্তমানে প্রশাসকরা দায়িত্ব পালন করলেও সময়মত তাদের না পাওয়ার অভিযোগ আছে সাধারণ মানুষের।
কথা হয় ছাগলনাইয়া ঘোপাল ইউনিয়নের নিজামুল হকের সাথে। ৫ আগস্টের আগে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর সরকার পতন, বন্যা সবকিছুর জন্য দীর্ঘ ১ মাস পর জন্ম সনদ সংশোধন করতে পেরেছেন তিনি। দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সংশোধন করতে দিলেও এরপর সেটি নিয়ে আসার মত পরিস্থিতি ছিল না। সবকিছু স্বাভাবিক হলে ইউনিয়ন পরিষদে বার বার গিয়ে ফেরত আসতে হয়েছে। চেয়ারম্যান নেই তার সাক্ষর নিতে পারিনি। আমার মত এমন অবস্থা সবার।
নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরে পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের আব্দুল কাইয়ুম জানান, ভাগিনার জন্ম নিবন্ধন করতে দিয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নেই, দায়িত্ব পালনে শুরুর দিকে কেউই ছিল না। যার কারণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কাজগুলো একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ জন্ম সনদ হাতে পেয়েছি। সার্ভার জটিলতার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি সাধারণ মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে।
ফেনী পৌরসভার আবরার চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টে পৌরসভাতে অগ্নিসংযোগের পরে কোন কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে না। প্রশাসক নিয়োগ হয়েছে ঠিক তবে সবসময় ওনাকে পাওয়া যায় না। কারণ তিনি অন্যত্রও দায়িত্ব পালন করছেন। সবমিলিয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন নিয়ে বেশ জটিলতায় আছি আমরা।
এ বিষয়ে ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. সাদ্দাম হোসেন মজুমদার জানান, বন্যায় আমাদের ইউনিয়নের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ সব সরঞ্জাম, আসবাপত্র পানিতে ডুবে শেষ। যার কারণে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে টার্গেটের ২০ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। এখন স্থানীয় এক নেতা একটি ল্যাপটপ দিয়েছে যা দিয়ে কাজ চলছে। তবে অনেক ধীরগতিতে, পাশাপাশি অনেক সংশোধিত জন্ম-মৃত্যু সনদ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
তিনি বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে এসিল্যান্ড রয়েছেন। সাক্ষর জটিলতা কিছুটা কমলেও পরিষদে যতদিন পর্যন্ত সরকারিভাবে সহযোগিতা আসবে না ততদিন আগের উদ্যোমে কাজ সম্ভব হবে না।
ফেনী পৌরসভার ডিজিটাল সেন্টারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, পৌরসভাতে আগে ৪টা কম্পিউটার দিয়ে কাজ করা হতো, এখন ১টা কম্পিউটার দিয়ে কাজ চলছে। আগে কাজে শৃঙ্খলা থাকলেও এখন উদ্যোক্তাদের বসার মতোও অবস্থা নেই ৷ ৫ আগস্ট পৌরসভাতে অগ্নিসংযোগের পর অনেক জন্ম-মৃত্যু সনদ পুড়ে গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক ও ফেনী পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন জানান, ফেনী জুলাই মাসে ১২তম ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১ম ছিল। এরপর আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, পরবর্তীতে বন্যার কারণে আগস্ট মাসে কোন কাজই করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে ফেনী সারাদেশে অনেক পেছনে ছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রতিনিধিদের জায়গায় প্রশাসক নিয়োগের পর ঘুরে দাঁড়ানোর কাজ করছি।
তিনি বলেন, বন্যায় ফেনী জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো কাটিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে পৌরসভাগুলোতে নিবন্ধন ভালো হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে, তারা জন্ম নিবন্ধনের কাজ চলমান রেখেছে। আগামীতে যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা পূরণে সবাই কাজ করছে।