ডাকাত থেকে এমপি হয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক জাফর

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আন্তঃজেলা ডাকাত হিসাবে কুখ্যাত ছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ার জাফর আলম। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠেন ক্ষমতাধর। একপর্যায়ে বনে যান হাজার কোটি টাকা মালিক। ডাকাতি, জমি দখল, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা এমন কোন অনিয়ম নেই যে-জড়িত ছিলেন না।   

হাজারো সশস্ত্র সন্ত্রাসী ব্যবহার করে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আশীর্বাদ পান শেখ হাসিনার। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে একই পন্থায় ভোট ডাকাতি করে সারা দেশে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। আর এমপি হওয়ার পর চার বছরেই তিনি হয়ে ওঠেন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে ২০০টি দলিলের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ আছে, দুর্নীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে এ সম্পদ অর্জন করেন জাফর আলম। শুধু তিনিই নন, তার স্ত্রী শাহেদা বেগম, ছেলে তানভীর আহমেদ তুহিন এবং মেয়ে তানিয়া আফরিনের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক এসব অভিযোগের তদন্ত করছে।

চকরিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম হায়দার  বলেন, জাফর ছিলেন খুব গরিব ঘরের সন্তান। চুরি-ডাকাতি ছিল তার পেশা। তবে এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করে মানুষের ভিটেমাটি দখল, চাঁদাবাজি ও মাদকের ব্যবসা করে এসব সম্পদ গড়েছেন জাফর। আমাকেও অনেক মিথ্যা মামলার আসামি করেছেন। মালয়েশিয়ায় টাকা পাচার করে সেকেন্ড হোম গড়েছেন, সেখানে তার ছেলে থাকে।

একই অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদেরও। চলিত বছরের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, এক সময় আন্তঃজেলার ডাকাত ছিলেন জাফর আলম। ১৯৮৭-৮৮ সালে ডাকাতি করার সময় অস্ত্রসহ হাতেনাতে চকরিয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে ছবি এখনো রয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজনীতিতে তার উত্থান। হঠাৎ এমপি হয়ে পুরোনো পেশা, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ডাকাতির মাধ্যমে আজ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

সালাউদ্দিন আহমদ আরও বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন জাফর। অনেকের জমি দখল করে নিয়েছেন। প্রায় ১০ হাজার একর চিংড়ি ঘের দখল করে সেখান থেকে মাসে ৫ কোটি টাকা করে আয় করেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগকে গলাটিপে হত্যা করে নিজস্ব বাহিনী ‘জাফর লীগ’ গড়ে তুলে চকরিয়া ও পেকুয়ায় সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।

জাফরের বিরুদ্ধে সড়কে ডাকাতি, হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এর মধ্যে কিছু মামলা থেকে নিজেকে খালাস করে নিয়েছেন। স্থানীয়রা আরও জানান, চিহ্নিত কয়েকজন চোর-ডাকাতকে জনপ্রতিনিধি বানানোর অভিযোগও রয়েছে জাফরের বিরুদ্ধে। সরকারি জমিও দখলে নিয়েছেন তিনি। যুক্ত ছিলেন মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজিতেও। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেও টাকা কামিয়েছেন।

অবৈধ সম্পদ ও দখলবাজি : দুদক কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এমপি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সাবরেজিস্ট্রির অফিস, চকরিয়া, কক্সবাজারে ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ক্রয়, আমমোক্তারের মাধ্যমে গ্রহণ, হেবাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০০টি দলিল সম্পাদিত হয়েছে। এসব সম্পদের মূল্য অন্তত ১০০ কোটি টাকা।

এছাড়া তাদের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের চকরিয়া শাখা, ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখা, ইউনিয়ন ব্যাংকের চকরিয়া শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের কক্সবাজার শাখা, এক্সিম ব্যাংকের কক্সবাজার শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত এবং সঞ্চয়পত্র কেনা আছে তার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাফর আলমের প্রশ্রয় পাওয়া সন্ত্রাসীরা পেকুয়া ও চকরিয়াতে ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েকটি চিংড়ি ঘের ও হাজার একর বনভূমি দখল করে রেখেছেন। বরইতলী-মগনামা সড়কে নবনির্মিত বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটি সড়কে মাটি দেওয়ার নাম করে মছনিয়া কাটা এলাকার বিশাল পাহাড় কেটে ফেলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও জাফরের দখলে থাকা এসব সম্পদ উদ্ধার করতে পারেনি ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে জাফর আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে এর আগে যুগান্তরের কাছে এসব সব অভিযোগ অস্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছিলেন জাফর। এ সময় ডাকাতি করতে গিয়ে ধরার পড়ার বিষয়টি ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছিলেন তিনি।