পদত্যাগ নিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্য, রাষ্ট্রপতির শপথ ভঙ্গ: আইন উপদেষ্টা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলে মন্তব্য করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন।

সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আইন উপদেষ্টা।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, তার এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা মতামত দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি স্ববিরোধিতা করছেন। তার এ পদে থাকার আর অধিকার নাই। ভাষণে তিনি বলেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এখন আড়াইমাস পরে এ কথা কীভাবে বলেন? তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ‘জনতার চোখ’ নামে সাপ্তাহিকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। যা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

মতিউর রহমান চৌধুরীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে? আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।

প্রেসিডেন্ট বললেন, চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তার কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। যা সত্য তাই আপনাকে বললাম। যাই হোক, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর। সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাকে বললাম, আমিও খুঁজছি। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট বললেন, এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটাই সত্য। তারপরও কখনো যাতে এ প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি।

প্রেসিডেন্টের পাঠানো রেফারেন্সের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ৮ই আগস্ট এ সম্পর্কে তাদের মতামত দেন। এতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলীকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারবেন বলে আপিল বিভাগ মতামত দেন।