‘দানা’: বেড়িবাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ
সাতক্ষীরায় ‘দানা’র প্রভাবে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ। এরইমধ্যে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার নদীগুলোতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় দানার নাম শুনে নবিছা খাতুন আইলার বর্ণনা দিয়ে বলেন ‘সেদিনও সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, হালকা বাতাস ছিল। প্রতিদিনের মতো বাড়ির কাজ করছিলাম। ঠিক দুপুরের আজানের একটু আগে হঠাৎ উঁচু পানির ঢেউ এসে লণ্ডভণ্ডন্ড করে দিল সব। সেদিন সেই পানির মধ্য থেকে কীভাবে বেঁচে গেছি, তা একমাত্র আল্লাহ জানেন।’
নবিছার মতোই ঝড়ের কথা শুনলে আতঙ্কে থাকেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার। দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন তারা। দুর্বল বেড়িবাঁধ তাদের উদ্বেগের প্রধান কারণ। দুর্যোগে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই বারবার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় লোকালয়। লবণ পানি ঢুকে বিপর্যস্ত হয় জীবনযাত্রা। নষ্ট হয়ে যায় খাবার পানির উৎসসহ, সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এছাড়া উপকূলে বসবাসরত মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারও।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের অন্তত নয়টি পয়েন্টে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সামান্য জলোচ্ছ্বাসের কারণে এসব পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে পুরো জনপদ।
গাবুরার বাসিন্দা ওয়েজ কুরুনী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই আমরা বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। বাঁধ ভাঙার কারণে আমাদের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ইয়াস ও রেমালের পর জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করেছে। তবে কিছু এলাকায় কাজ না করায় ফের ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে আতঙ্ক বেড়ে গেছে সেসব এলাকার মানুষের। একবার বাঁধ ভাঙলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আর কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকে না।
গাবুরার আশিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সম্প্রতি ৫ মাস আগে রিমালের ক্ষত না কাটকেই আবার ও আরেকটা ঝড় আসছে। ঝড় আসলে আমাদের বলি হতে হয়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় গাবরিার মানুষ খুবই অসহায় হয়ে পড়ে। দ্বীপ হওয়ায় সেখানে কোনো সাইক্লোন সেল্টারও নেই।
পশ্চিম দুর্গাবাটি গ্রামের মলিনা রানি রপ্তান বলেন, খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে আমাদের বসবাস। আইলার পর থেকে প্রতিবছরই পশ্চিম দুর্গাবাটিতে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। আমাদের সবকিছু নদীর মধ্যে। জমি জায়গা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আবার ঝড় আসছে, কী হবে কে জানে।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, উপকূলের বেশ কিছু পয়েন্টে বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। পানির চাপ বাড়লে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, জেলার ৬৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরায় ৮৮৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।