টাকার অভাবে পঙ্গুতের সাথে লড়াই করছে গুলিবিদ্ধ সৌরভ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

টাকার অভাবে পঙ্গুতের সাথে লড়াই করছে গুলিবিদ্ধ সৌরভ

টাকার অভাবে পঙ্গুতের সাথে লড়াই করছে গুলিবিদ্ধ সৌরভ

ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে পঙ্গুতের সাথে লড়াই করছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সৌরভ (২৭)।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক পরিবারের ভাগ্য বদলাতে। কিন্তু গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা মিরপুর বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পরেন সৌরভ। বর্তমানে ডান পায়ের ভিতরে পাইপ ও লোহার খাঁচা (রিং) পড়ানো অবস্থায় সুচিকিৎসার অভাবে ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পঙ্গুতের সাথে লড়াই করছেন। উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অসহায় কৃষক বাবা।

বিজ্ঞাপন

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের রাজীব শটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ওসমান গনির পুত্র সৌরভ ইসলাম। সৌরভ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) মিরপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। অভাবের সংসারে নিজের খরচ বহন করতে লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের আগেই তার জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাড় ফেটে গভীর ক্ষত হয়ে গুরতর অবস্থা তার। টেবিল বসে লেখাপড়ার ছেলেটি এখন মেডিকেলের বেডে ছটফট করছে ব্যাথার যন্ত্রণায়। ধার দেনা করে চিকিৎসা চালাতে যেন দেয়ালে পিঠ ঠেকা অবস্থা বাবা-মায়ের।

মুঠোফোনে আলাপকালে সৌরভ বলেন, সকল শিক্ষার্থী ও দেশের স্বার্থে আন্দোলনে গিয়ে আমার এই করুণ অবস্থা। ধার-দেনাসহ আমার মায়ের সোনার গহনা বানানোর জমানো টাকা ব্যয় করে আমার চিকিৎসা করান বাবা। ৫ আগষ্টের পর হাসপাতালের বেড ভাড়া আর কিছু ঔষধ পত্র ফ্রি পেলেও চিকিৎসার সব খরচ আমাদেন নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। ডাক্তার যে খাবার তালিকা দিয়েছে অর্থের অভাবে সে খাবার কিনে খেতে পাচ্ছিনা। তাই আমার হাড়ের ফাটল জোড়া লাগছে না। বর্তমানে আমার পায়ে প্লেট বসিয়ে দুইটি স্ক্রু লাগানো আছে যা পরে সার্জারি করে বের করতে হবে। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে আমার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। আমার কৃষক বাবা কোথায় থেকে পাবে এত টাকা, জানি না সুস্থ হয়ে হাঁটতে পারবো কি না? তবুও মনে প্রশান্তি পাই যে স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলনে গিয়েছিলাম সেই স্বপ্ন পূরুণ হয়েছে। দেশে স্বৈরশাসকের পতন ঘটেছে, বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি, নতুন প্রজন্ম সুস্থ সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার পাবে।

আন্দোলনের সময়ের ঘটনা সম্পর্কে সৌরভ বলেন, ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে হেমায়তপুরের ছাত্রাবাস থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয় মিরপুর ক্যাম্পাসের দিকে যাই। সেখানে গিয়ে জোট হয়ে মিরপুর গোল চত্বরের দিকে আসি তখন পুলিশ ও সশস্ত্র ছাত্রলীগ বাহিনীর সাথে আমাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে ওই দিন বিকালে মিরপুর -১০ এর সামনে আমরা মিছিল করে আসতে থাকলে পুলিশ ও ছাত্র লীগের সশস্ত্র বাহিনী গুলি ছোঁড়ে। আমরাও আত্মরক্ষার জন্য তাদের উপর ইট পাটকেল ছুঁড়ি। তারা চতুর দিক থেকে আমাদের ঘিরে ফেলে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকলে অনেকের সাথে আমিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার ডান পায়ের হাঁটুর সাইড দিয়ে গুলি ঢুকে বের হয়ে যায়। এতে পায়ের হাড় ফেটে গিয়ে গভীর ক্ষত হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরে অচেনা এক ছাত্র ভাই ও রিকশা ওয়ালা এক মামা আমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় রিকশায় তুলে মিরপুর শেওড়াপাড়া আল হেলাল হাসপাতালে পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ইবনে সিনা হাসপাতালে আমাকে ভর্তি করে। সেখানে আমার ডান পায়ের ভিতরে পাইপ ও লোহার খাঁচা (রিং) পড়ানো হয়।

সৌরভের বাবা কৃষক ওসমান গনি বলেন, আমার ছেলে গণতন্ত্র ও ছাত্রদের অধিকার আদায়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ব্যথা যন্ত্রণায় হাসপাতালের বেডে ছটফট করছে। এখন তার উন্নত চিকিৎসা ও অপারেশন করাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু আমি এ টাকা পাবো কোথায় ? শুনেছি সরকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করছেন। কিন্তু আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য কেউই খোঁজ খবর নিচ্ছে না। ৭ জন সন্তানের যৌথ পরিবার নিয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা আমি আর চালাতে পারছি না । ছেলেকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার ও বিত্তবান মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করছি।