ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই জলাতঙ্ক টিকা, রোগীদের অসন্তোষ
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় নয় মাস ধরে র্যাভিস ভ্যাকসিন (জলাতঙ্কের টিকা) সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এ অবস্থায় সামর্থ্যবানরা বাইরে থেকে টিকা কিনে দিতে পারলেও চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষজন। টিকা না পাওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কুকুর-শিয়ালে কামড়ানো অন্তত শতাধিক রোগী এসেছে। চলতি মাসে জলাতঙ্কের উপসর্গ নিয়ে রোগী এসেছে অন্তত ২০ জন।
প্রায় ৯ মাস আগে হাসপাতালে একবার জলাতঙ্কের টিকা এসেছিল। এরপর থেকে আর সরবরাহ করা হয়নি। এতে প্রতিদিনই হাসপাতালে কুকুরের কামড়ে লোকজন এলেও বিনামূল্যে টিকা মিলছে না। ফলে আগত রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে এ ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যদি কুকুরে কামড়ানো রোগীদের টিকা দিত, তাহলে এতটা হয়রানি হতো না। বাহির থেকে জলাতঙ্কের টিকা নিতে অনেকেই অনীহা প্রকাশ করেন। গ্রামের প্রান্তিক মানুষকে কুকুর বা অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী কামড়ালে তারা শুধু কবিরাজি চিকিৎসা নেয়। এতে বিপদ হতে পারে।
কার্তিক মাস এলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে বেওয়ারিশ কুকুর। সেই সঙ্গে রাতে গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে শিয়ালের উৎপাত। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে আতঙ্কে রাস্তাঘাটে চলাচল করতে হচ্ছে। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার হুমায়রা (৪) ও আরাফাত (৭) নামে দুই শিশু কুকুরের কামড়ে জখম হলে অভিভাবকেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসেন। কিন্তু তারা জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা পাননি। পরে বাইরে থেকে টিকা কিনে শিশুদের শরীরে প্রয়োগ করেন।
সম্প্রতি বিড়ালের আঁচড়ে জখম হন জুবায়ের হোসেন খান নামের এক যুবক। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন অনেক আগে থেকেই জলাতঙ্কের টিকা সরবরাহ নেই। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই যুবক বলেন, একটি সরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্ক রোগের টিকা নেই, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুল্লাপাড়া গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সন্ধার পর শিয়ালের উৎপাত বেড়ে যায়। শিয়ালের দল লোকালয়ে এসে চরম উৎপাত শুরু করে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া রাতে ঘর থেকে বের হওয়া ছেড়ে দিয়েছে গ্রামবাসী। কয়েক দিন আগে আমার ওপরও শিয়াল হানা দিলে অল্পের জন্য বেঁচে যাই।
পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের মো. খোকন মিয়া বলেন, বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা চারদিকে বেড়েই চলেছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা স্কুল-প্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পায়। আগে দেখতাম পৌরসভার উদ্যোগে কুকুরকে এক ধরনের ভ্যাকসিন দেওয়া হতো। এতে নাকি কুকুর কামড়ালেও জলাতঙ্ক রোগ হতো না। এটি আবার চালু করলে তো চরম উপকার হতো।
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন বলেন, কুকুরের কামড়ে যেন জলাতঙ্ক রোগ না ছড়ায়, সে জন্য একসময় পৌরসভা থেকে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হতো। সেটা কি কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া হতো, না কি পৌরসভার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেওয়া হতো আমার জানা নেই। তবে যেহেতু পৌরসভায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যেভাবেই হোক ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া তাসনিম মুনমুন বলেন, আমি যোগদানের পরই জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক এআরভির চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। টিকা সরবরাহ পেলেই বিনামূল্যে দেওয়া হবে।