আজ ১৩ নভেম্বর। দেশবরেণ্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর ৭৬তম জন্মদিন। আর এ দিনে প্রতিবছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে হিমু উৎসব।
লেখকের নিজ জেলা নেত্রকোনায় তারুণ্য নির্ভর সংগঠন হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে দিনব্যাপী হিমু উৎসবের মেতে উঠবে জেলা শহর। তরুণ পাঠক ভক্তরা প্রতিবারের ন্যায় এবারো দিবসটিতে হিমু-রূপা সেজে পায়ে হেঁটে অতিক্রম করবে দুই কিলোমিটার সড়ক। বিভিন্ন বয়সের কবি, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা হিমু উৎসবের প্রথমার্ধে শোভাযাত্রা বের করবে।
সাতপাই অস্থায়ী কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি মোক্তারপাড়া মাঠে গিয়ে শেষ হবে। পরে কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা করা হবে। সন্ধ্যায় রয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
তারুণ্য নির্ভর সামাজিক সংগঠন হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ১১ টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় সাতপাই থেকে হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু আর নীল শাড়িতে রূপা সেজে লেখকের নাটক সিনেমায় ব্যবহৃত গানের সাথে নেচে গেয়ে মোক্তারপাড়া মুক্তমঞ্চ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে অতিক্রম করবে। সেখানে হিমু-রূপাদের নিয়ে কেক কাটবেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ।
পরে সন্ধ্যা সাত টায় হিমু পাঠক আড্ডার আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় আড্ডায় আড্ডায় লেখকের তৈরি নাটক সিনেমায় ব্যবহৃত কালজয়ী গান ও নৃত্য পরিবেশিত হবে। শিল্পকলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আড্ডায় আড্ডায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লেখক সম্পর্কে আলোচনা করবেন স্থানীয় কবি লেখক সাহিত্যিকরা।
মূলত প্রতিবছর নতুন প্রজন্মের মাঝে হুমায়ুন আহমেদ এর সাহিত্য সংস্কৃতি আনন্দের ছলে এবং লেখকের আকর্ষণীয় কাল্পনিক চরিত্রের রূপায়নের মাধ্যমে তুলে ধরাই লক্ষ্য।
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতেই লেখকের এমন কাল্পনিক চরিত্রের কার্যক্রম ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা মাত্র জানালেন আয়োজক সদস্য সৈয়দা নাজনীন সুলতানা সুইটি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে চলা এই উৎসব এখন সকলের উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর এই আয়োজনকে ঘিরে এক মাস ধরে প্রস্তুতি চলে। যে প্রস্তুতিতে হলুদ টি শার্ট করা হয়। এই টি শার্টে প্রতি বছর লেখকের এক একটি শিক্ষনীয় উক্তি লেখা থাকে। আমাদের নতুন প্রজন্ম তারা প্রতিযোগিতা করে এসকল উক্তি থেকে একটা উক্তি বাছাই করে। এতে তাদের মধ্যে একটা সহনীয় মনোভাব তৈরি হয়। সাহিত্যকে জানা হয়। একজন অন্যজনের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া শেখে। এসব কর্মকাণ্ড দিয়েই প্রায় মাসব্যাপী ছেলে মেয়েদেরকে আমরা ব্যস্ত রাখতে পারি।
হিমু রিফাত আহম্মেদ রাসেল জানান, হলুদ টি শার্ট পড়া বড় ব্যাপার না। বড় ব্যপার হচ্ছে এই টি শার্টের গায়ের লিখাটা। এটি মানুষ দেখে জানে। এতে হুমায়ুন চর্চা যেমন হয় তেমন নতুনেরা জানতে পারে অন্য লেখকদের সম্পর্কেও।
হিমু পাঠক আড্ডার প্রতিষ্ঠাতা আলপনা বেগম জানান, একটি আয়োজনকে ঘিরে মাসব্যাপী কার্যক্রমে এখন শহরবাসীও প্রস্তুত থাকে প্রতিবছর। এর সাথে প্রশাসন থাকেন। অনেকে হুমায়ুন আহমেদকে শুধু পড়েছেন। কিন্তু এভাবে তাকে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে জানা টাকেও নতুন করে গ্রহণ করছেন।
বিশেষ করে এ অঞ্চলের ছেলে মেয়েরা যেন এক বাক্যে হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে ইন্টারভিউ বা যে কোন স্থানে বক্তব্য তুলে ধরতে পারে এই প্র্যাকটিসটিও হচ্ছে আমাদের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে।এক বরেণ্য ব্যক্তির উৎসব প্রতি বছর অপর বরেণ্য বুদ্ধিজীবী সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক যতীন সরকার উদ্বোধন করেন।
বর্তমানে প্রতি বছর দিনটি তরুণ প্রজন্মের সাথে বিভিন্ন প্রজন্মের একটি মেল বন্ধন ঘটার দিনে পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও লেখকের জন্মস্থান নানার বাড়ি জেলার মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে ও লেখকের পৈত্রিক ভিটা কেন্দুয়ার কুতুবপুরে লেখক প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠে দোয়া মাহফিল করা হবে।
উল্লেখ্য, লেখক হুমায়ুন আহমেদ এই দিনে মায়ের প্রথম সন্তান হওয়ায় নানার বাড়ি মোহনগঞ্জের শেখ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
নানার বাড়িতে থাকার আরও একটি কারণ ছিলো। হুমায়ুন আহমেদ এর পিতা সরকারি চাকুরী করার স্ত্রীকে শ্বশুর বাড়িতেই রেখে যেতেন। পরবর্তীতে ২০১২ সনের ১৯ জুলাই তিনি আমেরিকায় মারা যান।