এআই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ, বাড়বে উৎপাদন ও গুণগত মান

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশালে এআই প্রযুক্তি (Artificial intelligence) ব্যবহার করে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে রক্ষা হবে ফসলি জমি, মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, পুকুরে গ্যাস ট্যাবলেট প্রয়োগ করলেও ৭০ শতাংশ মাছ বাঁচানো সম্ভব।

জানা যায়, উপজেলার কানিহরি ইউনিয়নের সরকারি ৫২ শতাংশ পুকুরে এর পরীক্ষামুলক কার্যক্রম শুরু করেন। ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমে সফল হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ৫২ শতাংশ জমিতে এআই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ২৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে চাষি পর্যায়ে, এক একর জমিতে এই পযুক্তি ব্যবহারে ৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানায়, পুকুরে নিয়মিত খাবার দেয়া, সকল প্রকার যত্ন নেয়ার পরেও মাছের গ্রোথ আসছেনা। বিক্রির সময় কাঙ্খিত উৎপাদন না পাওয়ায় মাছ চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েন অনেক চাষি। এ লোকসান থেকে চাষিদের বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি করেছেন বিশেষ সেন্সর ও মোবাইল এ্যাপ, যা চলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের মাধ্যমে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম জায়গায় অধিক মাছ চাষ করেও সফল হয়েছেন তারা।

এআই প্রযুক্তি সার্বক্ষণিক মাছ চাষের পুকুরে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা, এ্যামোনিয়া পরিমাণ বাড়ল কিনা, কখন কি পরিমাণ খাবার দিতে হবে, পুকুরে গ্যাস ট্যাবলেট (মাছ মেরে ফেলার) দেয়া হলেও এই প্রযুক্তি তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় অক্সিজেন উৎপাদন করে ৭০ শতাংশ মাছ বাঁচানো সম্ভব। তবে, এতে অক্সিজেন সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয় না। এ প্রযুক্তি অটোমেটিক গ্যাস উৎপাদন করে পুকুরের পানিতে প্রয়োগ করে।

বিজ্ঞাপন

পুকুরের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকা, পুকুরে কি পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন, তা জানা না থাকা। যে কারণে নষ্ট হয় পুকুরের স্বাস্থ্য। এতে মাছ চাষে লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। এই সমস্যা সমাধানে এক বছর আগে উদ্যোগ নেয় ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসন। একটি সরকারি পুকুরে স্থাপন করে সেন্সর। সেন্সরের সাথে যুক্ত করে বানানো হয় একটি মোবাইল এ্যাপ।

পুকুরপারের চারদিকে রাখা হয় খাবার ছিটানোর মেশিন। অক্সিজেন সাপ্লাই বাড়ানোর জন্য পানির নিচে ও উপরে স্থাপন করা হয় যন্ত্র। এসবই পরিচালনা করে এআই প্রযুক্তি। পুকুরে যখন যা প্রয়োজন হয়, সয়ংক্রিয়ভাবে তা চালু হয়ে যায়। (গ্রাফিক্স) নিয়মিত পাওয়া যায় পুকুরের স্বাস্থ্যের তথ্য। তাই দ্রুত নেয়া যায় ব্যবস্থা। এতে হাতের কোন প্রয়োজন।

সাধারণত চাষের জন্য পুকুরের গভীরতা হয় ৫-৬ ফুট। কিন্তু এই পদ্ধতিতে পুকুরের গভীরতা ১৮ ফুট পর্যন্ত করা হয়। এতে অল্প জমিতে বেশি মাছ চাষ করা সম্ভব হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে শতাংশে ১৫০ থেকে ২০০টি পাঙ্গাস মাছ চাষ করা যায়। আর এই পদ্ধতিতে ১২০০ মাছ চাষ করা হয়। খাবারের পরিমাণও লাগে কম।

এ পদ্ধতিতে ৫৮ শতাংশ এই পুকুরে ৭২ হাজার পাঙ্গাস চাষ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক চাষ সফল হওয়ায় এখন প্রশিক্ষণ ও চাষি পর্যায়ে প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে ত্রিশাল উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় মৎস বিভাগ বলছে, মাছ চাষে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়। দেশে এটি শুরু হলে উপকৃত হবেন চাষিরা। বাড়বে উৎপাদন ও মাছের গুণগত মান।

ত্রিশাল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুজ্জামান মাসুম বলেন, মাছ চাষে এআই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মূল উদ্দেশ্য অল্প জায়গায় কিভাবে ৩ থেকে ৪ গুণ মাছ উৎপাদন করা যায়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পুকুরে প্রয়োজনীয় সেন্সর লাগানো থাকে। সেন্সর থেকে জানা যায়, পুকুরে কি পরিমাণ অক্সিজেন, পুকুরে অস্বাভাবিক কিছু হয়েছে কিনা, পুকুরের তাপমাত্রা প্যারামিটারের মাধম্যে সংগ্রহ করে। পরে পুকুরে কখন কি প্রয়োজন, খাবারের প্রয়োজন আছে কিনা, তাপমাত্রা কেমন আছে? তা সেন্সরগুলোর সাহায্য অটোমেটিক জানা যায়। যা সম্পূর্ণ সংক্রিয়ভাবে কাজ করে।

কিশোরগঞ্জ ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউটের মৎস ইন্সট্রাক্টর রনি সাহা বলেন, এআই প্রযুক্তি স্থাপনে ৫২ শতাংশ জমিতে ২৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এআই প্রযুক্তির সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ১০ লক্ষ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস আছে, এগুলো স্থাপনে ১৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। চাষি পর্যায়ে এক একরের জন্য খরচ হবে ৫ লক্ষ টাকা। আমাদের বাজারের যে বিষ (গ্যাস ট্যাবলেট) আছে এগুলো পুকুরের অক্সিজেন কমিয়ে দেয় বা শূন্য করে দেয়। যে কারণে পুকুরের মাছগুলো মারা যায়। এই প্রযুক্তির ফলে সার্ভারে দেখাবে পুকুরের অক্সিজেন কমে যাচ্ছে এবং সার্ভার মেশিনগুলো অক্সিজেন বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করবে। পরে সে অটোমেটিকভাবে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে। যা পুকুরে বাতাস তৈরি করবে এবং পানিতে অক্সিজেন প্রয়োগ করবে। আমাদের এখানে যে প্রযুক্তি আছে। যা দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৬৪ কেজি অক্সিজেন তৈরি করবে।

ত্রিশাল উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, আমরা চাষি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ করার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। কৃষক পর্যায়ে চাষিদের আগ্রহী করতে প্রতি ইউয়নিয়নে একটি করে পুকুরে চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে, এসব পুকুরে আমাদের লোকজন সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হবে।