‘ন্যাশনাল হাসপাতালে হামলায় ক্ষতি ১০ কোটি টাকা’
রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোড এলাকায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগে হামলার ঘটনায় বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা বলছে, ন্যাশনাল হাসপাতাল ও কলেজ ভবনে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ন্যাশনাল হাসপাতালের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন ও দায়ী শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ন্যাশনাল হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অবসর প্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল প্রফেসর ডাক্তার ইফফাত আরা।
কলেজ শিক্ষার্থী অভিজিত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিদিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ডাক্তার ইফফাত আরা বলেন, গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যায়। পরের দিন ১৯ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরের দিন ২০ নভেম্বর ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। পরবর্তীতে তারা আলোচনায় বসে ৯টি দাবি উত্থাপন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে পরের দিন অভিজিতের পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আলোচনায় বসে। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে শিক্ষার্থীদের মনোনীত একজন ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞের নাম দেওয়ার প্রস্তাব দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও তারা সেটি দেয়নি। ২৩ নভেম্বর তদন্ত কমিটি প্রথম মিটিং করা হয়। সেখানে দাবিও অভিযোগের বিষয় আলোচনা করে সবাই সম্মতি দেয়।
তবে ২৪ নভেম্বর দুপুরে এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী ন্যাশনাল হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ, জরুরি বিভাগ, ডেন্টাল বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ টাকা লুট করে। পাশাপাশি হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশে বিদেশি ছাত্র ছাত্রী সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর হামলা করা হয়। পাশাপাশি হাসপাতালের আর্থিক সেবাই নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখা তো ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বর্বরোচিত হামলায় শতবর্ষে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও হামলার ঘটনায় ব্যাপক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে দেশ-বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, একজন চিকিৎসকের কাছে তার রোগীর সেবা প্রার্থনার সমান। অভিজিতের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এত কিছুর পরও ডাক্তারদের কপালে জুটেছে মিথ্যা অপবাদ, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। ছাত্রদের ও রোগীর আত্মীয়দের চাহিদা মত তদন্ত কমিটি গঠন করেও ছাত্র প্রতিনিধিদের অসুবিধার কারণে তদন্ত করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোনোরূপ গাফিলতি ও সদিচ্ছার অভাব না থাকলে ভুল চিকিৎসা বা বিলম্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী দুটি কলেজের শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সম্মেলন থেকে সঠিক কোনো কারণ জানাতে পারেনি।
তারা বলছেন, পার্শ্ববর্তী দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তারা জানেও না। কারণ এটি তাদের ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা।