অচল সংযোগে সচল বিল

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘আঠারবাড়ি ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ’ অফিস।

‘আঠারবাড়ি ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ’ অফিস।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়িতে প্রায় এক একর আয়তনের জমিতে প্রতিষ্ঠিত ‘আঠারবাড়ি ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ’। এর আওতায় রয়েছে ৩৫০টি টেলিফোন সংযোগ। তবে সব কয়েকটি টেলিফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। কিন্তু বিল আসে নিয়মিত।

গত ১৩ বছর ধরে এমন ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। শুধু তা-ই নয়, সেখানে রয়েছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ। বিকল্প হিসেবে আছে উচ্চমানের ব্যাটারির ব্যবস্থাও। সেবা না পাওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর বিলের কাগজ আসায় ভোগান্তিতে পড়েছে গ্রাহকরা।

বিজ্ঞাপন

বিটিসিএল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে ঐতিহ্যবাহী আঠারবাড়ি রায়ের বাজারে অ্যানালগ (বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড) টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের ১ জুলাই বিটিবিকে পুনর্গঠন করে নাম দেওয়া হয় বিটিসিএল। পর্যায়ক্রমে বৃহৎ এই বাজারটিতে ৩৫০টি সংযোগ নেয় গ্রাহকরা। ২০১১ পর্যন্ত কোনোমতে বেশ কয়েকটি টেলিফোন সংযোগ চালু থাকলেও এর পর থেকে পুরোপুরি অচল হয়ে যায় টেলিফোন সংযোগ। গ্রাহকরা ব্যবহার করতে গিয়ে টেলিফোনটি বিকল থাকায় স্থানীয় এক্সচেঞ্জ অফিসে যোগাযোগ করেও কাউকে পায়নি। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে তারা মোবাইলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রতি মাসেই নিয়মিত তাদের কাছে আসে বিলের কাগজ। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা এসব বিলের কাগজকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া হচ্ছে। এই গ্রাহকদের মধ্যে অনেকেই বকেয়া বিল পরিশোধ করে সংযোগ বিচ্ছিন্নের আবেদন করছে।

‘আঠারবাড়ি ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দুই কক্ষের ভবনে তালা ঝোলানো রয়েছে। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, এখানে কাউকে আসতে দেখেনি তারা।

বিজ্ঞাপন

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে মাস্টার রোলে রয়েছেন পাশের গ্রামের আব্দুর রশিদ (৬৫) নামে একজন। তাকে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চেইলে তিনি বলেন, তিন বছর ধরে তিনি এখানে কাজ করছেন তিন হাজার টাকা বেতনে।

রশিদ মিয়া জানান, প্রায় এক বছর আগে এখানে বেশ কিছু উন্নত মানের অত্যাধুনিক ডিজিটাল যন্ত্র বসানো হয়েছে। কিন্তু যে কাজের জন্য বসানো হয়েছে সেই সংযোগই নেই। ৩৫০ লাইনের সবই অচল।

আঠারবাড়ি রায়ের বাজারের ঔষধ ব্যবসায়ী এ এন রঞ্জু ভুইয়া জানান, প্রায় দশ বছর আগে সংযোগ নিয়ে বছর খানেক কোনোমতে সেবা পাচ্ছিলেন। এরপর থেকেই অচল। কিন্তু প্রতিমাসেই ন্যূনতম বিল দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য অনেকবার চেষ্টা ছাড়াও স্থানীয় কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দেখা না পাওয়ায় কিছুই করতে পারছেন না। এখন এই সংযোগ নিয়ে বড়ই বেকায়দায় পড়েছেন।

শাহিন মিয়া নামে এক গ্রাহক বলেন, তিনি গত পাঁচ মাস আগে ময়মনসিংহ অফিসে গিয়ে আবেদন করে দুইটি সংযোগের ২৪ হাজার টাকা ভুতুড়ে বিল দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের আবেদন করেছেন।

বিটিসিএল ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মুকিত বলেন, ‘আঠারবাড়ির সংযোগটি কেন্দুয়ার সঙ্গে সংযুক্ত। সেখানকার সড়কের কাজ করার সময় ২০২১ সালে সংযোগ লাইন কাটা পড়েছে। তখন থেকেই কার্যত সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এতোদিনেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা তো আমরা দিই, কিন্তু পাচ্ছি না।’