হোল্ডিং ট্যাক্স সংগ্রহে অটোমেশন সিস্টেম চালুর চেষ্টা চলছে: চসিক মেয়র

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) হোল্ডিং ট্যাক্স সংগ্রহের জন্য অটোমেশন সিস্টেম চালুর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা (কাস্টমস ভ্যাট) যে অটোমেশন সিস্টেম চালু করেছেন, এটি খুবই চমৎকারভাবে চলছে। আমিও চেষ্টা করছি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের যে হোল্ডিং ট্যাক্সগুলো রয়েছে, সেগুলো একটি অটোমেশনের মাধ্যমে নিয়ে এসে, প্রতিটি ওয়ার্ডে যাতে তারা খুব সহজে দিতে পারে। এটি এতদিন কেন হয়নি, সেটা আমার খুব আশ্চর্য লাগছে। আমি এই চট্টগ্রামকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও হেলদি সিটি করার চেষ্টা করছি।’

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লুতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন। ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট কমিশনারেট।

বিজ্ঞাপন

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট (আপিল) কমিশনারেটের কমিশনার মো. মাহফুজুল হক ভূঁঞা। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাড়লে রাজস্বও বাড়বে।

বিষয়ে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম কর অঞ্চ-১ এর কমিশনার ড. মো. সামছুল আরেফিন, চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ভ্যাট কিন্তু জনগণ দিচ্ছে। কেউ বলতে পারবেন না মানুষ ভ্যাট দিচ্ছে না। মিষ্টির দোকানের কথা বলেছেন। দোকানদার লাভবান হচ্ছে, কারণ তাদের থেকে আমরা ভ্যাট চালান নিচ্ছি না। রেস্টুরেন্ট থেকেও হয়তো আমরা ভ্যাট চালান নেই না। খেয়েদেয়ে খুব দ্রুত হেসে চলে আসি, আরও পারলে কিছু বকশিশ দিয়ে আসি। আমার মনে হয় না কেউ ভ্যাট চালান নেয়। এই রেডিসিন ব্লুতেও কেউ একজন লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে, কারণ তার রেস্টুরেন্টের বিল দেখে। পানি খেতেও ভয় লাগছিল এখানে, কারণ এখানে যে পরিমাণ ট্যাক্স ধরা হয়, বাইরে ১০ টাকা, এখানে ১০০ টাকা। কঠিন একটা অবস্থা।

তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। এ পাঁচটি বিষয় যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে এত কিছু করে কী দরকার? সিটি করপোরেশনে আমি প্রথম যেদিন শপথ নিয়েছি, সেদিন তাদেরকে বলেছিলাম, "তোমাদের প্রতি মাসে কত খরচ?" তারা বলল, ত্রিশ কোটি টাকা প্রতি মাসে খরচ হয়। জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমরা ভর্তুকি কোথায় দাও?’ তারা বলল, স্যার দুটি খাতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হয়—শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। আমি বললাম, এই দুটো ভর্তুকি না, এটি এক ধরনের ইনভেস্টমেন্ট। এটি মূল জায়গায় করা হচ্ছে, কারণ আমি শিক্ষাকে যদি ইনভেস্টমেন্ট করতে না পারি, তাহলে আমার মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। আর মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য যদি আমি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে দিনশেষে অধিকার সেটা হরণ করা হবে। তাই আমি এটাকে ভর্তুকি বলব না, এই বিনিয়োগ বলব। এই জায়গায় মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

‘বিগত ১৬টি বছর উন্নয়নের নামে যা হয়েছে, ২৪ লক্ষ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। এ জায়গায় আমাদের রাজনীতিবিদদেরকে একটা জায়গায় আসতে হবে।’

ডা. শাহাদাত হোসেন আরও বলেন, আমরা রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছি, সুন্দরভাবে খেয়েদেয়ে বের হয়ে আসছি, চালান নিচ্ছি না। আর যাকে ভ্যাট সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়, সে হয়তো গিয়ে সুন্দরভাবে খেয়েদেয়ে কিছু পকেটে ভরে নিয়ে আসে। এটি বাস্তবতা, আমরা এগুলো দেখছি। যে অফিসাররা আছেন, তাদের মধ্যে যদি সততা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, তাহলে আপনি কিছু করতে পারবেন না। আর সংস্কার করতে হলে, আগেই নিজেকে সংস্কার করতে হবে। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে সংস্কার করতে পারব না, দেশের জন্য কিছু করতে পারব না।

মেয়র বলেন, ধরুন, রেস্টুরেন্ট কিংবা মিষ্টির দোকান—সব জায়গায় সাধারণ মানুষ গেলে, তাদের থেকে ভ্যাট কেটে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু যারা প্রতিষ্ঠানের মালিক, তারা ভ্যাট দিচ্ছে না। বিষয়গুলো, যারা ভ্যাট সংগ্রহ করতে যায়, তাদের তদারকি করা দরকার, সংস্কার করা উচিত। দেশপ্রেম আর সততার জায়গায় আমরা যদি নিজেদের সংস্কার করতে পারি, তাহলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

ড. মো. সামছুল আরেফিন তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের শিক্ষা আর স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ না করলে জিডিপি বাড়বে না। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। রাজস্ব হচ্ছে উন্নয়নের একটি অক্সিজেন, বাংলাদেশের রাজস্বের আয়ের এক নম্বরে ভ্যাট, দ্বিতীয়ত ইনকাম ট্যাক্স। গত চার মাস আগেও আমরা এই রাষ্ট্রের প্রজা ছিলাম। ৫ আগস্টের পরে আমরা এই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছি। যে জিনিসটা গত ১৫ বছর ছিল না। আর সবাইকে আয়কর দিতে হবে, যদি আমরা সঠিক উন্নয়ন দিতে চাই তাহলে আমাদেরকে যথাসময়ে ভ্যাট দিতে হবে। বাংলাদেশের ১৫ বছরের যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি উন্নয়ন না। উন্নয়ন হচ্ছে স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ সবখানে যখন বিনিয়োগ করবেন সেটিই।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক একেএম নুরুল হুদা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমেই রক্তিম এ বিজয়কে টেকসই রূপ দেয়া সম্ভব। তাই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। উন্নয়নের গতি অটুট রাখতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তাই আইনানুগ রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উন্নয়নমুখী এবং ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব নীতি গ্রহণ করে চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণে উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ (এসডিজি) বাস্তবায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ জোগান দিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭, লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার  কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৮.২ শতাংশ বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৮ শতাংশ আদায় করবে। তন্মধ্যে, আমদানি ও রফতানি পর্যায়ের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৭ হাজার   ৬০০ কোটি টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।