রাজবাড়ীতে চাঞ্চল্যকর সালমা হত্যার মূল আসামি গ্রেফতার
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের সালমা আক্তার(৩৩) হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল আসামি আরিফ সেখকে (৩৬) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন।
গ্রেফতারকৃত আরিফ শেখ বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের আলাউদ্দিন সেখের ছেলে ও নিহত সালমা আক্তার একই গ্রামের সৈয়দ আলী মন্ডলের মেয়ে।
পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ সালমা হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সালমার আচার-আচরণ ছিল উগ্র। তার বাড়ির সীমানায় থাকা রাস্তা দিয়ে কেউ চলাচল করলে তাকে বকাবকি করতো। টিউবওয়েলের পানি নিতে আসলেও খারাপ ব্যবহার করত। এছাড়াও আরিফের পরিবারে সবসময়ই অশান্তি লেগে থাকতো। এজন্য সেও হতাশাগ্রস্ত ছিল।
ঘটনার দিন আরিফ সালমার বাড়ীর সীমানা দিয়ে হেঁটে আসার সময় সালমা তাকে গালি দেয়। এসময় পাল্টাপাল্টি গালিগালাজের এক পর্যায়ে আরিফ বলপ্রয়োগ করে সালমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে অজ্ঞান করে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে সালমার পরনের ওড়না দিয়ে তাকে লেবু গাছের সাথে পেঁচিয়ে রাখে। এরপর সে সুযোগ বুঝে ওই স্থান ত্যাগ করে ঢাকার সাভার থানার গেন্ডা এলাকায় পালিয়ে যায়। সেখানে সে রাজমিস্ত্রীর কাজ করছিলো। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকা জেলার সাভার থানার গেন্ডা এলাকা থেকে রাজবাড়ীর ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মামালার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০৭ সালে গোবিন্দপুর গ্রামের আকামুদ্দিন সরদার(৪০) এর সাথে সালমার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান আছে। ২০২১ সালে পারিবারিক কলহের জের ধরে সালমার সঙ্গে তার স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকেই সালমা তার সন্তানসহ আলাদাভাবে বসবাস করতো।
চলতি বছরের গত ১লা নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সালমা একই গ্রামে তার বাবার বাড়িতে যায়। বাবার বাড়িতে সে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মাগরিবের নামাজের সময় আবার চলে আসে। পরবর্তীতে সে বাড়িতে না ফিরলে সালমার মেয়ে তার মাকে খোঁজার জন্য তার নানা বাড়িতে যায়। তখন সালমার বাবা ও তার নাতিসহ সালমাকে খুঁজতে থাকেন। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোবিন্দপুর গ্রামের সায়েন্স উদ্দিন শেখের লেবু বাগানে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় সালমাকে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় গত ২রা নভেম্বর নিহত সালমা আক্তারের বাবা মোঃ সৈয়দ আলী মন্ডল বাদী হয়ে বালিয়াকান্দি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ শরীফ আল রাজীব, ডিআইও-১ বিপ্লব দত্ত চৌধুরী, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোঃ মফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।