মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণ

শনিবার শেষ হবে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের আল্টিমেটাম

  • ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পদ থেকে মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণ চেয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আল্টিমেটাম শেষ হবে শনিবার। এই আল্টিমেটামকে ঘিরে প্রশাসনে ভেতরে-বাইরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে বুধবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা পুনর্বিন্যাসের খসড়া সুপারিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। ‘জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে’ তারা এ প্রতিবাদ সভা করেন।

প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড যৌথভাবে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে। এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের খসড়া সুপারিশে সরকারের উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার এক বিবৃতিতে অ্যাসোসিয়েশন এ অনুরোধ জানায়।

বিজ্ঞাপন

বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য এসেছি। তখন আমাদের দুই ব্যাচমেট অনুরোধ করেছিলেন আজকের কর্মসূচি থেকে যেন আমরা কোনো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা না করি। আমাদের মনে হলো আজকের প্রতিবাদ অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমি একটি প্রস্তাব দিয়ে রাখি- আপনারা সম্মতি দিলে আগামী ৪ জানুয়ারি আমরা একটা মহাসমাবেশ ডাকতে পারি। যেখানে ৫০০ পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এখন দেওয়া হলো ২০০ পাওয়ারের, ওই দিন দেওয়া হবে ৫০০ পাওয়ারের। তা হলে মনে হয় আর অপারেশনের দরকার হবে না। এখন থেকে আমাদের আন্দোলনটা শুরু। বিসিএস পরিবারটাকে বাঁচানোর জন্য হয়তো আমাদের আরও কষ্ট করতে হবে। আমরা কলম বিরতি, অনশন কর্মসূচিও ঘোষণা করতে পারি। আব্দুস সাত্তার বলেন, দুটি বিষদাঁত অঙ্কুরিত হয়েছে। এ বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। একটা বিষদাঁত হলো মুয়ীদ ভাই। তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে একজন কলঙ্কিত ব্যক্তি। চাকরিজীবী ও সুবিধাভোগী হিসেবে তিনি বিতর্কিত একজন কর্মকর্তা। তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। তিনি নিজের জন্ম ভুলে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুয়ীদ ভাইয়ের অপসারণ চাই। সরকার যদি অপসারণ না করে কীভাবে অপসারণ করতে হবে সেই কৌশল আমাদের জানা আছে। গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হতে আলাদা করার সুপারিশ করা হবে। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

এদিকে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের চরম ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র-জনতার নির্মোহ আত্মত্যাগ, অন্তর্র্বর্তী সরকার ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে বিতর্কিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই আপিল বিভাগের একটি মীমাংসিত ইস্যুর বাইরে গিয়ে এ ধরনের মনগড়া ও কাল্পনিক সুপারিশ করা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর মামলা চলমান থাকার পর আপিল বিভাগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও আপিল বিভাগের রায়কে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে।

বিসিএস পরীক্ষায় মেধা ও ক্যাডার চয়েসের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধান করা বিষয় হওয়া সত্ত্বেও উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক, প্রতিহিংসামূলক, অনভিপ্রেত ও অযৌক্তিক বিধায় তা দ্রুত সমাধা করার জন্য অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

বিবৃতিতে জানানো হয়, ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশসহ ভারতের ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস, পাকিস্তানের পাকিস্তান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এবং শ্রীলঙ্কায় শ্রীলঙ্কান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের পলিসি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক পদে দীর্ঘ কর্মজীবনের লব্ধ অভিজ্ঞতা প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাইরের অন্যান্য ক্যাডারের নেই। এ ছাড়া প্রত্যেক ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডে নিজস্ব পদ আছে।

এতে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ অন্তর্ভুক্তি করা হলে রাষ্ট্রের প্রশাসন কাঠামোতে অস্থিরতা বাড়বে। আন্তঃক্যাডারের মধ্যে পরস্পর বিপরীতমুখী আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বাড়বে। রাষ্ট্রের গতিশীলতা শ্লথ হয়ে যাবে। এর ফলে জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে একটি দক্ষ, জবাবদিহিতামূলক, জনমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলার জন্য হাজারো ছাত্র-জনতার রক্ত বিনিময়ে গড়া ওঠা স্বপ্ন মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্যান্য ক্যাডারের ২৫ শতাংশ আগের মতো বহাল রাখাসহ ক্যাডারগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমাদের গণকর্মচারীদের দলীয়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী জনপ্রশাসন আর পুলিশ যে স্বাধীনভাবে কাজ করবে– সেটি হয়নি। বরং দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি আর বঞ্চনার ঘটনা ঘটেছে। পদবঞ্চিতদের অনেক দুঃখ-বেদনা আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মৌলিক এই সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা– সেটিও একটি প্রশ্ন। আর এতদিন যে প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি হয়েছে, তার বিপরীতে গিয়ে সংস্কার করতে চাইলে তো ক্ষোভের মধ্যে পড়তে হবে। তবে যেভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে, সেভাবে না হলেই পারত। যেভাবে হচ্ছে সেটি বিব্রতকর।’