ডিবি পরিচয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে অপহরণ, গ্রেফতার ৫
ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া থেকে যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে পটুয়াখালী জেলার মৌকরন ইউপি চেয়ারম্যান কাজী রাইসুল ইসলাম ওরফে সেলিমকে (৪৫) অপহরণের ঘটনায় পাঁচ অপহরণকারীকে গ্রেফতার ও অপহৃতকে উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোহাম্মদ ফরহাদ (৩৪), তৌফিক রাহাত (২০), রিপন মাহমুদ নয়ন (২৭), মোঃ আমির হোসেন (৬৫) ও মোহাম্মদ দিদার (২৫)।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন দোলেস্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগ।
এ দিন সন্ধ্যায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জনান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ ও অতিরিক্ত দায়িত্বে ডিবি মিরপুরের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, কাজী রাইসুল ইসলাম ওরফে সেলিম চেয়ারম্যান গত ৩১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পটুয়াখালী থেকে গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ০১ জানুয়ারি সকালে ৬টার দিকে সে তার স্ত্রীকে ফোন করে জানায় যে, তিনি যে বাসে এসছেন সে বাসটি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইকুরিয়া বিআরটিএ এর সামনে এসে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন লোক বাসে উঠে বাসের ড্রাইভার, হেলপার ও অন্যান্য যাত্রীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে জোর করে বাস থেকে তাকে নামিয়ে একটি প্রাইভেটকারে করে অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে আটক করে রেখেছে। অপহরণকারীদের একজন তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে তার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগীর পরবার গ্রীন লাইনের কাউন্টারে গিয়ে বাস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, পহেলা জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাসটি ইকুরিয়া বিআরটিএ এর সামনে ঢাকা মাওয়া মহাসড়কের পাশে থামলে একজন যাত্রী বাস থেকে নামে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ লোক বাসে উঠে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগীত স্ত্রী অপহরণের বিষয়টি ডিবি পুলিশকে জানালে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণকারীদের শনাক্ত করে ডিবি-মিরপুর বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে অপহৃত কাজী রাইসুল ইসলাম ওরফে সেলিমকে উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ফরহাদ গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, গত ৩১ ডিসেম্বর রাত দেড়টার দিকে অপহরণকারী চক্রের সদস্য পান্নু ফোন দিয়ে তাকে ইকুরিয়া আসতে বলে। পান্নুর ফোন পেয়ে ফরহাদসহ তৌফিক রাহাত ও রিপন মাহমুদ নয়ন ইকুরিয়া আসে। তারা এসে দেখে একজন লোককে গ্রীন লাইন বাস থেকে পান্নু সহ ১৫/২০ জন টেনে হিঁচড়ে নামাচ্ছে। পান্নুর কথামতো ফরহাদসহ ১৫/২০ জন ভিকটিমকে একটি প্রাইভেটকারে উঠায়। প্রাইভেটকারে করে হাসনাবাদে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে ফরহাদকে নামিয়ে দেয়।
গ্রেফতারকৃত আমির হোসেন জানায়, পান্নু শেখের কথামতো তার বিল্ডিং এর ২য় তলার একটি কক্ষে ভিকটিমকে আটকে রাখা হয়েছিল। আসামীরা জানায় যে, ভিকটিম কাজী রাইসুল ইসলাম ওরফে সেলিম এর পরিবার থেকে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন বিকাশ নাম্বারের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে।
ডিবি-মিরপুর বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অপহরণের পর ভিকটিম কাজী রাইসুল ইসলাম সেলিমকে অপহরণকারীরা দুই রাত আটকে রেখে তাকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।