বাণিজ্য মেলায় ক্রেতাদের চাপ কম, দাম বেশির অভিযোগ
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসরের তৃতীয় দিন আজ। মেলা শুরুর পর দুইদিন অতিবাহিত হয়ে সাপ্তাহিক প্রথম ছুটির দিনেও দেখা মেলেনি কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা ও দর্শনার্থীর চাপ।
তবে শৈতপ্রবাহ কমলে এবং পরবর্তী ছুটির দিনগুলোতে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর চাপ বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, সাধারণ মার্কেটে নির্ধারিত দামের থেকেও অনেক দাম হাকাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গণের ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিসিএফসি) অনুষ্ঠিত ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলায় প্রবেশমুখেই দেখা মিলবে জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন স্মৃতি বেষ্টিত প্যভিলিয়ন। এরপর ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট বড় রং বেরংয়ে বিভিন্ন পণ্যের বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। দেশি বিদেশি পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। লক্ষ্যণীয় ছিলনা ক্রেতা দর্শনার্থীর ভিড়। অধিকাংশ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিদের অবসর সময় পার করতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন স্টলগুলোর সামনে ক্রেতা দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিক্রয়কর্মীদের নানান অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে ক্রেতা ডাকতেও দেখা গেছে। এছাড়াও বেশকিছু অসম্পূর্ণ স্টল তৈরির কাজে কাঠমিস্ত্রীদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
এদিকে মেলা এখনও না জমলেও ক্রেতাদের অভিযোগ, সাধারণ মার্কেটে নির্ধারিত দামের থেকেও অনেক দাম হাকাচ্ছেন মেলা প্রাঙ্গণের ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় আসছেন মো.পারভেজ। তিনি বলেন, মেলার শুরুতেই পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। সাধারণত শেষের দিকে মেলায় জনসমাগম বেশি থাকে তাই পরিবার নিয়ে ঘোরাঘুরি করা অনেক কষ্টের ব্যাপার হয়ে যায়। এই জন্যই এবার শুরুতেই মেলায় এসেছি। তবে মেলা এখনও জমে নাই।
তিনি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে যেমনটা হয়েছে এবারও একই রকম। কোন পরিবর্তন নেই। পণ্য হিসেবে দাম অনেক বেশি।
পণ্যের মান খারাপের অভিযোগ তুলে ফিয়া নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, গতবারের মেলার সঙ্গে এবারের মেলার কোন চেঞ্জ নেই। পণ্যের মান খারাপ। দেখে মনে হয় নিউমার্কেটের পণ্য। লো কোয়ালিটি খুবই বাজে।
শামীম নামের অন্য আরেকজন বলেন, মেলায় ছাড়ের নামে যে প্রোডাক্ট বিক্রি করা হচ্ছে। দেখলাম একটি টিভি কিনলে ১০টি প্রোডাক্ট ফ্রি। কিন্তু ওভারঅল যাচাইকরে দেখলাম দাম অনেক বেশি। একটা ওভেনের দাম দেখললাম ৩৮ হাজার লেখা আছে। কিন্তু অনলাইনে সার্চ সার্চ দিলাম সেখানে দাম দেয়া ৯ হাজার টাকা। সবকিছুর দাম বেশি।
মিস কায়ানাত স্টলের বিক্রেতা বাধন বলেন, এখনও তেমন একটা ক্রেতা নেই বললেই চলে। দুই একজন যা আসছে ঘুরেফিরে দেখে চলে যাচ্ছে। বেচা কেনা নেই।
পাকিস্তানি জুতা স্যন্ডেলের স্টলের বিক্রেতা মো. সাইম বলেন, মেলা শুরু হয়েছে মাত্র দুইদিন। জমে উঠতে টাইম লাগবে। অন্তত ১০ দিন পার না হলে মেলা জমবে না। আপাতত বিক্রিও নেই খুব একটা।
দাম বেশির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন পণ্যের দাম বেশি না। সবই রিজনেবল দামের মধ্যেই আছে। আমাদের সব পণ্যের দাম ফিক্সড।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, এবার বাণিজ্য মেলায় বিশ্বের ৭টি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানসহ থাকছে মোট ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে প্রাধান্য দিয়ে হবে জুলাই চত্বর, ছত্রিশ চত্বর এবং তরুণ সমাজকে রফতানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধকরণে তারুণ্যের প্যাভিলিয়ন। ই-টিকিটের ব্যবস্থা থাকায় প্রবেশপথে রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা।
মেলা মাসব্যাপী সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মেলায় প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের (১২ বছরের নিচে) ক্ষেত্রে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশে পণ্য প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে ৭টি দেশ। এবার ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। আর বাকি ১১টি স্টল সাতটি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের।
দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করছে বাংলাদেশ।