খাদ্যাভাবে জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে বানরের ডাকাতি
মনোহরদী ( নরসিংদী) থেকে ফিরে: গ্রামের মসজিদের ছাদে বসে আছে অনেকগুলো বানরের দল। মানুষ দেখেই চিৎকার চেঁচামেচি করে নেমে কাছে আসছে খাবারের জন্য। খুব শান্ত ভাবেই মানুষের হাত থেকে খাবার নিচ্ছে। সংখ্যায় শ' দুই তিন ওরা। চৌর্যবৃত্তিতে সেরা। দস্যুবৃত্তিতেও জুড়ি নেই। ডাকাতি রাহাজানিতেও পাকা। কি করবে ওরা পেট পূর্তি বলে কথা!
আম, কলা, মূলা, কাঁঠালের দুস্প্রাপ্যতা। তাই যে যেভাবে পারছে অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে নেমেছে ওরা। আর তাই রামপুরের প্রাচীন আবাস ছেড়ে আশেপাশের গ্রাম-জনপদে ছড়িয়ে পড়ছে ওরা। রামপুরের মতোই ওরা এখন সর্বনাশ ঘটাচ্ছে সেসব জনপদের।
সম্প্রতি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার উত্তরে শেষ জনপদের নাম খিদিরপুর ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
জানা যায়, রামপুর গ্রামের সেই প্রাচীনকাল থেকে এখানে বেশ ক'টি বানর দলের আধিপত্য চলে আসছে। মনুষ্য বসতিতে বানর অনুপ্রবেশকারী এখানে, নাকি বানরের রাজত্বে মানুষ দখলদার সেটি নির্ধারণ কঠিন। তবে মানুষের পাশাপাশি রামপুরের গ্রামীণ ঝাড়-জঙ্গল মাতিয়ে মন্দ ছিল না ওরা।
কিন্তু বর্তমানে গ্রামীণ জঙ্গলের আকৃতি কমেছে। ফলে খাবারে টান পড়েছে তাদের। এ জনপদে বানর এখন রীতিমতো উটকো ঝামেলা। তাদের উৎপাত ছড়িয়ে পড়ছে জনপদে।
রামপুর গ্রামে কয়েকশত বানর বসবাস করে। এখন তাদের চেহারা আর শরীরে জীর্ণ ভাব৷ তাদের হাঁকডাক এবং চলাফেরা দেখেই স্পষ্ট অনুভব করা যায়, চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে আছে৷ এলাকায় নতুন কোনো মানুষ দেখলেই দলবেঁধে ছুটে আসে খাবারের জন্য। এলাকায় ঘুরতে আসা মানুষ যা খাবার দেয় তাই যেন তাদের বেঁচে থাকার উৎস। দিন দিন কমছে গ্রামীণ ঝাড়-জঙ্গল। প্রাকৃতিক খাবারে টান।
এক সময় এই গ্রামটিতে ছিল প্রচুর ঝোঁপঝাড়। গ্রামে ফলমূলের গাছ অনেক থাকায় অতিরিক্ত খাবার ছিল বানরের জন্য। সময়ের পরিবর্তনে এখন আগের মতো ঘন বন জঙ্গল নেই। ঝোঁপঝাড় কমে এসেছে৷ মানুষের বসতি স্থাপন বাড়ছে। ফলে নীরব এলাকাটি এখন সবসময়ই সরব হয়ে ওঠেছে৷ ফলে বানরের স্বাভাবিক আবাসস্থল নষ্ট হয়েছে। ফলে খাবার সংকটে প্রায়সময় মারমুখীও হচ্ছে মাঝে মধ্যে৷
স্থানীয় বাসিন্দা বিমল বণিক বার্তা২৪.কম'কে বলেন, একসময় তো খাবারের অভাব ছিল না৷ এখন আগের মতো গাছপালা নেই৷ খাবারের অভাবে বানর খুব অত্যাচার করে৷ জমির ধান পাহারা না দিলে রাখা যায় না। রান্না করার সময়ে বিরক্ত করে খুব।'
রামপুর গ্রামের শফিকুল হাদী বার্তা ২৪. কম'কে বলেন, সরকারিভাবে কিছু ফলের গাছ রোপণ করা হলে এবং তাদের জন্য আলাদা একটি কৃত্রিম বনাঞ্চল করে দিলে হয়তো প্রকৃতির সৌন্দর্য এই প্রাণীগুলো বেঁচে থাকবে। মানুষ যেমন বাঁচতে হবে তেমনি প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষায় প্রাণীদের বাঁচাতে হবে।’
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম. এ. মুহাইমিন আল জিহান জানান, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং সরকারিভাবে বানরগুলোকে রাক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ কি নেওয়া যায় তা ভেবে দেখব।