চট্টগ্রামে সমন্বয়কদের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, হট্টগোল

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের নেতারা নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ তুলেছেন। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রাসেল আহমেদ বলেন, আজ বিকেলে 'জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র'র পক্ষে কর্মসূচি দুই নম্বর গেট থেকে শুরু করে জিইসি মোড়ে এসে শেষ করি। পরবর্তীতে আমরা আগামী কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে আলাপের জন্য একটি অফিসে বসি। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রাফিকে ফোন দিয়ে পাচ্ছিলাম না। প্রায় ৩০ মিনিট পর সে দলবল নিয়ে আসে। সেখানে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা সমন্বয়ক রিজাউর তার নিয়ন্ত্রণে থাকা ডট গ্যাংকে নিয়ে আসে। এসে আবদুল হান্নান মাসউদকে প্রশ্ন করেন তাকে কেন জানানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেছেন, 'হু আর ইউ? যেহেতু তিনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তিনি সবাইকে চেনেন না এটাই স্বাভাবিক।'

রাসেল বলেন, এরপর সমন্বয়ক রিজাউর র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া ডট গ্যাং সদস্য সাদিক আরমান, নিজামুদ্দিনসহ আরও অনেক উগ্র ছেলে-মেয়ে মাসউদ ভাই এবং আমাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। আমরা একটা রুমে আশ্রয় নিই। প্রায় একঘণ্টা সেখানে আমরা অবরুদ্ধ ছিলাম। তারা বারবার সেখানে উস্কানিমূলক স্লোগান দিচ্ছিল। একপর্যায়ে তারা সেখানে ভাঙচুর করা হয়। যার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা আবদুল হান্নান মাসউদ, মাহিন সরকার, রিফাত রশীদকে চট্টগ্রামে অবরুদ্ধ করে রাখা অনেক বড় ধৃষ্টতা। সাদিক আরমানসহ ডট গ্যাং-কিশোর গ্যাং এর যারা আছেন-তারা তানভীর শরীফ, ওমর ফারুক সাগর, নাছির উদ্দিন, নওশাদ, ইফতি, মাহমুদ আলম, শফিকুল ইসলামসহ আমাদের সহযোদ্ধাকে আঘাত করে। পরবর্তীতে আমরা ছাত্রদলের সহযোগিতায় আমরা বের হয়ে যাই।

বিজ্ঞাপন

রাসেলের বক্তব্য চলাকালে একপর্যায়ে ওই হল রুমে সেখানে হাজির হন সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, রিজাউর রহমান এবং ছাত্র আন্দোলনে আহত এক শিক্ষার্থী। এরপর রাফি গিয়ে রাসেলের পাশে বসেন এবং রিজাউর চেয়ারে বসার চেষ্টা করেন। ওই সময় রাসেলের সাথে থাকা উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘হামলাকারীদের সাথে বসব না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এরই মধ্যে সেখানে রাফির পক্ষে থাকা আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। এ সময় উভয়পক্ষ একে অপরকে কটাক্ষ করে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সেখানে উভয়পক্ষের কয়েকজন হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। তারা উভয় পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন।

এসময় খান তালাত মাহমুদ রাফি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি ছিল না। হান্নান ভাই গতকাল রাতে আমাকে কল দিয়ে বলেন, তিনি আজ চট্টগ্রামে আসবেন। সেজন্য এ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করা হয়েছে। ৩টায় যেহেতু কর্মসূচি, সেহেতু আমার ক্যাম্পাস থেকে আসতে দেরি হয়েছে। আমার ওখানে যেতে চারটা বেজেছে। যে হামলার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমি জড়িত ছিলাম না। যে বা যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

কিছুক্ষণ পর রাফি ওই হল রুম ত্যাগ করে একতলা সিড়ি দিয়ে নেমে নিচে প্রেসক্লাব ভবনের প্রধান সামনে দাঁড়ান, পরে রাসেলরাও এসে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সেখানে দাঁড়িয়ে রাফি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ও রিজাউরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেগুলো কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আমরা কেউ থাকবো না। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে। যে নোংরা রাজনীতি চলছে সেটার বন্ধ চাই।

সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ওঠা সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, জিইসি মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা হয়েছে। এই হামলা কারা করেছে? যারাই করছে সে ফুটেজগুলো আমাদের কাছে আসতেছে। আমরা এটা দিব আপনাদের। তারা যে ডট গ্যাং বলে বলে আন্দোলনকারীদের মারার কালচার তৈরি করতেছে আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

এর মধ্যে রাসেল তার অনুসারীদের নিয়ে প্রেসক্লাব এলাকায় ত্যাগ করেন। দীর্ঘ এক ঘণ্টা পর রাফি ও রেজাউর না রাত সাড়ে ১০টার দিকে চলে যান। এর আগে রাফি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শীঘ্রই জুলাই আন্দোলনের ঘোষণা পত্রের পক্ষে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু করব। আজকের মত আমরা এখান থেকে বিদায় নিচ্ছি।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম বলেন, চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের দু'পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। প্রথমে খুলশী থানা এলাকায় তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর রাসেল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে রাফির পক্ষ আসলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে, বিকেল ৩টায় জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের পক্ষে নগরীর বিপ্লব উদ্যানে পথসভা, লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।

পথসভায় আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, আমরা কোনো মেসেজ দিতে আসিনি আমরা মেসেজ নিতে এসেছি তারা আগামীর বাংলাদেশ দেখতে চান? আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে তাদের স্বপ্ন কি? কি কি পরিবর্তন দেখতে চাচ্ছেন তা জানতে চাই। আমরা একটা প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছি, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রে কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি এবং মানুষের সমর্থন চাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের জন্য আমরা সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছি। আশা করি সরকার ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। জুলাই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা রাখবে। দেশি-বিদেশি অনেক শক্তি চায় না জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন হোক।