পেশাগত দায়িত্বে সাহসিকতার পরিচয় দিলেন এএসআই মেসবাহ
চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হওয়া সত্ত্বেও অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোঃ মোবারক হোসেন নাফিজ (২২) নামের এক চিহ্নিত অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির ভাটারা থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক ( এএসআই) মোঃ মেসবাহ উদ্দিন।
গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাটারা থানাধীন বারিধারা জে-ব্লক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
তিনি জানান, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ভাটারা থানা এলাকায় চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারি গ্রেফতারের উদ্দেশে বিশেষ অভিযান চলাকালে থানার টহল টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে ভাটারা এলাকার ওয়ারেন্টভুক্ত চিহ্নিত চাঁদাবাজ মোবারক হোসেন নাফিজ তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে ভাটারা থানার বারিধারা জে-ব্লক এলাকায় ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায় করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ভাটারা থানার এএসআই মোঃ মেসবাহ উদ্দিনসহ থানার টহল টিম দ্রুত সেখানে পৌঁছায়।
চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের চেষ্টাকালে গ্রেফতারকৃত নাফিজ এএসআই মোঃ মেসবাহ উদ্দিনকে সুইচ গিয়ার চাকু ও হাতে থাকা স্টিলের কাটা চামচ দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তিনি বাম চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনে অনড় থেকে তিনি চাঁদাবাজ নাফিজকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এসময় নাফিজের সহযোগী ৪/৫ জন দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারের সময় নাফিজের কাছ থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু, একটি স্টিলের রক্তমাখা কাটা চামচ, বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত মোট এক হাজার ৭৫০ টাকা উদ্ধার ও গ্রেফতারকৃত নাফিজের পরিহিত রক্তমাখা শার্ট জব্দ করা হয়।
আহত এএসআই মোঃ মেসবাহ উদ্দিনকে প্রথমে বারিধারার স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। আহত মেসবাহ উদ্দিনকে দেখতে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ হাসপাতালে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। পাশাপাশি আইজিপিও তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।
মেসবাহর এই সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য তাকে বিপিএম (সাহসিকতা) পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন।
এছাড়া ডিএমপি কমিশনার শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী এএসআই মোঃ মেসবাহ উদ্দিনের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তা অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জন্য অনুকরণীয় বলে উল্লেখ করে তাৎক্ষনিক ২০ হাজার টাকা অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন এবং তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
গ্রেফতারকৃত নাফিজসহ তার পলাতক অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ভাটার থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন আহত পুলিশ সদস্য মেসবাহ।
ভাটারা থানা সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত নাফিজ ভাটারা এলাকার একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী। সে ও তার সহযোগীরা কিছুদিন যাবৎ ভাটারা থানা এলাকার ফুটপাতের দোকান থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছিল। পুলিশের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, নাফিজ ভাটারা থানার একটি ছিনতাই মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।
আহত এএসআই মেসবাহ উদ্দিন বলেন, জনগণের জান-মাল রক্ষায় সবসময় আমি আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। গতকাল প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির সংবাদ পেয়ে চিহ্নিত চাঁদাবাজ মোঃ মোবারক হোসেন নাফিজকে গ্রেফতারে ছুটে যাই। সে একজন ভয়ংকর ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজ। আমার চোখের উপর গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে গ্রেফতারে আমি অনড় ছিলাম। অবশেষে সংগীয় পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। ভবিষ্যতেও যে কোন পরিস্থিতিতে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সর্বদা তৎপর থাকবো।
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার নিবিড় তদন্ত ও পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।