গ্রামীণ ব্যাংকের দৈনিক ভিত্তিক পিয়ন কাম গার্ডদের চাকরি স্থায়ীকরণ, শ্রম আইন অনুযায়ী সব সুবিধাদি প্রদান, আন্দোলন সংগঠন করার কারণে শাস্তিমূলক বদলি চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ ও ৫ দফা দাবি জানিয়েছে কর্মচারীরা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
ব্যাংকটিতে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘ ৩২ বছর যাবৎ দৈনিক ভিত্তিতে তারা কাজ করে আসছেন। কিন্তু তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়নি। এসব কর্মচারীরা ১৯৯২ সাল থেকে গ্রামীণ ব্যাংকে নির্যাতিত ও বৈষম্যের শিকার। গ্রামীণ ব্যাংক একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের সরকারি ছুটি, ব্যাংকিং ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি এমনকি ঈদ-পূজাতেও কোন ছুটি নেই।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফরিদপুর জোনে কর্মরত আহসান হাবিব বলেন, ব্যাংকের বৈষম্য দূর করতে ২০১২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আমরা আন্দোলন করে আসছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি পেশ, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, সুধী সমাবেশ, সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। ২০১৫ সালে গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকেও আমাদের দাবি জানাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম উপদেষ্টা বরাবর আমরা বেশ কয়েকবার দাবি তুলে ধরেছি। আমরা আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠানে ৪০টি জোনাল অফিসের জোনাল ম্যানেজার, কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তুলে ধরেছি। ২০১৮ সালের জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। প্রধান কার্যালয়ে কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশি আক্রমণের শিকার হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক দেশের একটি সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। দেশের আর কোন এনজিও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তর্ভূক্ত নয়। আমরা এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলি। আমরা কাজ করলে মজুরি পাই, না করলে নাই। তারপরও প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে নানাভাবে শোষণ করে। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী বিদায়কালীন পেনশন দেয়ার কথা বলে প্রতি মাসে ৪ হাজার ৩০০ টাকা করে জমা করা হয়। যার পরিমাণ বছরে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৬০০ টাকা। আমাদের ২০ বছর চাকরি হলে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠান সার্কুলার জারি করেছে আমরা ২০ বছর চাকরি করলে আমাদেরকে ৫ লক্ষ টাকা দেবে। এই সামান্য টাকা নিয়ে আমরা কি করব?
এসময় তারা ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো-
অবিলম্বে দৈনিক ভিত্তিতে পিয়ন-কাম-গার্ড হিসেবে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়োগের ৯ মাস পর থেকে সার্কুলার অনুযায়ী স্থায়ীকরণ এবং আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছে তাদেরও চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে, নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র, সবেতনে সব প্রাপ্ত ছুটি, বোনাস সহ বাংলাদেশের শ্রম আইন ও আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী প্রাপ্ত অধিকার দিতে হবে, গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরিবিধি অনুযায়ী মাসিক বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ঋণ সুবিধাসহ সামাজিক নিরাপত্তার যাবতীয় সুবিধা দিতে হবে, আন্দোলন ও সংগঠন দমনে শাস্তিমূলক ছাঁটাই, বদলি বন্ধ করতে হবে। আন্দোলনের কারণে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল করতে হবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করতে হবে, চাকরি স্থায়ীকরণ করে নিয়োগের শুরু থেকে অদ্যাবধি সব প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে।
আগামী ১ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলা ও জোন পর্যায়ে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তারা৷ আগামী ৭ দিনের মধ্যো চাকরি স্থায়ীকরণে কর্তৃপক্ষ যদি কোন পদক্ষেপ না নেন তাহলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের হুশিয়ারি দেন তারা৷
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিকভাবে তার সুখ্যাতিও আছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান যার কর্মচারীদের কোন নিরাপত্তা নাই। এটা বাংলাদেশের অনেক মানুষ জানে না আন্তর্জাতিক ভাবেও জানে না। এটা অবিশ্বাস্য যে এরকম একটা খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের সাথে এত বৈষম্য এবং অনিয়ম হয়।
তিনি বলেন, আজকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা যেসব বিষয় উপস্থাপন করেছে সেই অবস্থা যে এখনো অব্যাহত আছে আমি তার নিন্দা জানাই। তারা যে দাবিগুলো করেছেন তার প্রতি আমি পূর্ণ সমর্থন জানাই। এই দাবিগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের যেহেতু যুক্ত আছে, প্রধান উপদেষ্টা নিজেরাও এসব বিষয়ে জানার কথা তাদের সবাইকে নিয়ে অবিলম্বে যারা এত বছর ধরে কাজ করছেন তাদের নিয়োগ স্থায়ীকরণ করা, এতদিন যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় নাই সেই সব সুযোগ সুবিধা যেন পূর্ণভাবে পরিষদ হয় সেটার ব্যবস্থা করা এবং হামলা-হুমকির পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ ব্যাংক চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন আল মামুন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়াসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।