রাঙামাটির সাজেকে রহস্যজনকভাবে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে প্রায় দেড় শতাধিক রিসোর্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে অবকাশ রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানা যায়। মুহুর্তেই আগুন আশপাশের রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যানুসারে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি, পুলিশসহ স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় ৫ ঘন্টা পর আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এই সময়ে প্রায় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে করে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, আজ দুপুর ১.১৫ ঘটিকায় সাজেক পর্যটন এলাকায় শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে সাজেক অবকাশ ম্যানুয়েল রিসোর্টসহ পার্শ্ববর্তী রিসোর্টে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে মর্মে ধারণা করা হয়। আগুন মুহুর্তেই আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনা অবহিত হবার সাথে সাথে দ্রুত আগুন নির্বাপনের জন্য রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর রিজিয়ন কমান্ডার, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার, খাগড়াছড়ি জোন কমান্ডার, বাগাইহাট এবং খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগক্রমে করে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, বিকেল পর্যন্ত আগুনে সাজেকের একপাশ প্রায় পুড়ে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ১৪০ টির বেশি রিসোর্ট, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি আগুনে পুড়ে গেছে মর্মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয়দের নিকট হতে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আকতার জানান, দুপুরের দিকে সাজেকের একটি রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। সাজেকে দমকল বাহিনীর কোনো ইউনিট না থাকায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস রওনা হয়।
ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ খায়রুল আমিন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও আটকে পড়া পর্যটকদের অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করেছি।
দীর্ঘদিন স্থানীয়রা দাবি জানিয়ে আসলেও রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ফায়ার সার্ভিস অফিস স্থাপন না হওয়ার পাশাপাশি সাজেকের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্রকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় মাত্র এক সপ্তাহের মাঝেই দুই বার আগুন লাগার ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে অত্রাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এদিকে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সাজেকের ব্যবসায়িদের কাছে স্থানীয় আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো কয়েকদিন ধরেই। সে চাঁদা নাপেয়ে পাহাড়ি আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা এই আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে বলেও ধারণা করছে নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়াও কয়েকদিন আগে রাঙামাটির নানিয়ারচরের একটি ঘরেও রহস্যজনক আগুন ধরাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উষ্কানি সৃষ্টির চেষ্ঠাও করছে পার্বত্য চুক্তি বিরোধী একটি আঞ্চলিকদলীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।