শনিবার পর্দা উঠছে অমর একুশে বইমেলার
-
-
|

শনিবার পর্দা উঠছে অমর একুশে বইমেলার
বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অমর একুশে বইমেলা। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে এই মেলা। তাই বইমেলকে ঘিরে প্রকাশনাগুলো সেরে নিচ্ছেন শেষ মুহূর্তের কাজ।
গত বছরের তুলনায় এবার মেলার আকার বেড়েছে, বেড়েছে স্টলের সংখ্যাও। গত বছর যেখানে বইমেলায় ৬৪২টি প্রতিষ্ঠানের ইউনিট ছিল ৯৪৬টি সেখানে এবার মোট ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে এক হাজার ৮৪ ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে বাড়ছে না প্যাভিলিয়ন সংখ্যা। গত বছরের ন্যায় এবারও থাকছে ৩৭টি প্যাভিলিয়ন।
এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছের গাছতলায় করা হয়েছে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। সেখানে ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুচত্বরে ৭৪টি প্রতিষ্ঠানকে ১২০ ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতিপাদ্য ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নে শুরু হতে যাওয়া এইবারের বইমেলায় রাখা হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’। থাকছে ৫২-র ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের নামও।

সরেজমিনে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশনীগুলো তাদের শেষ মুহূর্তের কাজ সেরে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্টলগুলোর ভিত্তি দাঁড়িয়ে গেলেও রঙ করা, বইয়ের তাকগুলো ঠিক করা, বইগুলো শেষ মুহূর্তের জন্য সর্টিং করে নেয়াসহ এমন নানা কাজে ব্যস্ত দেখা যায় প্রকাশক থেকে বিক্রেতা সবাইকে।
এদিন অধিকাংশ স্টলগুলো তাদের স্ট্রাকচারের কাজ সম্পন্ন করে কিছু বাহ্যিক সৌন্দর্য বর্ধন ও বইয়ের সর্টিংয়ের কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। যে সব স্টলের কাজ কিছুটা বাকি আছে তারাও তাড়া দিচ্ছিলেন দ্রুত কাজ শেষ করার। প্যাভিলিয়নগুলোতে ছিলো বই গোছানোর তাড়া আর ছোট প্রকাশনীগুলো তাদের শেষ মুহূর্তের স্টল গোছানোর কাজ।
এসময় দিব্যপ্রকাশের স্টলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, স্টলের কাজের সঙ্গে শেষ হয়েছে বই গোছানোর কাজও। স্টলের ভেতরে বসে গল্প করছিলেন দুই বিক্রেতা। বইমেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন কতটা এগিয়েছে জানতে চাইলে বিক্রেতা মিহির বলেন, আমাদের সব কাজ শেষ। আগামীকাল মেলার পর্দা উঠার অপেক্ষায়। মেলার প্রথম দিন থেকেই যেন সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত থাকতে সেভাবেই আমাদের কাজ করা হয়েছে।
প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন মিলে কাজ বই গোছানোতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন ইত্যাদি প্রকাশনীতে। স্টলের কাজ শেষ, এখন বিক্রয়ের জন্য চারদিকে সাজিয়ে রাখছেন বইগুলো। বাড়তি বইগুলো রাখছিলেন নিচের তাকে। প্রকাশনীটির বড় প্যাভিলিয়ন, বইও বেশি তাই ব্যস্ততাও ছিলো চোখে পড়ার মত।

আগামীকালের মেলায় ক্রেতাদের কাজে নিজেদের তুলে ধরতে কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে ইত্যাদি প্রকাশনীর মার্কেটিং রিপ্রেজেনটেটিভ আতাউল হোসেন সবুজ বলেন, দেখতেই পারছেন আমাদের প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ। বইও সব চলে আসছে। এখন ক্রেতাদের জন্য বই সর্টিং ও সাজিয়ে রাখার কাজগুলো সেরে নিচ্ছি। আগামীকাল ক্রেতাদের স্বাগত জানাতে আমরা প্রস্তুত।
অনন্যা প্রকাশনীর ম্যানেজার ফারুক বলেন, এবার আমাদের সব কাজ ভালভাবেই এগিয়েছে। কাল থেকে মেলা শুরু হচ্ছে, আমাদেরও সব কাজ শেষ। এবার পুরনো সব বইয়ের পাশাপাশি প্রায় আরও ৫০ থেকে ৬০টি নতুন বই প্রকাশ হবে। আশা করি বই প্রেমীরা তাদের পছন্দের বই আমাদের এখানে খুঁজে পাবেন।
বইমেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন জানান, এবার বইমেলা নিয়ে আমরা অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত, আশাবাদী। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে, স্টল বেড়েছে, মেলার আয়তন বেড়েছে। আশা করি নতুন বইও বেশি আসবে। এবার একটা পরিবর্তনের আকাঙ্খা আছে মানুষের মধ্যে। সেই আকাঙ্খাকে ধারণ করেই এবারের বইমেলা। আশা করি এবার উৎসবে মানুষের ঢল নামবে। প্রকাশনা আর সাহিত্যে লাগবে পরিবর্তনের ছোঁয়া। আমরা অনেক বেশি আশাবাদী।
উল্লেখ্য, গত বছর তিন হাজার ৭৫১টি বই প্রকাশিত হয়। যেখানে বিক্রি হয় ৬০ কোটি টাকার বই। দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিলো ৬০ লাখের কাছাকাছি। এবার ইতোমধ্যে বইমেলার জন্য মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৬০০টি বইয়ের। আশা প্রকাশ করা হচ্ছে, এবার বই প্রকাশনা ও দর্শনার্থীদের আগমণ সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে গত বছরকেও।