চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ছিনতাই

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরায় সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে ঝিলিম ইউনিয়নের আমনুরা বাইপাস মোড় সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে তিনজনের কাছ থেকেই ৬৭ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থল সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে- রাত সোয়া ৯টার কিছু পরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ৪ থেকে ৫ জনের একটি ছিনতাইকারী দল একে একে ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনে ছিনতাই করে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তানোরগামী একটি ট্রাকের গতিরোধ করে ছিনতাইকারীরা। ট্রাকটি থামালে ছিনতাইকারীরা চালককে মারধরে ১২ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর সেখানে আসে মাছবাহী একটি গাড়ি। ওই গাড়ির চাললকেও মারধর করে ছিনিয়ে নেয়া হয় ৪৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার এক প্রতিবন্ধী চালককের কাছ থেকেও ১০ হাজার টাকা, একটি স্মার্টফোন ও একটি ফিচার ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ছিনতাইয়ের শিকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক সদর উপজেলার কালীনগরে অশিক বর্মণ বলেন, ছিনতাইকারীদের হাতে ছিল হাঁসুয়া, রড, লাঠিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র। রেল লাইনের ওপর থেকে আমাদের দাঁড়াতে বলে তারা। কাছে এসেই শুরু করে মারধর। আমরা সবাই তাদের মারধর থেকে বাঁচার জন্য বাঁধা দিচ্ছিলাম। তিনি আরও বলেন, আমার অটোতে ছিল ৯জন যাত্রী। ছিনতাইকারীরা আমাদের প্রত্যেক যাত্রীকে বেধড়ক মেরেছেন। আমার কাছে থাকা একটি ব্যাগে নগদ ১০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ছিল। সেগুলো তারা নিয়ে গেছে। এছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল কেড়ে নিয়েছে তারা। তিনি এসবের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, রাতে শুয়ে থাকার সময় মানুষজন চেচামেচি শুনতে পেয়ে ঘর থেকে বের হলাম। দেখি অনেক লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছেন। আমিও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলাম রেল লাইনের স্লিপার দিয়ে রাস্তা ব্যারিকেড দেয়া আছে। আর সেখানে ট্রাকসহ অন্যান্য কিছু বাহন দাঁড়িয়ে ছিল। ব্যারিকেড দিয়ে ৫ জনের একটি দল লাঠিসোঠা হাতে নিয়ে ছিনতাই করে পালিয়েছে। পরে তাদের ধরার জন্য অনেকেই চেষ্টা করলে পারা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, জায়গাটিতে গত ১৩ জানুয়ারি কলাগাছ রাস্তায় ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পরপর এমন ঘটনার কারণে এলাকাবাসী আতঙ্কিত।

কাওসার আলী নামে আরেকজন বলেন, ঘটনার পরপরই আমনুরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে খবর দেয়া হয়। সেখান থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ আসে। কিন্তু ছিনতাইয়ের জায়গাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে তারা চলে যায়। পরে মণ্ডুমালা তদনত কেন্দ্র থেকে পুলিশ আসে। সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং চলে যায়। যতক্ষণ ঘটনাস্থলে মন্ডুমালার পুলিশ ছিল, ততোক্ষনই বলেছে জায়গাটি চাঁপাইয়ের মধ্যে পড়ে।

তৌহিদুল ইসলাম নামে একব্যক্তি বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা যেখানে ঘটেছে সেটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে পড়ে। কিন্তু পুলিশ এসে শুধু ঘটনা শুনে চলে গেছে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

ঝিলিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার মধ্যেই। একই রাতে এতগুলো মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি এই এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। কিছু এলাকায় মানুষ নিজ থেকে পাহারা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে আমনুরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক শাহিনুর রহমান বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আমাদের এলাকায় না। জায়গাটি তানোরের মধ্যে পড়ে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. রইস উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলটি তানোরের মধ্যে পড়ে। সেখানকার ওসির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা না, তবে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিল।

তিন জনের কাছ থেকে নগদ ৬৭ হাজার টাকাসহ আর কয়েকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

তানোর থানার ওসি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা যেখানে হয়েছে সেটি আমাদের মধ্যে পড়ে না। যদিও খবর শুনে পুলিশ পাঠিয়ে ছিলাম। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ মানুষজনের কথা শুনে এসেছে।