জঙ্গি আস্তানার কারও সাথেই সুসম্পর্ক ছিল না প্রতিবেশীদের
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি টিন শেডের বাড়িতে অবস্থিত জঙ্গি আস্তানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এদিকে, মধ্যরাতেই জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বাড়িটির কেয়ারটেকার সোহাগ ও মসজিদের ইমামকে আটক করা হয়।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৩ টা থেকে এ অভিযান পরিচালনা শুরু হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, পহেলা এপ্রিল মোহাম্মদপুরের বসিলায় দু চালা একটি টিন শেডের বাসা ভাড়া নেয় নিহত দুই জঙ্গি। মালিক আব্দুল ওহাবের কাছে নিজেদের ভ্যান চালক পরিচয়ে বাসাটি ভাড়া নেয় দুই জঙ্গি। টিন শেডের এই বাসাটি দেখাশোনা করতেন মালিক ওহাব কর্তৃক নিয়োজিত কেয়ার টেকার সোহাগ। এছাড়াও সোহাগের সঙ্গে তার স্ত্রী মৌসুমি আর দুই ছেলে সেখানে বসবাস করতেন।
তবে এই টিন শেডের এই জঙ্গি আস্তানাটির বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশীরা জানান, পহেলা এপ্রিল বাসা ভাড়া নেয় ঐ দুই জঙ্গি। ভাড়া নেওয়ার পর থেকে তাদের এলাকায় খুব একটা দেখা যেত না। এছাড়া কেয়ারটেকার সোহাগ ও তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রতিবেশীদের তেমন সু-সম্পর্কও ছিল না।
জঙ্গি আস্তানাটির আশপাশে অবস্থিত বাসার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোহাগ দুই বছর ধরে তার পরিবার নিয়ে কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর আগে একটি ইট ভাটায় কাজ করতেন সোহাগ। এরপর ওহাবের ডিশ ব্যবসায়ে চাকরি নেন সোহাগ। সেখানে মাসে মাসে বিল তোলার কাজ করতেন তিনি।
আরও জানা গেছে, সোহাগের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশীদের তেমন ভালো সম্পর্ক ছিলনা। স্ত্রী মৌসুমি প্রতিবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা করলে সোহাগ তাকে বকাঝকা করতেন। সোহাগ মাদকাসক্ত ছিল বলেও প্রতিবেশীদের থেকে জানা গেছে।
জঙ্গি বাসার পশ্চিম পাশেই বসবাসরত মো.মিন্টু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি সারা দিন বাড়ির বাহিরে থাকি। ওই বাসায় কি হতো তা আমরা জানতাম না। এছাড়া সোহাগের সঙ্গে আমাদের তেমন কোনো কথাবার্তা হতো না। তারা মানুষের সঙ্গে খুব বেশি মিশতো না।’
এ বিষয়ে সাথী নামে আরেক প্রতিবেশী বার্তা২৪.কমকে জানান, মাঝে মধ্যে ওই বাড়ির মধ্যে আমাদের গরু ছাগল চলে গেলে আনতে যেতাম। তখন ভেতরে গেলে ওই বাড়ির লোকজন আমাদের দেখে তেমন বেশি কথা বলতেন না।’
জঙ্গিদের আস্তানা প্রসঙ্গে আশপাশের প্রতিবেশীরা বলেন, ‘বাড়িটিতে দুই তিন মাসে আগেও চার পাঁচটি কক্ষ ছিল। কিন্তু গত এক মাস আগে হঠাৎ করে কক্ষগুলো ভেঙে একটি মসজিদ বানানো হয়। ১০-১৫ দিন আগে মসজিদটিতে একটি মাইক লাগানো হয়। নামাজ পড়াতে একজন ইমামকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: ভেতরে জীবিত কেউ নেই, অবিস্ফোরিত আইইডি ছড়িয়ে ছিটিয়ে
তারা আরও জানান, মসজিদ বানানোর পর আরও দুইটি কক্ষ ছিল বাসাটিতে। কক্ষ দুইটির সামনে ছোট করে বারান্দা ছিল। একটি কক্ষে বাড়ির কেয়ারটেকার সোহাগ থাকতেন। বাকি আরেকটি কক্ষে পহেলা এপ্রিল একজনকে মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয় বলে তারা জেনেছেন। তবে ওই নতুন ভাড়াটিয়াকে প্রতিবেশীরা কোনো দিন দেখেনি বলেও জানান। কিন্তু মসজিদ হওয়ার পর বাড়িটিতে অপরিচিত লোকজন আসা যাওয়া করতেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে জঙ্গি আস্তানার বাসাটির প্রতিবেশী রহিমা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাসাটিতে সোহাগ ও তার স্ত্রী মৌসুমি আর দুই ছেলেকে ছাড়া আমরা কাউকে কোনদিন দেখিনি। তবে সোহাগের স্ত্রী মৌসুমি আমাকে বলেছিল এই মাসের ১ তারিখ একজনকে একটি রুমে মেস হিসেবে ভাড়া দিয়েছে। তবে ওই লোককে আমরা কোনো দিন এই এক মাসে দেখেনি, তার কথাও শুনিনি।’
আরও পড়ুন: জঙ্গি আস্তানায় আগুন
তিনি আরও বলেন, ‘তবে সোহাগের চলাফেরা কিছুটা অন্যরকম ছিল। সে সারা দিন ঘুমাতেন আর সারারাত সজাগ থেকে বাড়ির আশপাশে হাঁটাচলা করতেন। তবে সে কি কারণে এমন করতেন তা জানি না।’
এদিকে, জঙ্গি আস্তানাটির বিষয়ে রহিমা বেগমের মেয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থী মারিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এই বাসার মানুষের সঙ্গে কেউ বেশি মিশতেন না। তবে আগে জানতাম এখানে মেস ভাড়া দেয়া হয়েছে। কিন্তু মসজিদ হওয়ার পর সেখানে কেউ থাকেন তা জানতাম না। তবে কিছুদিন আগে জানতে পারি ওই খানে নাকি একজন অপরিচিত লোক ভাড়া উঠেছে। এর বেশি এই বাড়ির সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা।’
আরও পড়ুন: কমপক্ষে দুই জঙ্গি নিহত: র্যাব ডিজি