ভয়ঙ্কর 'ফোনি' ওড়িশায় আঘাত হানবে, বাংলাদেশেও প্রভাব পড়বে
ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ফোনি দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ভারতের ওড়িশায় আঘাত হানতে পারে। তবে বাংলাদেশর উপকূলীয় অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়বে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত ৯ টা ঘূর্ণিঝড় ফোনি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় এক হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার ঝড়ো হাওয়া ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারাদেশে রোদ আর মেঘের উঁকি লক্ষ করা যায়। সমুদ্রবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে। এরপরও সহনীয় মাত্রায় ছিল না গরমের প্রখরতা।
সোমবার রাজশাহীতে এবারের মওসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। আর মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ২০ দশমিক ৬। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুস বা র্তা২৪.কমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফোনি ভয়ংকর আকারে রূপ নিয়েছে। দ্রুত গতিতে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। ফোনি ওড়িশায় আঘাত হানলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব রয়েছে। আগামী শনিবার (৪ মে) অথবা রোববার (৫ মে) আঘাত হানতে পারে। তাই উপকূলীয় অঞ্চলবাসীদের সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি আরও জানান, সমুদ্রবন্দরে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সতর্ক দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হলেও ঘূর্ণিঝড় ফোনির প্রভাবে দু-একদিনের মধ্যে সারাদেশে ঝড়ো হওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আগামী ২ অথবা ৩ মে থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দেশের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া, ডিমলায় ২১ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা ও যশোরে ৩৭ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল গোপালগঞ্জে ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকায় সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ আটক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিল ২৬ দুই ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, ফরিদপুর, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, মংলা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ফোনি অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল হয়ে ওড়িশা উপকূলের কাছে এসে শক্তিক্ষয় হবে । এর জেরে বুধবার (১ মে) থেকে ঝড়বৃষ্টি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ৷ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কালবৈশাখীর সম্ভাবনা । ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।