দেশের বাজারে মোট ৩৪টি নিতপণ্যের মধ্যে গত পাঁচ বছরে সবেচেয়ে বেশি ৩১০ শতাংশ বেড়েছে রসুনের দাম। একই সময়ে আদার দাম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৫ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম ১৬৭ শতাংশ ও চিনির দাম ১৫২ শতাংশ বেড়েছে।
এর বাইরে পামওয়েল, শুকনা মরিচ ও মসুর ডালসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম পাঁচ বছরে শতভাগ বেড়েছে বলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার (২ জুন) সিপিডির কার্যালয়ে ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এই পর্যালোচনাটি তুলে ধরেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে মাছের দাম মাত্র ১০ শতাংশ কমেছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির এই হার আলোচনায় থাকা ৩৪ পণ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন। স্থিতিশীল থাকা পণ্যগুলোর মধ্যে চালের দাম পাঁচ বছরে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
এ সময় মোয়াজ্জেম বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, ব্যবসায়ীদের মুনাফালোভী প্রবণতা ও প্রতিযোগিতার অভাবে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির কারণে বেশ কিছু নিত্যপণ্য বিলাসী পণ্যে পরিণত হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া প্রতি কেজি দেশি রসুনের দাম মে মাসে ২০৫ টাকায় উঠেছে। এ সময়ে প্রতি কেজি রসুনের দাম ১৫৫ টাকা বা ৩১০ শতাংশ বেড়েছে।
একই সময়ে আমদানি করা রসুনের দাম ৭০ টাকা থেকে ২১১ শতাংশ বেড়ে ২২৫ টাকায় উঠেছে বলে জানান মোয়াজ্জেম।
মে মাসে প্রতি কেজি আদার দাম ৩৩৫ টাকায় উঠেছে জানিয়ে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পাঁচ বছর আগে পণ্যটির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১১০ টাকা। এ হিসাবে আদার দাম কেজিতে ২২৫ টাকা বা ২০৫ শতাংশ বেড়েছে।
আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। আর দেশি পেয়াঁজের দাম ২৭ দশমিক ৫ টাকা থেকে একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৫ টাকায়। মানভেদে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৪ থেকে ১৬৭ শতাংশ।
৫২ টাকা কেজি দরের চিনি ১৫২ শতাংশ বেড়ে ১৩০ টাকায় উঠেছে বলে জানিয়েছে সিপিডি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম মাত্র ৩৯ টাকা। বিশ্বাজার (৫০ টাকা) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের (৯০ টাকা) তুলনায়ও বাংলাদেশে চিনির দাম অনেক বেশি।
৬৩ টাকা লিটারের খোলা পাম তেলের দাম ১০৬ শতাংশ বেড়ে ১৩০ টাকায় উঠেছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। ৬৮ টাকার পাম সুপার তেলের দাম একই হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ টাকায়।
২০১৯ সালে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শুকনা মরিচের দাম ১০৫ শতাংশ বেড়ে ৪১০ টাকায় উঠেছে বলে জানিয়েছে সিপিডি। এ সময়ে মোটা দানার মসুর ডালের দাম ৫৫ টাকা থেকে ৯৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজি ১০৮ টাকায়।
পাঁচ বছরে গুড়ো দুধের দাম ব্র্যান্ডভেদে ৪৩ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে সিপিডি। এর মধ্যে ডানো ব্র্যান্ডের দুধের দাম ৫৬৫ টাকা থেকে ৪৩ শতাংশ বেড়ে কেজি দাঁড়িয়েছে ৮১০ টাকায়। আর ফ্রেশ ব্র্যান্ডের দুধের দাম ৪৪০ টাকা থেকে ৮০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯০ টাকা।
এর বাইরে হলুদ গুড়ার দাম পাঁচ বছরে ৭০ শতাংশ, ময়দার দাম ৬০ শতাংশ, বয়লার মুরগির দাম ৫৯ শতাংশ, গরুর মাংসের দাম ৫৮ শতাংশ ও বোতলজাত সয়াবিনের দাম ৫৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে সিপিডি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম বেড়েছে রুই মাছের দাম। ২০১৯ সালে ৩১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পণ্যটি এখন বাজারে পাওয়া যায় ৩৪০ টাকা কেজি দরে। এ হিসেবে রুই মাছের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে পাঁচ বছরে।
তালিকায় নিচের দিকে থাকা পাইজাম চালের দাম ১৫ শতাংশ, মিনিকেট চালের দাম ১৭ শতাংশ এবং মোটা চাল ও লবণের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে পাঁচ বছরে।