বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ: প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বাণী



News Creator

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রথম বণিজ্যিক স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর সফল উৎক্ষেপণের মধ্যে দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশের মহাকাশ যুগের সূচনা হল।     

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয় মহাকাশের পথে। মোটামুটি আধা ঘণ্টার মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে।

স্পেসএক্সের লাইভ ওয়েবকাস্টের মধ্যেই ধারণ করা এক ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম। প্রবেশ করলাম নতুন যুগে।”

বাংলাদেশের এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হল কেনেডি স্পেস সেন্টারের সেই ‘৩৯-এ’ লঞ্চ কমপ্লেক্স থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাপোলো-১১’ মহাকাশযানটি মানুষকে পৌঁছে দিয়েছিল চাঁদে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ১। বাংলাদেশ সরকারের একটি মনোগ্রামও সেখানে রয়েছে।

উৎক্ষেপণের দেড় মিনিটের মাথায় ফ্যালকন-৯ ম্যাক্স কিউ অতিক্রম করে। নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে রকেটের স্টেজ-১ খুলে যাওয়ার পর স্টেজ-২ কাজ শুরু করে।

পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ এরপর সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং অবতরণ করে আটলান্টিকে ভাসমান ড্রোন শিপে।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সে সময় বলেন, “সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবেই কক্ষপথের দিকে যাত্রা করেছে।”

উৎক্ষেপণের মোটামুটি সাড়ে ৩৩ মিনিটের মাথায় বঙ্গবন্ধু-১ পৌঁছে যায় জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে। রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মহাশূন্যে গা ভাসায় বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। জিওস্টেশনারি ট্রান্সফার অরবিটে স্থাপিত হয়েছে আমাদের স্যাটেলাইট।”

রকেট থেকে উন্মুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু-১ এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মহাকাশের ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নিজস্ব অরবিটাল স্লটে স্থাপিত হবে এই কৃত্রিম উপগ্রহ।

 তবে অরবিটাল স্লটে স্যাটেলাইটকে বসিয়ে কাজ শুরু করতে সময় লাগবে প্রায় দুই মাস। তখন গাজীপুরের জয়দেবপুর আর রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশন থেকেই এর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে কক্ষপথকে চিহ্নিত করা হয় তিনভাবে। এগুলো হল লো আর্থ অরবিট (এলইও), জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিট (জিইও) এবং মিডিয়াম আর্থ অরবিট (এমইও)। সব কাজ শেষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হবে ‘জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটের’ একটি কৃত্রিম উপগ্রহ।  

জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট হল এমন একটি কৃত্রিম উপগ্রহ যেটি নিরক্ষ রেখা বরাবর ওই কক্ষপথে থেকে পৃথিবীকে ২৪ ঘণ্টায় একবার প্রদক্ষিণ করবে। এই প্রদক্ষিণ হবে পৃথিবীর আবর্তনের দিকে, অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বে। ফলে গ্রাউন্ড স্টেশনের সাপেক্ষে উপগ্রহটি থাকবে প্রায় স্থির। এ কারণেই ‘জিওস্টেশনারি’ শব্দটি এসেছে।

স্পেসএক্সের ইউটিউব চ্যানেলে এই উৎক্ষেপণের ‘লাইভ  স্ট্রিমিং’ দেখানো হয়। আর  রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি ওই উৎক্ষেপণ সরাসরি সম্প্রচার করে। টেলিভিশন আর কম্পিউটারে চোখ রেখে ইতিহাসের সাক্ষী হয় রাত জাগা মানুষ।

সফল উৎক্ষেপণ শেষে রকেট ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ আটলান্টিকের বুকে ভেসে থাকা ড্রোন জাহাজে সফলভাবে অবতরণ করেছে।

এই উৎক্ষেপণের দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে তুলে দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের ‘অফ কোর্স আই স্টিল লাভ ইউ’ নামে ড্রোন শিপে সফলভাবে অবতরণ করেছে রকেটটি।

লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপণের আট মিনিট ৪৫ সেকেন্ড পর দুই স্টেজের এই রকেটটির স্টেজ-১ পৃথিবীতে ফিরে আসে। তার আগে আড়াই মিনিটের মাথায় স্টেজ-১ ‍ও স্টেজ-২ আলাদা হয়।

স্টেজ-২ এরপর ৩৩ মিনিটের মধ্যে কক্ষপথে স্থাপন করে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহটিকে; স্টেজ-১ ফিরে আসে পৃথিবীতে।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের এই দিনকে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি দিন অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ আমরাও স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম। প্রবেশ করলাম এক নতুন যুগে।

“এখন মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন হবে।”

বাংলাদেশের জাতির জনকের নামাঙ্কিত এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা কমিউনিকেশন সেবা পাওয়া যাবে।

 এই স্যাটেলাইটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তাজিকস্তান, কাজাকস্তান ও উজবেকিস্তানের অংশ বিশেষে সেবা প্রদান করা সম্ভব বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিতেন। 

মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, এটি গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা।

“আজকের দিনটি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের। এখন থেকে বাংলাদেশ হবে স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য। মহাকাশে এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হল।”

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, স্যাটেলাই উৎক্ষেপণের সময় রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবন থেকে টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচার দেখেন।

রাষ্ট্রপতি এই ক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বর্তমান সরকার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত ও সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে ক্যাবলের পাশাপাশি স্যাটেলাইট সেবা সংযোজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ছিল অপরিহার্য।

“বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের ফলে দেশের ব্রডকাস্টিং ও টেলিযোগাযোগ সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস। ব্রডকাস্টিং ও টেলিকমিউনিকেশনে পরনির্ভরশীলতা পরিহার করে আমরা এই সেক্টরে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হবো।”

রাষ্ট্রপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসি, স্যাটেলাইট প্রকল্প এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এই স্যাটেলাইট নির্মাণ, উৎক্ষেপণের সঙ্গে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানান।

   

সাতক্ষীরায় সাপের কামড়ে সাত বছরের শিশুর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সাপের কামড়ে শারাফাত হোসেন সিফাত নামে সাত বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া (ক্লাব মোড়) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সিফাত সাতক্ষীরা শহরের শাহিন আলমের ছেলে। তবে, বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় সিফাত এবং তার মা আটুলিয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া (ক্লাব মোড়) এলাকায় তার নানা মোস্তফা মোল্লার বাড়িতে থাকতেন।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মা তাকে হাঁস-মুরগি ঘরে উঠেছে কিনা দেখতে বললে সে তা দেখতে যায়। এসময় মুরগির ঘরের পাশের চালা (গর্ত) থেকে একটি সাপ এসে তাকে দংশন করে। প্রথমে স্থানীয় ওঝার মাধ্যমে তাকে গ্রাম্য চিকিৎসা দেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত ৮টার দিকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

ইউপি সদস্য মো. রবিউল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়েছে।

;

ঢাকার বাতাস আজও খুব 'অস্বাস্থ্যকর'



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দিন দিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়েই চলেছে বায়ুদূষণ। দীর্ঘদিন ধরেই মেগাসিটি ঢাকার বাতাসেও বাড়ছে দূষণ। শুক্রবার (১৭ মে) সকালে ঢাকার বাতাসে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। যদিও সবচেয়ে বেশি দূষণ কঙ্গোর কিনশাসা শহরের বাতাসে।

এদিন সকাল ১০টার দিকে আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, ১৪৮ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা, যা সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত।

দূষিত শহরের তালিকায় ১৭৩ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে চিয়াং মাই। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতের শহর দিল্লির স্কোর ১৭২। আর ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে আছে যথাক্রমে জার্মানির শহর মিউনিখ ও নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরের স্কোর ১৫৫।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়; আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু বলে মনে করা হয়।

২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বায়ুদূষণ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে। এটা সব বয়সি মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ খুবই ক্ষতিকর।

;

নীলফামারীতে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার 



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে অমিচা বেওয়া (৫৬) নামে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।  

বৃহস্পতিবার (১৬মে) তার নিজ বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত বৃদ্ধ উপজেলার কালিকাপুর হাজি পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত বৃদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে পেট ব্যথাজনিত রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার তার প্রচণ্ড পেট ব্যথা উঠলে সহ্য করতে না পেরে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেন। পরে স্বজনরা তার মরদেহ ঝুলতে দেখে পুলিশে খবর দেয় পুলিশ এসে উদ্ধার করে। 

থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। 

;

টেস্ট করাতে টানাটানি, আনসারদের দৌরাত্ম্যে বেহাল হাসপাতাল



রাকিব হাসান, গুলশান জাহান সারিকা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

"দ্য গুড ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য ডিজিস, দ্য গ্রেট ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য পেশেন্ট হু হ্যাজ দ্যা ডিজিসেজ" স্যার উইলিয়াম অসলারের উক্তিটি আর যে কোনোভাবেই দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়, তা বলা বাহুল্য। এখানে হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতেই জেরবার হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পদে পদে হতে হচ্ছে হয়রানি আর প্রতারণার শিকার। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পরপর দুই দিন সরেজমিন দেখে এর প্রমাণ মিলেছে। 

১৫ মে বুধবার সকাল ১১টা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শিউলি বেগম। এখানে এসে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে। প্রথমে দীর্ঘ সিরিয়াল দাঁড়িয়ে টিকেট কেটেও দীর্ঘ অপেক্ষা। অবশেষে ডাক্তার দেখাতে পারলেও তার দেয়া টেস্টের একটি বড় তালিকা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন শিউলি। এতসব নানা রকমের টেস্ট! কোথায় করবেন কিভাবে করবেন তার কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া তিনি পাননি হাসপাতাল থেকে। কিন্তু হাজির আনসার সদস্যরা। হাসপাতালের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাই এখন টেস্ট বাণিজ্যের দালাল। রোগীর হাতে টেস্টের কাগজপত্র দেখলেই আনসার সদস্যরা শুরু করে দেয় ডাকাডাকি- টানাটানি। 

নিজেদের মধ্যেই চলে পাল্লাপাল্লি। কোন রোগীকে কে কব্জা করবে। যেখানে রোগীর লাইন, সেখানেই আনসারের দৌরাত্ম। টিকেট কাটতে আসা রোগীদের ভীর ঠেলে আনসার ঢুকে যাচ্ছে কারো জন্য লাইন ভেঙ্গে টিকেট কেটে দিয়ে টুপাইস কামিয়ে নিচ্ছে। ডাক্তার দেখানোর সিরিয়ালেও তারা হানা দিচ্ছে। টাকা নিয়ে পড়ে আসা রোগীকে আগে সিরিয়াল পাইয়ে দিচ্ছে। ইমার্জেন্সি বিভাগে আসা রোগীদের ক্ষেত্রেও তাদের দৌরাত্ম দেখা গেলো। গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরও পেছনে ফেলে আনসারের আনা রোগীদের আগে দেখা হচ্ছে। আর এসব দেখার কেউ নেই। 

কোন কোনো রোগীর স্বজনদের দাবি, আনসার সদস্যদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলে কটাক্ষ আর গালাগাল শুনতে হয় তাদের। 

এখানেই শেষ নয়, হাসপাতালের কর্মচারী আর আনসারদের যোগসাজশে চলছে ট্রলি কিংবা হুইলচেয়ারের বাণিজ্যও। সরকারের এসব সামগ্রী রোগীর জন্য বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা হলেও তা চলে গেছে এইসব অসাধুদের দখলে। তারা সেগুলো কব্জায় রেছে রোগী বুঝে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে ছাড়ছে। রোগী পৌঁছালেই তারা শুরু করে দেয় ট্রলি নিয়ে দরকষাকষী। কেউ টাকা না দিলে তাদের রোগীকে ছুয়ে পর্যন্ত দেখে না কর্মচারীরা। আর যদি কোনো রোগীর স্বজন সামান্য প্রতিবাদও করে তাহলে তাদের কপালে জোটে দুর্ব্যবহার। 

পরিচয় গোপন রেখে ইমার্জেন্সি বিভাগে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্য আ: হাই এর সাথে কথা বলে জানা যায় এম্বুলেন্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টসহ প্রায় সকল সার্ভিস তিনি দিতে পারবেন। 

অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যাবে কি-না? এমন প্রশ্নে বললেন, হাসপাতালের মাত্র একটা এম্বুলেন্স সেইটা কই আছে জানিনা। তবে যদি কেউ প্রাইভেট এম্বুলেন্স চায় তাহলে যেকোনো সময় তিনি ম্যানেজ করে দিতে পারি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলের ভাড়া কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫০০-১৬০০ টাকা হলেই চলবে। 

আনসার সদস্য আ: হাইকে দেখা গেলো একজন রোগীর আত্মীয়র সঙ্গে তার ব্যস্ত সময় কাটছে। রোগীর ব্যবস্থাপত্র /টেস্টের তালিকার ছবি তুলে হাসপাতালের কোন একজন প্যাথলজিষ্টকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দিলেন। উল্টো দিক থেকে জেনে নিচ্ছেন তার খরচ কতো ইত্যাদি। যেনো তিনিই রোগীর সবকিছু। 

হাসপাতালে কি এসবের ব্যবস্থা নেই? এমন প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মীর সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন, প্রতিদিন সকালে মাত্র ৫০ জন রোগীর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয় হাসপাতালে। তবে নানা রকমের সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে হাতে গোনা কয়েকটি ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট ছাড়া বাকি সব টেস্ট বাইরে থেকেই করতে হয়। 

ভুক্তভোগী শিউলি বেগম জানালেন, তার সন্তানের বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর ও বমি। সকালে হঠাৎ জ্বরের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কিছু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে টেস্ট করতে নানা রকমের ঝক্কি-ঝামেলা ও রিপোর্ট পেতে একদিন দেরি হবার কথা জানায় হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মচারীরা। এ সুযোগে একজন আনসার সদস্য তার হাতে থাকা টেস্টের কাগজপত্র দেখে ছবি তুলে নেন। এবং সকল টেস্ট তিনি করিয়ে দেবার আশ্বাস দেন। 

হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে অবহেলা করে টেস্ট বাণিজ্যের সাথে আনসার সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে এবং টেস্ট এর রেজাল্টের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বার্তা ২৪ কে বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তা স্বীকার করছি। তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া আনসার সদস্যদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও টেস্ট বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি কোন আনসার সদস্য এমন কাজে জড়িত তাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আমাদের প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে খুব শীগ্রই আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশাকরি এম্বুলেন্স যুক্ত হলেই এই সংকটেরও সমাধান হবে, বললেন ডা. শফিউর। 

এক পর্যায় প্রতিবেদকের দেয়া তথ্য ও ছবি হাতে পেয়ে পরিচালক ডা. শফিউর রহমান তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আনসার সদস্যকে ক্লোসড করেন। সেই সাথে এমন অনিয়মের কোন খবর চোখে পরলে সংবাদকর্মীদের জানানোর অনুরোধ করেন।

;