মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখীর আঘাতে নিহত ৪, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি



সেন্ট্রাল ডেস্ক ২

  • Font increase
  • Font Decrease
  রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী আঘাত হেনেছে গতকাল শুক্রবার। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে লিচু ও আমের মুকুল এবং ধান, গম, ভুট্টো, মরিচ, টমোটেসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষেতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের দশ জেলায়। রংপুর জেলায় চারজন নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। কালবৈশাখীতে রাজধানীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিঘিœত হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা। বাংলাদেশের খবরের নিজস্ব প্রতিবেদক রানা হানিফ ও কামাল মোশারেফ জানান, গতকাল বিকাল ৪টার দিকে কালো মেঘে ছেয়ে যায় রাজধানীর আকাশ। বিকাল ৫টার দিকে শুরু হয় ধূলিঝড়, সঙ্গে হালকা বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বিকাল ৫টা নাগাদ রাজধানীর উপর দিয়ে বয়ে গেছে কালবৈশাখী। আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্চে দুইটি কালবৈশাখীর পূর্বাভাস ছিল। যেটা আজ দেশের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। তিনি জানান, এপ্রিলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের উপর দিয়ে ৩ থেকে ৪টি তীব্র এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩টি হালকা কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি সাগরে দুটি নি¤œচাপ হতে পারে, যেগুলো ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, গতকাল রাজধানীতে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সিলেটে ৪৪, নেত্রকোনায় ৩৪, তেঁতুলিয়ায় ৩১, কুমারখালীতে ১৯, ডিমলাতে ১৮ ও সৈয়দপুরে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকাল সোয়া ৪টায় আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলোর উড্ডয়ন-অবতরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস। এ কারণে বেশ কয়েকটি বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করতে হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়। ঢাকা থেকে ইউএস-বাংলার একটি বিমানের রাজশাহীর শাহ মুখদুম বিমানবন্দরের অবতরণের কথা ছিল বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি যশোর, বরিশাল ও ভারতের মালদা ঘুরে পৌনে ৬টার দিকে রাজশাহীতে অবতরণ করে। কক্সবাজার থেকে রিজেন্ট এয়ারের একটি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে এলেও আবহাওয়া খারাপ থাকায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে আবহাওয়া ভালো হলে ঢাকা আসা বিমানটি। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার কাজী ইকবাল করিম বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমান চলাচল বিঘিœত হয়। রংপুর ব্যুরো জানায়, দমকা হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতে বদরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুর শামীম মিয়া (৩৫) ও তারাগঞ্জ উপজেলার নয়া মিয়া (৪০) মারা গেছেন। ঝড়ে জেলায় আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, দুপুর ১২টার দিকে ঝড় শুরু হয়। ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার বেগের এই ঝড় রংপুর নগরীর কিছু এলাকাসহ গঙ্গাচড়া, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঝড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায়। পীরগঞ্জের কাবিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, হঠাৎ ঝড়োবৃষ্টিতে তার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক ঘর ও গাছ-পালা পড়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে ক্ষেতের ফসল। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। উপজেলার টুকুরিয়ার ইউপির চেয়ারম্যান আতোয়ার রহমান বলেন, ঝড় আর শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়ির অনেক ক্ষতি হয়েছে। চতরা ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক শামীম জানান, ঝড়ের চেয়ে শিলাবৃষ্টিতে তার এলাকায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। তাদের ৮ জনকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মিঠাপুকুরের মিলনপুর ইউনিয়নে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, পাথরের মতো শিল আর বৃষ্টিতে বোরো ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় বেলা ১২টার দিকে হঠাৎ শুরু হওয়া শিলাবৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়ায় জনজীবন থমকে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়ে আম ও লিচুর গুটিসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত হওয়া শিলাবৃষ্টিতে ডোমার ও ডিমলা উপজেলার ১২ ইউনিয়নের অনেক ঘরের টিনের চাল ফুটো হয়ে গেছে। ডিমলায় আহত হয়েছে অন্তত ৩ জন। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ভারী শিলাবৃষ্টিতে ডোমার ও ডিমলায় ভুট্টা, মরিচ, পেঁয়াজ, তামাক ও বোরো ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি, গোমনতাতি, বামুনিয়া ভোগডাবুড়ি, কেতকিবাড়ি ও পাঙ্গামুটুকপুর এবং ডিমলার খালিশাচাপানী ও নাউতারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও টিনের ঘরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব জোড়াবাড়ি গ্রামের নলনী রায় (৪৫) বলেন, তার বাড়ির চারটি ঘরের টিন ফুটো হয়েছে। ওই টিন পরিবর্তন না করে বসবাস করা সম্ভব না। গ্রামের অমল চন্দ্র রায় (৫৫) বলেন, ‘মুই গরীব মানুষ। মোর চাইরটা বসত ঘরের চালা ঝাঁঝরা হয়া গেছে। মাইনষের পাঁচ বিঘা জমি আদি (বর্গা) নিয়া ধার-দেনা করি তামাক, মরিচ, ভূট্টা লাগাছিনু। ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়া গেছে।’ ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের চিলাহাটি বাজার এলাকার হামিদুল হক বলেন, ‘আমার ৫০ বছরের জীবনে এমন শিলাবৃষ্টি দেখিনি।’ শিলায় তার চারটি ঘরের চালা ফুটো হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে দুপুরের শিলাবৃষ্টি এক নারীসহ পাঁচজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলো- গোবিন্দগঞ্জ উপজলোর উত্তর ধর্মপুর বাসোতুল্যার ছেেল আজাহার আলী (৯০), তালুককানুপুর ইউনয়নিরে বাহাদুরপুর গ্রামের খয়বর আলীর ছেেল গাজী (৪৫) ও দামোদরপুর চিয়ারগ্রামের আব্দুল সাত্তাররে স্ত্রী সুফিয়া  বেগম (৪৫)। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধদপ্তিররে উপ-পরচািলক একএমে রুহুল আমনি জানান, প্রায় আধা ঘন্টা ব্যাপী প্রচন্ড শীলাবৃষ্টিতে আমের মুকুল ও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি  হয়েছে। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টার দিকে ১০ মিনিটের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার বসতবাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলায় হাজার হাজার ঘরের টিন ফুটো হয়ে গেছে। ভুট্টা ও ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের আজিজার রহমান জানান, তার চারটি টিনের ঘরের একটির টিনও ভালো নেই। তার ১২ বিঘা জমির ভুট্টা ও ১৫ বিঘা জমির ইরি-বোরো ক্ষেতেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার এলাকার শত শত ঘরসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাতীবান্ধার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ভয়াবহ শিলাবৃষ্টিতে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন ফসলী ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঝড়ে কাঁচা ঘর এবং পাকা গম ও গুটি আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছ ভেঙে ও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যানবাহন চলাচলে বিঘিœত হচ্ছে। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কালবৈশাখীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার নাগেশ্¦রী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায়। নাগেশ্বরীর বালাটারি গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, স্বাধীনের পর এই প্রথম এত জোরে ঝড়-বৃষ্টি হলো। ঝড়ে তার দুটি ঘর উড়ে গেছে, সুপারিসহ বিভিন্ন গাছ পড়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে শাক এবং ধানক্ষেত। গ্রামের বক্তার আলী বলেন, ঝড়ে গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, জেলার প্রতিটি উপজেলায় কমবেশি ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিলাবৃষ্টি হয়েছে সদর উপজেলায়। উপজেলার হাড়িভাসা, হাফিজাবাদ, কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের অনেক ক্ষেতের উন্নত জাতের টমেটো, তরমুজ, শসা, গম ও ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝরে গেছে আম ও লিচুর অনেক মুকুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়ে চলে আড়াইটা পর্যন্ত। এতে শহরের অনেক এলাকার সাইনবোর্ড ও তোরণ হেলে পড়ে। ইন্টারনেট ও ডিশের তার ছিড়ে যায়। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জেলা শহরসহ আশপাশের উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকলচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. সাইফুর রহমান বলেন, যে কোনো ফসলের জন্য এ বৃষ্টি উপকারী। বিশেষ করে, আমের জন্য। তবে আরো দুই তিন দিন বৃষ্টি হলে তা আমের জন্য খুব ক্ষতিকর হবে, অন্য ফসলের ক্ষতি হবে। নাটোর প্রতিনিধি জানান, বিকাল ৪টার দিকে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায় বজ্রপাতে ২ নারীসহ ৯ জন আহত হয়েছে। তারা হলো- মশিন্দা মাঝপাড়া গ্রামের নিলুফা বেগম (৪০), সাহাপুরের আয়েতুন (৬০), বিলহরিবাড়ী গ্রামের আইগরী (৪৫), জগিন্দনগর গ্রামের হাবিবুর (৩০), শরিফুল (২৪), কালাম (৪৫), বাবলু (২৮), সাড্ডাক (৫০) এবং খ্বুজীপুরের আফছার (৪০)। নিলুফা বেগমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের ভর্তি করা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সিলেট ব্যুরো জানায়, কালবৈশাখীতে ওসমানীনগরে দুইজন নিহত হয়েছে; বিদ্যুৎহীন রয়েছে গোটা উপজেলা। বিকাল প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী এই ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত গাছ পড়ে যায়; উড়ে যায় শতাধিক ঘরের টিনের চালা। দশহাল গ্রামে নূরুল আলমের নির্মাণাধীন ঘরের টিন উড়ে গিয়ে গলা কেটে সাবিয়া বেগম (৪৫) নামের এক মহিলা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঝড়ের সময় পানিতে ডুবে হাসান আহমদ নামের ১৬ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়া বজ্রপাতে তেতইখালিতে পূর্বতিলা পাড়ার ইউছুফ আলীর ৪টি গরু মারা গেছে। মাগুরা প্রতিনিধি জানান, বিকালের ঝড়ের সময় শিলাবৃষ্টিতে সদর উপজেলার পলিতা বেরইল ইউনিয়নের গহর ডাঙ্গা গ্রামের আকরাম হোসেন (৫০) নামের এক কৃষক মারা গেছেন। এছাড়া সদরের বিভিন্ন গ্রামে নারীসহ ৯ জন আহত হয়েছে। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আবু সুফিয়ান জানান, শিলাবৃষ্টিতে বিভিন্ন গ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
   

আরসার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে: র‌্যাব



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার বিরুদ্ধে র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। কোন প্রকার তথ্য পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটা আতঙ্কের নাম আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এই আরসা গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হত্যাকানণ্ড অপহরণসহ নানান অপরাধের সাথে জড়িত। এর আগে আমরা নানা ধরনের অভিযান পরিচালনা করে এখন পর্যন্ত ১১০ জন আরসা সদস্যকে গ্রেফতার করেছি এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও অস্ত্র সরঞ্জামাদী উদ্ধার করেছি।

তিনি আরও বলেন, র‍্যাবের অব্যাহত নজরদারি, গোয়েন্দা তাৎপরতা অভিযানের প্রেক্ষিতে আরসা নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। পাশের দেশ থেকে অস্ত্র আসছে এমন গোয়েন্দা তথ্য থেকে আমরা গতকাল অভিযান চালিয়ে দুইজন কে গ্রেফতার করেছি।

আরাফাত বলেন, আরসার এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নিষ্ক্রিয় রাখতে আমরা স্থানীয় থানা এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। আমরা তাদের ট্র্যাকিং করছি এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমরা যখনই কোন তথ্য পাচ্ছি আমরা অভিযান চালাচ্ছি।

গত বুধবার ভোর রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার গহিন পাহাড়ে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট শেল উদ্ধার করেছে র‍্যাব। এ অভিযানের সময় আরসা কমান্ডার মাস্টার সলিমুল্লাহ (৩৮) এবং তার সহযোগী মো. রিয়াজকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক।

;

উত্তরা, উত্তরখান এলাকায় শনিবার গ্যাস কম থাকবে



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উত্তরা, উত্তরখান এলাকায় শনিবার গ্যাসের কম থাকবে

উত্তরা, উত্তরখান এলাকায় শনিবার গ্যাসের কম থাকবে

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্যাস পাইপলাইনে নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণ খান এলাকায় গ্যাস সরবরাহ কম থাকবে।

শুক্রবার (১৭ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

এতে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মোট ১৫ ঘণ্টা উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণ খান ও এর আশপাশের এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করবে। গ্রাহকবৃন্দের সাময়িক অসুবিধার জন্য তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

;

চিংড়ি ঘেরে মিলল ২ মরদেহ, শর্ট সার্কিট দিয়ে হত্যার অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজার শহরের খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে চিংড়ি ঘের থেকে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহ দুটি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর জানায় স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ১১ টায় খুরুশকুল মনুপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে এ মরদেহ দুটি পড়ে থাকতে দেখেছে স্থানীয় লোকজন।

নিহতরা হলেন, খুরুশকুল মনু পাড়া এলাকার বাসিন্দা জামালের ছেলে আবদুল খালেক (২৫) এবং আবু তাহেরের ছেলে মো. ইয়াছিন। উভয়ের বাড়ি খুরুশকুল মনু পাড়া এলাকায়। তারা দুইজনে পেশায় মৎস্যজীবী বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

খুরুশকুলের চেয়ারম্যান শাহজাহান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসেছেন। মরদেহ দুটি প্রত্যক্ষ করে দেখেছেন তাদের শরীরে একাধিক বৈদ্যুতিক শর্টের চিহ্ন রয়েছে। তারা দুইজন মনুপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানান তিনি।

নিহত ইয়াছিন আরাফাতের মা জানিয়েছেন, তার ছেলে গতকাল রাত ১০টার সময় বাড়ি থেকে বের হয়। আজকে সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তবে কে বা কারা তাদের হত্যা করেছে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে ছেলে হত্যার সঠিক বিচার দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তাদের গায়ে মারধরের এবং বৈদ্যুতিক শর্টের আঘাত রয়েছে। কে বা কারা তাদের মেরে ফেলে রেখেছে সেই বিষয়ে এখনো কেউ কিছু বলছে না।

তবে চেয়ারম্যান শাহজাহান সিদ্দিকী এবং সেখানকার ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীনের দাবি সাবেক ইউপি সদস্য শামসুল হুদার মাছের ঘেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ এর শর্ট সার্কিট দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি অপারেশন) শাকিল হাসান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একজনের পায়ে এবং আরেকজনের বাঁ হাতের নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের পর হত্যার মূল কারণ জানা যাবে।

;

দীর্ঘ শত্রুতা ও প্রতিশোধের জেরে হত্যাকাণ্ড, গ্রেফতার ৪



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নড়াইলের লোহাগড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

গ্রেফতারকৃতরা হল- প্রধান আসামি শুটার সাজেদুল মল্লিক (২৫), পাভেল শেখ (২৮), মামুন মোল্যা (২৬) ও মো. রহমত উল্লাহ শেখ (১৯)।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও নড়াইল এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছে বলে জানান র‍্যাব।

র‍্যাব জানায়, দীর্ঘ বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। ভুক্তভোগী নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপন এর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা বিরাজমান ছিল।

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম। 

তিনি বলেন, গত ১০ মে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা করে ও এলোপাথারি গুলি করে হত্যা করেন। ওই ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। একজন সাবেক ইউপি সদস্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে র‌্যাব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে মাঠে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৬ মে)  রাতে র‌্যাব-৬, র‌্যাব-৭ এবং র‌্যাব-১০ এর যৌথ আভিযানে  ওই  হত্যার ঘটনায় জড়িত শুটারসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের বরাত দিয়ে কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, দীর্ঘ বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। ভুক্তভোগী নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপনের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা বিরাজমান ছিল।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বিরোধের জের ধরে ভুক্তভোগী মোস্তফা কামাল এবং আকবর হোসেন লিপনের অনুসারীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে লিপন গুরুতর আহত হয় এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে। পরবর্তীতে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামাল এর উপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে গ্রেফতারকৃত সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা ভিকটিম মোস্তফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা কামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা সুইচ গিয়ার চাকু, রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে ওৎ পেতে থাকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছানো মাত্রই সুযোগ বুঝে গ্রেফতারকৃত সাজেদুলের হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে ৩ রাউন্ড গুলি করে; যার মধ্যে ২ রাউন্ড গুলি তার বুকে ও পিঠে লাগে।

র‍্যাব জানান, গ্রেফতারকৃত সাজেদুল স্থানীয় একটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর ১ম বর্ষের ছাত্র। সে আকবর হোসেন লিপন এর অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি, চুরি ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত রহমত উল্লাহ শেখ পেশায় একজন শ্রমিক। সে গ্রেফতারকৃত সাজেদুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ মারামারি, ছিনতাই, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত সাজেদুল এর সহযোগী হিসেবে তাকে উক্ত হত্যাকান্ড সংঘটিত করার জন্য ১ লক্ষ টাকায় চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং হত্যাকাণ্ডের সময় সে গ্রেফতারকৃত সাজেদুল সাথে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে এবং উক্ত মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত পাভেল স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এইচএচসি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। সে লিপনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতো। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত মামুন মোল্যা পেশায় একজন গাড়ি চালক। সে লিপনের নেতৃত্বে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তার কাছে থাকা ছুরি চাকুসহ অন্যান্য দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে মোস্তফা কামালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। তার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

;