পদ্মার ভাঙনে ঘরহারা ২০০ পরিবার, আতঙ্কে ১৫ চরবাসী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী
পানির স্রোতে ভাঙছে পদ্মার পাড়, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

পানির স্রোতে ভাঙছে পদ্মার পাড়, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহীতে উজানের ঢলে নেমে আসা পানিতে ফেঁপে উঠছে পদ্মা। বিপদসীমার মাত্র ৭৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। তবে সেটা রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধা এলাকায়। যেটিকে পদ্মার রাজশাহী পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়। পদ্মার মূল পয়েন্টে বিপদসীমা এখনো অতিক্রম না করলেও জেলার বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাঙনের কবলে পড়ে এরই মধ্যে বসত-ভিটা ছাড়া হয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার। তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন চকরাজাপুরের ১৫টি চরের মানুষ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566796058911.jpg

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মায় ফুলে ফেঁপে ওঠা পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে নদীর পাড়। পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ে পাড় ভেঙে চকরাজাপুর ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভেসে গেছে গাছপালা। আর ৫০ গজ ভাঙলেই পাকুড়িয়া ইউনিয়নের আলাইপুর নাপিতের মোড় ও কিশোরপুর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে ঠেকবে ভাঙন। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। তবে ভাঙন রোধে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন: বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার নিচে পদ্মার পানি

চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনগর চরের মান্নান মন্ডল, মিজানুর রহমান, সামাদ মালিথা, হানে ফকির, হাফিজুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম, হানু কাজী, সাইদুল ইসলাম, মজনু মোল্লা ও চকরাজাপুর চরের হাসান শেখ, জব্বার মন্ডল, হিরো মন্ডল, শাহিনা বেগম, ফজলু শিকদার, আকতার মন্ডল, রহমান মোল্লা হাফিজুর রহমানসহ শতাধিক পরিবার ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566796157103.jpg

তাদের মতো ভাঙন আতঙ্কে ঠিকানা খুঁজছেন চকরাজাপুর চরের আরো শতাধিক পরিবার। ঠিকানা হারিয়ে কোথায় যাবেন তা নিয়েও দুঃশ্চিন্তা তাদের। পানিবন্দি হয়ে গবাদিপশু নিয়ে অবর্ণনীয় জীবন যাপন করছেন কালিদাখালি, চকরাজাপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, চকরাজাপুর, পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি, লক্ষীনগর, চকরাজাপুর, পশ্চিম চরকালিদাস খালী, পূর্ব চকরাজাপুর, জোতাশি, মানিকের চর, লক্ষিনগর, টিকটিকিপাড়া, দিয়াড়কাদিরপুর, নওশারা-মহদীপুর চরের মানুষ।

স্থানীয় সবুর মল্লিক ও লিটন আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, নদী তীরবর্তী বাঁধের পশ্চিমপাড় থেকে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে অরক্ষিত এলাকার আরও অনেক জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে।

চকরাজাপুর চরের মোস্তাক আহম্মেদ শিকদার বলেন, ‘গত কয়েক দিনে পদ্মায় বিঘার পর বিঘা জমির ধান, পাট, আবাদি জমি, গাছপালা হারিয়ে গেছে। মানুষদের সহযোগিতা তো দূরের কথা সান্ত্বনা দেওয়ার মতোও কেউ নেই। বারবার সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ভাঙন ঠেকানোর আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’

আরও পড়ুন: বর্ষায় শান্ত পদ্মা ফুঁসে উঠছে শরতে

পূর্ব চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ার শওকত জামান বলেন, ‘কয়েক দিনের পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমিসহ গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছে দুই শতাধিক পরিবার। তারা এখন ঘরবাড়ি সরাতে ব্যস্ত।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/26/1566796113226.JPG

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা এরমধ্যেই ৩০টি পারিবারের তালিকা তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করেছি। অন্যদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙেছে তাদের সরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।’

জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহিন রেজা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ৩০টি পরিবারের তালিকা পেয়েছি। সেটি উপরমহলে জানানো হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ পেলে তাদের পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া ভাঙনের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।’

   

শ্রমিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি র‌্যাবের হাতে আটক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বাগেরহাট
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে পোশাক শ্রমিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে আটক করেছে র‌্যাব। আটকের নাম মো. শাকিল খান।

বুধবার (১৫ মে) রাতে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থানার পোলেরহাট বাজার, মাদরাসা মোড় এলাকা থেকে র‌্যাব-৬ তাকে আটক করে।

জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৯ মে রাতে চট্টগ্রামের আকমল আলী রোডে মারামারির এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে দুজন আহত হন। তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে মেহেদীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে সিএমপি, চট্টগ্রামের ইপিজেড থানায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েক জনের নামে হত্যা মামলা রুজু করেন। এরপরই বুধবার রাতে মো. শাকিলকে আটক করে র‌্যাব।

তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র‌্যাব থেকে জানানো হয়েছে।

;

ব্যাটারিচালিত রিকশার উৎপত্তিস্থল

জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি: ডিসি ট্রাফিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি: ডিসি ট্রাফিক

ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি: ডিসি ট্রাফিক

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাটারিচালিত রিকশার মূল উৎপত্তিস্থল চার্জিং পয়েন্ট এবং যেখানে গ্যারেজ আছে, যে সব ব্যক্তিরা এগুলোর সঙ্গে জড়িত সেসব ব্যক্তিদেরও তালিকা প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছি বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের ডিসি উপ-পুলিশ কমিশনার মোস্তাক আহম্মেদ।

তিনি বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের ডিএমপি পুলিশ কমিশনার যেভাবে পরবর্তী নির্দেশনা দেয় সেভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিক-তেজগাঁও বিভাগ আয়োজিত ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক বাস্তবায়ন অনুষ্ঠানে এসব জানানো হয়।

মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার বাসস্টান্ড কেন্দ্রিক মানুষ প্রায়ই ট্র্যাফিক জ্যাম নিয়ে অভিযোগ দেয়। এই এলাকায় স্কুল-কলেজের আধিক্য হিসেবে এই এলাকাতে যে ধরনের মানুষ বসবাস করে মানুষের আচরণ এবং যানবাহনের যে ধরন সেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। আমরা সিটি কর্পোরেশন লোকাল জনপ্রতিনিধি এবং অন্যান্য সব লোকের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনোভাবেই এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। এখানে রিকশা, সিএনজি বা যানজট হয় এমন গাড়ির আধিক্য আছে। তাই আমরা ট্রাফিক পুলিশ কদিন ধরেই ছোট ছোট আকারে পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। রমজান মাসে শিয়া মসজিদ এলাকায় একটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আয়োজনও করেছিলাম। সেটার কারণে অনেকটা স্বস্তিদায়কও হয়েছে।

তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে শিয়া মসজিদ এবং বসিলা এলাকাতে যাতে কোনো ধরনের হকার না থাকে তার জন্যও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি রিকশা বা অন্যান্য গাড়ির জন্য আলাদা লেন বা ওয়ান ওয়ে করে দিয়েছি যাতে গাড়ি-ঘোড়া উল্টা রোডে না যেতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করেছি। 

মোহাম্মদপুর এলাকায় টোটাল ২২টি স্কুলে ৩০ হাজারের ওপরে পড়াশোনা করে। আমরা প্রত্যেক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যে মিটিং করেছি এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করেছি। এখানে সমস্যা হলো এই স্কুলগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি আসে আবার পাশাপাশি রিকশা আসে। আমরা এই স্কুলকেন্দ্রিক এলাকাগুলো নিয়ে কিছু পরিকল্পনা করেছি রাস্তার ব্যবস্থা করেছি এবং আরো কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। আশা করি ১০-১৫ দিনের মধ্যে এগুলো সব বাস্তবায়ন করতে পারব।

ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাটারি চালাতে রিকশার বিষয়ে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা ছিল। ট্রাফিক যে সমস্ত এলাকাতে থাকে সেই সমস্ত এলাকাতে ব্যাটারি চালিত রিকশা যাতে কোনোভাবে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই সচেষ্ট আছি। কিন্তু আপনারা জানেন ব্যাটারিচালিত রিকশা যে পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে তা দ্রুত সময়ে ঢাকা শহর থেকে নির্মূল করা সম্ভব না। 

ব্যাটারি চালিত রিকশা ধরে ডাম্পিং স্টেশনে প্রেরণ না করে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত ডাম্পিং ব্যবস্থা নেই। যে পরিমাণ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা রয়েছে সেগুলো ডাম্পিং করতে গেলে তো পর্যাপ্ত ডাম্পিং স্টেশন প্রয়োজন। এখন আমাদের যে ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে সেখানে দেখা গেল ৫০টি অটোরিকশা ডাম্পিং করা যাবে। কিন্তু তারপরে আমরা যেগুলো ধরব সেগুলো কি করব? তাছাড়াও তো অন্যান্য অনেক গাড়ি আছে যেগুলো ডাম্পিংয়ে নেয়া হয়। রিক্সা দিয়ে স্টেশন পরিপূর্ণ করে রাখলে অন্য যানবাহন গুলো ডাম্পিং স্টেশনে নেয়া হবে না। এই কারণে অনেক সময় আমাদের রিকশাগুলো ধরে ডাম্পিং স্টেশনে না পাঠিয়ে জরিমানা করে ছেড়ে দিতে হয়।

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের থেকে যানজট নিরসনে পরিকল্পনায় একাধিক পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সকল গণপরিবহনের অস্থায়ী পার্কিং অপসারণ, বসিলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ননস্টপ সার্ভিস চালু করা, বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলা চার রাস্তার মোড় পর্যন্ত সকল অবৈধ হকার উচ্ছেদ করে শতভাগ রাস্তা যানবাহন চলাচল উপযোগী করা, বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রিক বিআরটিসি'র বাস ডিপো থাকায় বিআরটিসি'র বাস দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করার সুযোগ না দেওয়া এবং এ সংক্রান্তে কর্তৃপক্ষের সাথে যথাযথ সমন্বয় করা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রিক নতুন সার্কুলেশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।

এমনকি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নতির স্বার্থে বাসস্ট্যান্ডর অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি অপসারণ করে রাস্তা ও ইন্টারসেকশন প্রশস্ত করার উদ্দেশে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

;

নীতির প্রশ্নে আপোষহীন বাংলাদেশ দেখে গেলেন ডোনাল্ড লু



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
যে আশার বাণী শোনালেন ডোনাল্ড লু

যে আশার বাণী শোনালেন ডোনাল্ড লু

  • Font increase
  • Font Decrease

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ আন্দোলনের সময়ে গত অক্টোবরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব যেভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে অবস্থান নিয়েছে, তা আমাদের সাহস যোগাচ্ছে। তাই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো দেশে আর নির্বাচন হবে না’। আগের দুই নির্বাচনের মতো নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এই আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেই যায়নি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। দলটির আশা ছিল নির্বাচন হবে না, পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে আমেরিকা যেভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে, তাতে নির্বাচন করার সাহস হবে না আওয়ামী লীগের। আর নির্বাচন করলেও পশ্চিমা বিশ্ব সরকারকে সমর্থন দেবে না, সরকার টিকতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে।

নির্বাচনের পর এরই মধ্যে চার মাসের বেশি সময় পার করে ফেলেছে সরকার। এই সময়ে দেশি-বিদেশি সকল প্রতিবন্ধকতা প্রায় অতিক্রম করেও ফেলেছে। অর্থাৎ দেশে সরকারের জন্যে অস্বস্তিকর বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। বিএনপিও নেই আন্দোলনে। যদিও নির্বাচনের আগে যারা কারান্তরীন হয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই ছাড়া পেয়েছেন। তারা ছাড়া পেলেও দলকে সংগঠিত করতে পারেননি। কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছেন না।

যে আমেরিকা নিয়ে এত উচ্চাশা ছিল বিএনপির, তারাও শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেছে। নির্বাচনের আগে অতি-তৎপর থাকা পিটার হাসের রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক দৌড়ঝাঁপ এখন নেই। তিনিও ফিরেছেন স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যক্রমে। অন্য সকল রাষ্ট্রদূতের যে কার্যক্রম সেটা তার মাঝেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গত নির্বাচনের আগে আলোচিত ছিল আমেরিকার অবস্থান। এটা প্রতি নির্বাচনের আগেই থাকে। তবে ওই সময়ে তারা যে প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছিল তাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের পর্যায়েই যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের কঠোর অবস্থান এবং ভারতের ভূমিকায় তারা নমনীয় হতে বাধ্য হয়। এরপরেও আশঙ্কা ছিল নতুন সরকারের সঙ্গে আমেরিকার কাজ করা নিয়ে, যা দূরীভূত হয় মূলত গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠি, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ‘আমেরিকা-বাংলাদেশের সম্পর্কের ভিত্তি দুই দেশের জনগণের শক্তিশালী সম্পর্ক’। চিঠিতে বাইডেন বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সমর্থনের পাশাপাশি একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন স্বপ্ন পূরণে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

‘যুক্তরাষ্ট্র–বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পরবর্তী অধ্যায় শুরুর পর্বে’ জো বাইডেন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ আরও অনেক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। বাইডেনের সে চিঠির বাস্তবায়ন-পর্বে ঢাকা সফর করে গেছেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। গত মঙ্গলবার কলম্বো থেকে ঢাকায় এসে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা ত্যাগ করেছেন এই কূটনীতিক।

সফর প্রসঙ্গে ডোনাল্ড লু বুধবার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অহিংস নির্বাচন নিশ্চিতে গত বছর জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক পরিশ্রম করেছে; যা আমাদের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি করেছিল। যদিও এটি আমাদের সম্পর্কে খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু এখন আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই, মোটেও পেছনে ফিরতে চাই না। আমরা আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করার উপায় খুঁজে বের করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘কীভাবে দু’দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হয়, আমরা সে বিষয়গুলোতে আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের মধ্যকার অস্বস্তিকর বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছি।’ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও আস্থা নতুন করে তৈরি করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বলেও উল্লেখ করেছেন।

ডোনাল্ড লুর এই সফর এবং তার বক্তব্য সরকারের জন্যে ‘স্বস্তির’ অনেকটাই। দেশ দুটোর মধ্যকার অবিশ্বাস, সন্দেহ সেটা দূর করতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষত তিনি যখন বলছেন, দেশে-দেশের উত্তেজনা তাদের জন্যে ‘খুবই সাধারণ বিষয়’, তখন! নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা যে দেশে-দেশে উত্তেজনা ছড়ায়, এবং বাংলাদেশের বিষয়টি তেমনই এক, বক্তব্যে স্বীকারোক্তি আছে এর। বক্তব্যে তিনি যখন পেছন ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন, তখন এটাকে ইতিবাচকভাবে নেওয়া যেতে পারে।

ডোনাল্ড লুর এই সফরে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক হয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়েও পাননি। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগের দেশি-বিদেশি চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি, ফলে নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা থাকলেও নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির তৈরি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আগের সেই ঋজু অবস্থান ধরে রেখেছেন। ডোনাল্ড লুর ‘সম্পর্কোন্নয়নের’ সফরেও সাক্ষাৎ দেননি তাকে। এরবাইরে সফরসূচির কোন পর্যায়েই বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উচ্চারিত হয়নি। অর্থাৎ এই সফরকে আমেরিকা স্রেফ কূটনৈতিক সফর এবং সম্পর্কোন্নয়নের এক সফর হিসেবে নিয়েছে।

ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বিএনপির কোন পর্যায়ের কারো দেখা হয়নি। তাকে ও তার দেশকে নিয়ে ‘হতাশ’ বিএনপি নেতারা এই সফরকে গুরুত্বহীন বলতে চাইছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সফর শুরুর আগে বলেছিলেন, ‘কে আসলো আর কে গেলো তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।’ স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘ডোনাল্ড লুর আসা-না আসায় কিছু যায়-আসে না।’ সফর চলাকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত নির্বাচনের আগের তাদের আশাবাদের ভিন্ন ব্যাখ্যায় এবার বলছেন, ‘আমি জানি না আপনারা কী অবস্থানে তাদের ভেবেছিলেন। আমরা যেটা দেখেছি, সেটা হচ্ছে তারা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছেন। এটা তারা এখনো অব্যাহত রেখেছেন।’ তবে বিএনপির বোধোদয় হয়েছে এবার হয়ত। নির্বাচন হলেও সরকার টিকতে পারবে না বিএনপির সেই আশাবাদের বিপরীতে এবার তিনি বলছেন, ‘যেকোনো দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হয় সবাইকে। সে জন্য তারা (আমেরিকা) সেটাকে অব্যাহত রাখেন। এমনকি সামরিক শাসকদের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক রাখতে হয়। আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থাটা, সে অবস্থার প্রেক্ষাপটে তারা তাদের দেশের প্রয়োজনে যেটা উপকারী মনে করছেন, সেটা করছেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘তারা তাদের দেশের প্রয়োজনে যেটা উপকারী মনে করছেন, সেটা করছেন’, একইধরনের কথাও উচ্চারিত হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠেও। ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসার দিন তিনি বলেছেন, ‘ডোনাল্ড লুকে দাওয়াত করে আনা হয়নি। তিনি নিজ দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আলোচনা করতে এসেছেন।’ প্রায় অভিন্ন কাদের-ফখরুলের ভাষ্য, তবে দুজন দুই অবস্থান থেকে একজন আশা আর আরেকজন হতাশা থেকেই এসব বলছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

তিনদিনের সফর শেষে ফিরে গেছেন ডোনাল্ড লু। তবে তার এই সফর সরকারের জন্যে আশাব্যঞ্জক নিঃসন্দেহে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই অঞ্চলের নীতি বাস্তবায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যক্তি যখন পেছন ফিরে না যাওয়ার কথা বলছেন, উত্তেজনাকে যখন খুবই সাধারণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন তখন ধারণা করা যায় ভিসা-বাণিজ্যসহ বিবিধ নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা অনেকটাই দূর হতে শুরু করবে। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, ব্যবসায়িক পরিবেশের সংস্কারসহ নানা বিষয় নিয়ে ইতিবাচক পথ প্রশস্ত হবে।

ডোনাল্ড লুর হয়ত পুরো দেশের নীতি বদলানোর ক্ষমতা নেই, তবে যেটুকু ক্ষমতা তার সেখান থেকেই আশাবাদের বাণী রেখেছেন এখানে। এটা স্বপ্রণোদিত তার। আমেরিকা নিজেদের প্রয়োজনে এমনটা করে থাকে। তবে আমরা আমরা যারা কিনা রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে দেখেই পুরো আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত নেওয়া লোক, তারা তারচেয়ে অন্তত বেশি ক্ষমতার ডোনাল্ড লুকে দেখে খানিকটা আশাবাদী হলাম! যদিও এটা আমাদের জন্যে খানিকটা অপমানের, তবু...। বিদেশের মুখাপেক্ষী হয়ে যে অপমান গায়ে মেখে এসেছি আমরা এতদিন সে অপমান উগরাতেও পারছি না সহসা।

তবু কথা থাকে, কেন তিনি এত আলোচনার? তাকে অতি-আলোচনায় নিয়ে আসলাম তো আমরাই। বিবিধ চাপে নতজানু না হওয়া সরকার এবারও তার অবস্থান ধরে রেখেছে বলে দৃশ্যমান। যা সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যে স্পষ্ট; ‘দাওয়াত করে আনা হয়নি।’

‘বিনা-দাওয়াতে’ আসা ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করে চলেও গেছেন। যাওয়ার আগে দেখেছেন নিশ্চয়ই আত্মসম্মানবোধে ঋজু হয়ে থাকা দেশটাকে। বিবিধ চাপে নতজানু না হওয়া বাংলাদেশকে চিনেছেন তিনি এবার অন্যভাবে। বাংলাদেশে এসে যে বার্তা পেলেন তিনি, দিতে চাইলেন যে বার্তা সেটা দুই দেশের সম্পর্ককে ভিন্ন মাত্রা দেবে নিঃসন্দেহে; কিছু শিক্ষণীয় আছে বৈকি!

;

বিভিন্ন অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ, আরও বাড়ার শঙ্কা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
বিভিন্ন অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ, আরও বাড়ার শঙ্কা

বিভিন্ন অঞ্চলে বইছে তাপপ্রবাহ, আরও বাড়ার শঙ্কা

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘদিন তাপপ্রবাহের পর টানা কয়েকদিন বৃষ্টির ফলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছিল। তবে আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ৪৮ ঘণ্টার সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

বুধবার (১৫ মে) সন্ধ্যার আবহাওয়াবিদ মল্লিক জানান, সারাদেশে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। তবে ৪০ ডিগ্রিতেই ওঠানামা করবে। পাবনা, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং রাঙ্গামাটি জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

এর বাইরে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং বান্দরবান জেলাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বাকি অংশে।

বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

;