সাদ-রিটার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এরশাদের অভিমানী ভাতিজা

  • ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নেতাকর্মীদের সঙ্গে আসিফ শাহরিয়ার। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

নেতাকর্মীদের সঙ্গে আসিফ শাহরিয়ার। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর মনোনয়ন প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে আরও জটিল সমীকরণের দিকে এগিয়ে গেল রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন। এখন এই নির্বাচনে মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী রওশনপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ ও বিএনপির রিটা রহমানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে থাকছে এরশাদের অভিমানী ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।

৬ জন প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এই তিন প্রার্থীর মধ্যে। তবে দলীয় প্রতীক থাকায় লাঙ্গল ও ধানের শীষের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির নেতারা। যদিও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সাদ এরশাদের পক্ষে নির্বাচনে মাঠে না থাকার আগাম ঘোষণা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

রংপুর সদরের পাঁচটি ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশন এলাকার ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংসদীয় রংপুর-৩ আসনটি। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নব্বইয়ে এরশাদ সরকারের পতন হয়। তবুও রংপুরের মানুষ এরশাদ ও লাঙ্গলের প্রতি উদার ছিলেন। তাই নব্বই পরবর্তী প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যক্তি এরশাদের জনপ্রিয়তায় রংপুরের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসায় ভোট পড়েছিল তারই পক্ষে।

গেল ২৮ বছরের ইতিহাসে রংপুরে কখনোই পরাজিত হয়নি এরশাদের লাঙ্গল। তবে এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। এরশাদবিহীন টালমাটাল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদকে নিয়ে চটেছেন রংপুরের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। প্রবাসে ব্যবসায় সাফল্য পাওয়া রওশনপুত্র সাদ এরশাদ তার বাবার আসনে কতটুকু সফল হবেন, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন দলের শীর্ষ নেতারা। আর রাজনীতিতে একেবারই নতুন এই সাদকে সহজেই মানতে পারছেন না দলের তৃণমূল নেতারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সরে দাঁড়ানো, স্থানীয় বিএনপির কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে অচেনা রিটা রহমানকে ধানের শীষের প্রার্থী করা এবং সাদ এরশাদকে নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৈরি দ্বন্দ্ব-বিতর্কে লাভ খুঁজছেন এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। সাবেক এই সংসদ সদস্য রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়ার পর থেকেই দলে বহিষ্কৃত হয়ে আছেন।

এরশাদ পরিবারের সদস্য হিসেবে দলের কাছে আসিফ শাহরিয়ার এখন তুচ্ছ হলেও দিন দিন এই নির্বাচনকে ঘিরে তার পক্ষে তৈরি হয়েছে জনসমর্থন। বিএনপিতে স্থানীয় প্রার্থী নেই। নেই জাতীয় পার্টিতেও। তাই দুই বড় দলের দুই প্রার্থীকে রংপুরবাসীর কাছে অপরিচিত এবং প্রবাসী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্য থেকে।

জানা গেছে, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করা সাদ এরশাদও প্রস্তুত নির্বাচনী যুদ্ধের লড়াইয়ে বিজয় নিশ্চিত করতে। তার পক্ষে দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ জেলা জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। আর নির্বাচনী উৎসব থেকে নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন মহানগর জাতীয় পার্টির নেতারা।

এই পরিস্থিতিতে নৌকাবিহীন মাঠে লাঙ্গল ও ধানের শীষের যুদ্ধে ফায়দা লুটতে চান স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার। তার সমর্থকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির অভিমানী ভোটাররা অজানা সাদের বিমুখ হয়ে ব্যালটে আসিফের পক্ষে রায় দেবেন। তবে শেষ পর্যন্ত নানা নাটকীয়তায় ভরা এরশাদের শূন্য এই আসনে কে হবেন নতুন সংসদ সদস্য, তা দেখতে অপেক্ষায় থাকতে হবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা জি.এম. সাহাতাব উদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম রাজু তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বৈধ রয়েছে জাতীয় পার্টির রাহগীর আল মাহি সাদ, বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল।

উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শূন্য ঘোষিত রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া গেছে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হয় ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর। তার ১৮ দিন পর ৫ অক্টোবর হবে ভোটগ্রহণ।