ধানের বাম্পার ফলনের পরেও চালের বাড়তি দাম

  • ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পেঁয়াজের পর এবার বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫/৬ টাকা। ধানের বাম্পার ফলনের পরও কেন এমন বাড়তি দাম তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে চালের দাম।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে মণ প্রতি ধানের দাম আসে ১ হাজার ৪০ টাকা। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে চালের দাম থাকার কথা ৩৯ টাকা। আর খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফাসহ খুচরা বাজারে চালের সর্বোচ্চ দাম হওয়ার কথা ৪২ টাকা। কিন্তু সেটি মানছেন না চাল ব্যবসায়ীরা। ধানের মৌসুমে যেহেতু এবার মণ প্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়নি তাই চালের দাম বাড়ার যৌক্তিকতাও দেখছে না মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের পর এবার আমনেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশে আমন ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এবার কেজি প্রতি ২৬ টাকা দরে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন ধান সংগ্রহ করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে চাল-গম মিলে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার টন মজুদ আছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। চাল রয়েছে ১১লাখ ১২ হাজার ৬৭৪ টন। গতবছর দেশে মোট৩ কোটি ৪৪ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে। যেখানে বাৎসরিক চাহিদা ২ কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে এখন পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু তারপরও কেন বাড়ছে চালের দাম। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সব মহলে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়েনি। খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে গোটা চালের বাজারে। তবে চালের দাম বাড়ার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের দায়ী করছেন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৭ থেকে ৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৭ থেকে ৫০ টাকা কেজি।

চিকন চালের মতো মোটা চালের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আটাশ চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। তা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে।

খুচরার পাশাপাশি দাম বেড়েছে পাইকারিতেও। পাইকারিতে প্রতি বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ থেকে ২৩০০ টাকায়। আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫০ থেকে ১৮০০ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ২৩৫০ থেকে ২৭০০ টাকায়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি না করার বিষয়ে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বুধবার এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে কঠোর বার্তাও দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। তবে অনেকেই সেটি মানছেন না। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য তার প্রভাবই পড়েছে চালের বাজারে। পাইকারিও খুচরা ব্যবসায়ীরা মিলেই এ সমস্যা সৃষ্টি করেছেন।

চালের বাজার মনিটরিং করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল রুম খুলেছে। আর অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে কোনো ব্যবসায়ী চালের বাড়তি দাম নিলে বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রয়োজনে খাদ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, গতবারের চেয়ে এবার যেহেতু ধানের দাম কমছিল সেহেতু চালের দাম এবার কম হতে হবে। কৃষক দাম পাবে না অথচ মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নেবেন তা হবে না। তারা সরকারি দামে ধান কেনেনি তাহলে কম দাম দিয়ে কিনেও কেন চালের দাম বাড়বে। আর যেহেতু পর্যাপ্ত মজুদ আছে তাই চালের দাম কোনভাবেই বাড়ানো যাবে না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটোমেটিক হাস্কিং মিলস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে ধান ক্রয়ও চাল বাজারজাতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। মিলগুলো প্রতিদিন ধান কিনছে, প্রক্রিয়াজাত করে তা আবার বাজারেও বিক্রি করছে। মিলারদের কাছে ধানের স্টক খুবই সীমিত। মিলারদের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় গুদামে বাড়তি ধান সংরক্ষণ করতে পারে নাই। ধান এখনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও কৃষকদের কাছেই রয়েছে।

তাহলে চালের দাম বাড়ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীমিত আমদানির কারণে যে যেভাবে পারছে ধান কিনছে। কখনো কেউ বেশি দাম দিয়ে ধান কিনছে, ফলে অনেক সময় বাজারে সেই প্রভাব পড়ছে। আমন ধানও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছে। ধান যদি সে সময় উঠত তাহলে এ সমস্যা হতো না।