কমলাপুর রেলস্টেশনে অপ্রতুল ডিজিটাল স্ক্রিন
যাত্রীদের সুবিধার্থে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রয়েছে বেশ কিছু ডিজিটাল এলইডি স্ক্রিন। ট্রেনের সময়সূচী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসব স্ক্রিনে দেখানো হয়। এখান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ট্রেন বিষয়ক তথ্য জানার অন্যতম মাধ্যম এই ডিজিটাল স্ক্রিনগুলো। কিন্তু এসব ডিজিটাল স্ক্রিন অপ্রতুল হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে দেখা গেছে, যাত্রীসংখ্যার তুলনায় স্ক্রিনসংখ্যা কম। আবার অনেক স্ক্রিন ঠিকমত কাজ করছে না। অনেক স্ক্রিনে আবার চলছে বিজ্ঞাপন। আবার এসব স্ক্রিনের তথ্য সময়মত হয় না হালনাগাদ।
যাত্রীদের কোলাহলে মাইকে জরুরি ঘোষণাগুলো অস্পষ্ট শোনায়। অনেকে আবার এই অস্পষ্ট ঘোষণা ভালোভাবে না শুনে বিভ্রান্ত হন। কাউকে কাউকে দেখা গেছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যদের নিকট ট্রেনের সময়সূচী জিজ্ঞেস করতে। এই স্টেশনে প্রথমবার আসা যাত্রীরা ঠিকমত দিক-নির্দেশনা পান না, এমনটাও শোনা যায়।
দিনাজপুর যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রী নাজিম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-এর কাছে জানান তার অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘রেলে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। ফলে মানুষ এখন অনলাইনে টিকিট কিনতে পারে, এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারে ট্রেনের অবস্থান। তবে স্টেশনের অবকাঠামো-কেন্দ্রিক ডিজিটাল সেবার কিছুটা কমতি রয়েছে।’
ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করা এক যাত্রী আসিফ ইমতিয়াজ বলেন, ‘আরামদায়ক হওয়ায় ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করতে পছন্দ করি। তবে যারা ট্রেনে ভ্রমণ করেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন ট্রেনে ওঠার ক্ষেত্রে ডিজিটাল স্ক্রিন অথবা মাইকিংয়ের মত নির্দেশনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যাত্রীদের কাছে। কিন্তু কমলাপুর স্টেশনে ডিজিটাল স্ক্রিনের স্বল্পতা রয়েছে এবং যেগুলো আছে সেগুলো ৩২ ইঞ্চি সাইজের, ফলে আমাদের ট্রেনের নির্দেশনা দেখতে কিছুটা সমস্যা হয়। তাই বিশেষ করে কমলাপুর রেল স্টেশনের ভেতরে বড় বড় ডিজিটাল স্ক্রিন আরও বাড়ানো উচিত।’
রাশেদ হাসান নামের আরেক যাত্রী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মাঝে মাঝে স্টেশনে এসে দেখি ডিজিটাল টিভিগুলো বিকল হয়ে আছে, তখন সবচেয়ে বেশি আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ কোন ট্রেন কোন প্লাটফর্মে এসেছে আমরা জানতে পারি না। তা ছাড়া স্টেশনে সেই অর্থে কোন তথ্যকেন্দ্র নেই, যেখান থেকে আমরা তথ্য পেতে পারি। যেটা আছে তার সেবার মান অনেক খারাপ। তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে সব সময় দায়িত্বরত কাওকে পাওয়া যায় না। তাই সঠিক তথ্য পেতেও সমস্যা হয়।’
দেশের অন্যতম বড় রেল স্টেশন কমলাপুর। এই স্টেশন থেকে হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে যায়। বলতে গেলে বাংলাদেশে ট্রেন ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র এই স্টেশন।
কমলাপুর রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে ২০/২০ ইঞ্চি সাইজের দুটি ডিজিটাল স্ক্রিন রয়েছে, যার একটিতে ট্রেনের টাইম-সিডিউল এবং অপরটিতে বিজ্ঞাপন চলে। স্টেশনের ভেতরে প্লাটফর্মের দিকে ৩২ ইঞ্চির চার জোড়া ডিজিটাল স্ক্রিন রয়েছে। তাছাড়াও ভিআইপি এবং এসির কেবিনে যাত্রীদের ওয়েটিং রুমে একজোড়া করে ডিজিটাল স্ক্রিন রয়েছে এবং ভিআইপি গেটে একজোড়া স্ক্রিন রয়েছে।
জানতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ডিজিটাল স্ক্রিন বা টিভি বাড়ানোর ব্যাপারে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। রেল কর্তৃপক্ষ স্টেশনের ভেতরের দিকে ২০/২০ ইঞ্চি সাইজের ৩টি ডিজিটাল স্ক্রিন বসানোর আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করছি শিগগিরই বাড়বে ডিজিটাল স্ক্রিনের সংখ্যা।’
তিনি আরো বলেন, ‘কমলাপুর স্টেশনে বর্তমানে ২০টি টিকিট কাউন্টার আছে। লোকবল বাড়িয়ে টিকিট কাউন্টারের সংখ্যা আরো বাড়ানো গেলে যাত্রীদের টিকিট পেতে সময় কম লাগবে। যাত্রীদের টিকিট কাটার প্রবণতা আগের থেকে বাড়বে। তাছাড়া আমাদের যে তথ্য কেন্দ্র আছে, সেখানেও লোকবল বাড়িয়ে আরো সমৃদ্ধ করা যেতে পারে। এ সব বিষয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি তারা ব্যবস্থা নেবেন।’
রেলের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মোহাম্মদ শাহজাহান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘দেখুন আমি রেল থেকে অবসর গ্রহণ করেছি দীর্ঘদিন হলো। আমাদের দায়িত্বকালে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী ডিজিটাল স্ক্রিন পর্যাপ্ত ছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে রেলে এখন যাত্রী বেড়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনের নির্দেশনা সম্বলিত ডিজিটাল স্ক্রিন আরো বাড়ানো উচিত।’
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কমলাপুর স্টেশনে ডিজিটাল স্ক্রিনের অপ্রতুলতা বিষয়ে আমার জানা নেই। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আমাদের মাসিক যে মিটিং হয় সেখানেও এই ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে এই বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো, যদি প্রয়োজন হয় নিশ্চয়ই ডিজিটাল স্ক্রিন বাড়ানো হবে।’