মেয়েরা অনেক ‘না’ শুনে বড় হয়: দীপু মনি
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মেয়েরা এখনও অনেক ‘না’ শুনে বড় হয় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি।
তিনি বলেন, মেয়েদেরকে সবকিছুতেই না শুনতে হয়। হেসো না, জোরে কথা বলো না, এখন বাইরে যেয়ো না, একা কোথাও যেয়ো না; আরও কত কিছুতে যে মেয়েদেরকে না শুনতে হয়, তার হিসেবে নেই।
রোববার (১ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ২ এবং ৪ নম্বর গ্যালারিতে নারীদের নিয়ে গঠিত ভ্রমণ দল, ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যার পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজিত ‘ট্রাভেল এন্ড ট্রাভেলার্স ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন সিজন থ্রি’-এর সমাপণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. দীপু মনি মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলেন,পারি না এ কথাটি যেনো বাংলার কোনো মেয়ে আর না বলে। চাইলেই পারি এবং আমি স্বপ্ন দেখবো। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবো। এমনটাই সব মেয়ের চিন্তা করা উচিত। আমরা অনেক দূরে এগিয়ে গিয়েছি কিন্তু এখনও কিছু কিছু জায়গায় মেয়েদেরকে ‘না’ শুনে বড় হতে হয়। আমি চাই ভবিষ্যতে মেয়েরা সব কিছুতে বলবে ‘হ্যাঁ’ আমি পারি, আমি করব।
ভ্রমণকন্যাদের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, সব ‘না’গুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছে ভ্রমণকন্যারা। বাংলাদেশ যে এতো সুন্দর, এই দেশটাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ভ্রমণকন্যাদের একটি বিশেষ অবদান আছে। মানসী এবং সাকিয়ার (ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা) কর্মকাণ্ডে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশের সব স্কুলে ওরা যাবে এবং বাচ্চাদেরকে সচেতন করবে; এর মানে হলো- আমার কাজটা ওরা অনেকটা সহজ করে দিলো। আমি আশায় থাকলাম সাকিয়াদের এই কাজের সঙ্গী হবার।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন মানসম্মত শিক্ষার কথা বলি তার মধ্যে অনেক কিছু থাকে। আর মানসম্মত পাঠক্রমের চেষ্টা করছি, পদ্ধতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছি, অবকাঠামোর উন্নয়ন করছি কিন্তু ভ্রমণকন্যারা যেভাবে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওরা আসলে মেয়েদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে, মেয়েরা কি পারে। মেয়েদের মনের চারপাশে সমাজের তুলে দেওয়া দেয়াল যেভাবে রাষ্ট্র ভাঙতে চাইছে সেই ভাঙার কাজকে অনেকটা সহজ করে দিচ্ছে ভ্রমণকন্যারা।
ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ- ভ্রমণকন্যা প্রতিষ্ঠাতা ডা. সাকিয়া হক এবং ডা.মানসি সাহা তুলি জানান, ঢাকা মেডিকেলের হলে বসে আমরা এমন একটি সংগঠনের স্বপ্ন দেখেছিলাম যা আজ চতুর্থ বছরে পদার্পণ করল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মেয়েদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম করার যার মাধ্যমে মেয়েরা ঘরের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে বেরোতে পারবে। আমাদের সদস্য সংখ্যা ৪৫ হাজার।
তারা আরও জানান, ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রজেক্ট। যার মাধ্যমে এরই মধ্যে স্কুটিতে করে আমরা ৬৪টি জেলার একটি করে স্কুলে গিয়েছি এবং বাচ্চাদের সঙ্গে সচেতনতামূলক কথা বলেছি। ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশের সব স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করব।
ফটো এক্সিবিশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। তিন ক্যাটাগরিতে পাঁচজন করে মোট ১৫ জনকে ক্রেস্ট ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ডিএসএলআর ফটোগ্রাফি, মোবাইল ফটোগ্রাফি এবং ভ্রমণ কাহিনী।
ডিএসএলআর ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন ডক্টর মাজহারুল ইসলাম জিওন,দ্বিতীয় নাসির আহমেদ সৌরভ, তৃতীয় আব্দুল্লাহ আল মামুন সুমণ, চতুর্থ খোরশেদ আলম সাগর এবং পঞ্চম হয়েছেন পুষ্পা আলম।
মোবাইল ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন এম ডি রমজান আলী রায়হান, দ্বিতীয় জয় কর্মকার, তৃতীয় খান ফাহিম, চতুর্থ ফিলিপিয়ান নাগরিক গ্লাডিস ফ্রান্সিস্কো, পঞ্চম হয়েছেন শামীমা সুলতানা।
ভ্রমণ কাহিনী ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন প্রাপ্তি আহমেদ, দ্বিতীয় তাসনিয়া আহমেদ, তৃতীয় উম্মে হাবিবা সিনথিয়া, চতুর্থ শিবলী জান্নাত এবং পঞ্চম হয়েছেন শাহনাজ ফেরদৌস।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয় এরপর বিভিন্ন পর্যায়ে গান এবং নৃত্য পরিবেশিত হয় সেই সঙ্গে ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশের ভ্রমণ নিয়ে ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া ভ্রমণকন্যার থিম সং পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, সৈয়দা রুবিনা মিরা, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব প্রমুখ।