নতুন সড়ক আইন: আমলে নিচ্ছে বড় অপরাধ, কমছে মামলা 

  • শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চালকদের সতর্ক করছেন পুলিশ সদস্যরা/ছবি: সুমন শেখ

চালকদের সতর্ক করছেন পুলিশ সদস্যরা/ছবি: সুমন শেখ

নতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ অনুযায়ী আইন লঙ্ঘনকারীদের মামলা দেওয়া শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। তবে এ আইনে কিছুটা রয়ে-সয়ে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। ডিএমপির চারটি ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটিতে প্রতিদিন হাজারের বেশি মামলা হত। এখন প্রতিটি ডিভিশনে দিনে গড়ে ৫০টির মতো মামলা হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর থেকে এভাবেই সীমিত পরিসরে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ শুরু করেছে পুলিশ।

নতুন আইনটি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হলেও এতদিন আইন লঙ্ঘনকারীদের মামলা দেওয়া থেকে বিরত ছিল পুলিশ।তাই এ আইনে পুরো নভেম্বর মাসে মামলা হয়েছে হাজার খানেক। যেখানে তার আগের মাসেও মামলা হয়েছিল এক লাখ ৮৭ হাজার।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হাতে লেখা কেস স্লিপ দিয়ে মামলাগুলো করা হচ্ছে। বড় কোন অপরাধ ছাড়া কাউকে মামলা দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া  সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনাই মেনে নতুন আইনের সীমিত প্রয়োগ করা হচ্ছে। পরে সবুজ সংকেত পেলে পূর্ণ মাত্রায় আইনের প্রয়োগ করা হবে।

এদিকে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে নির্ধারিত মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা কমিয়ে একটি চার্ট তৈরি করেছে ডিএমপি। ওই চার্টে লাইসেন্স না থাকার জন্য নতুন আইনে ২৫ হাজার টাকার শাস্তির পরিবর্তে প্রথমবার ৫ হাজার, দ্বিতীয়বার ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না থাকলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ডের পরিবর্তে চার্টে প্রথমবার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয়বার ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন আইনের বিদ্যমান জরিমানাকে ডিএমপি নিজস্ব ফরমেটে রূপ দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আইন প্রয়োগে শিথিলতার বিষয়ে বিআরটিএ এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বাড়াতে এ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

তবে সূত্র বলছে, আইনের কঠোর প্রয়োগ হলে ফের গাড়ি বন্ধ করে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এ আশঙ্কা থেকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

বার্তা২৪.কমকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, আমরা গণপরিবহনকে ছোট ছোট অপরাধেও মামলা দিচ্ছি। তবে মাথায় রাখছি জরিমানা এক হাজার টাকার মধ্যে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা দিচ্ছি বাসের দরজা খোলা রাখার অপরাধে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিআরটিএ চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান বলেছেন, জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছিল। তাই মামলা কম। তবে আগামী দিনগুলোতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে।

এদিকে প্রায় একই কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।

কিন্তু তাদের সঙ্গে একমত হতে পারেননি নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুর্বল প্রয়োগে আইনটি শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী দ্রুতই আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন কার্যকরের পর প্রথম কয়েক দিন জরিমানার ভয়ে রাস্তায় গাড়ি সুশৃঙ্খলভাবে চললেও, আইনের প্রয়োগ না থাকায় আবার নৈরাজ্য ফিরে এসেছে। বিশেষ করে গণপরিবহন যেমন খুশি তেমন চলছে। সড়কে ফের ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালক ফিরে এসেছে।

অন্যদিকে রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, আসাদগেট, রামপুরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ মামলা করার চেয়ে এখনো কাউন্সেলিংয়ের ক্ষেত্রেই জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে মোটা অঙ্কের জরিমানা করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এমন মামলার ক্ষেত্রে পুলিশের এসি অথবা এডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মামলাসহ সার্বিক বিষয় তদারকি করছেন।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। দিন যাবে পুলিশ আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করবে।