টিপু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে রাজশাহীতে মিষ্টি বিতরণ

  • স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বোয়ালিয়া থানাধীন রাণীনগর শহীদ মিনারে অবস্থান নেন শহীদ পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা

বোয়ালিয়া থানাধীন রাণীনগর শহীদ মিনারে অবস্থান নেন শহীদ পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা

রাজশাহীর চিহ্নিত রাজাকার ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকারের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হামলা ও নির্যাতনের শিকার শহীদ পরিবার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বাসিন্দারা। রায় ঘোষণার পরপরই বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর রাণীনগর শহীদ মিনার চত্ত্বরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। এসময় শহীদ পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে উল্লাস প্রকাশ করেন।

এর আগে সকাল থেকে নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন রাণীনগর শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যরা। রায় ঘোষণার পর তাঁরা প্রতিক্রিয়ায় জানান, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এ রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।

বিজ্ঞাপন

মামলার সাক্ষী নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার জয়নাব বলেন, ‘আমরা সেসময় দেখেছি প্রকাশ্যে টিপু রাজাকাররা ঘুরে বেড়াতো। আমাদের খুব খারাপ লাগতো, কষ্ট লাগতো। তবে ভয়ে আমরা কিছু করতে পারতাম না। মামলায় সাক্ষী দেওয়ার পরও ভয়ে এলাকায় থাকা দায় ছিল। এখন ফাঁসির রায় হয়েছে, আমি খুশি। তবে দ্রুত রায় বাস্তবায়ন করা হলে খুশি হবো।’

টিপু রাজাকারের হাতে নিহত শহীদ মন্ডলের ছেলে শাহ জামান বলেন, ‘আমার বাবাকে তারা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। তার মরদেহের কোন হদিস এখনও পাইনি আমরা। ওই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল টিপু রাজাকার। তাঁর ফাঁসির রায় হওয়ায় খুব খুশি আমরা। অন্তত আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বলেন, ‘৭১-এ প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, তাদের পরিবারের ওপর নির্যাতন চালাতো টিপু রাজাকার ও তার দলবল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল ছিলো তাদের। সেখানে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হতো। এই রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। দ্রুত তার রায় কার্যকরের দাবির পাশাপাশি গ্রামগঞ্জে আরও যে রাজাকার আছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলে পাকিস্তানি বাহিনীর টর্চার সেল থেকে ফিরে আসা তৎকালীন ছাত্রনেতা লিয়াকত আলী লিকু। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। লিয়াকত আলী লিকু বলেন, ‘রাজশাহীর চিহ্নিত রাজাকার ছিলো টিপু। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলো। সে যুদ্ধের সময় বিভিন্ন পরিবারের ওপর হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মূলহোতা ছিলো। এই রাজাকারের ফাঁসিতে রাজশাহী অনেকটা কলঙ্কমুক্ত হলো। অতিদ্রুত এই রাজাকারের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখতে চাই।’

জানা যায়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা রাজশাহীর আবদুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৪১তম রায়। টিপু রাজাকারের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ১০ জনকে হত্যা, দু’জনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালপত্র লুট করে আগুন দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

এদিকে, টিপু রাজাকারের রায় ঘিরে রাজশাহী নগরীতে নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর একটি স্কুলে গোপন বৈঠককালে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারীসহ ১০ নেতাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা টিপু রাজাকারের রায় ঘিরে রাজশাহীতে নাশকতার ছক কষতে বসেছিল বলে দাবি পুলিশের।