অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ: ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনের ছাত্রত্ব বাতিল
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে টেনেহিঁচড়ে পুকুরে ফেলার ঘটনায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ চার শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত আরও ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর সনদপত্র তিন বছর স্থগিত এবং সাত শিক্ষার্থীকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিয়ে অন্য ইন্সটিটিউটে বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইনস্টিটিউটে সব ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যক্ষ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত ৯ ডিসেম্বরের একাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ও সরকারের শিক্ষা অধিদফতরসহ উচ্চপর্যায়ে চিঠি আকারে পাঠানো হয়েছে।’
স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত চারজন হলেন- রাজশাহী পলিটেকনিক ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক (বহিষ্কৃত) ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ইলেক্ট্রো মেডিকেল বিভাগের রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের মেকানিকেল বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।
তিন বছর সনদপত্র স্থগিতের শাস্তিপ্রাপ্তরা হলেন- ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের মারুফ হোসেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ঘটানার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগে তারা প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়ায় আগামী তিন বছর তাদের মূল সনদপত্রসহ অন্যান্য একাডেমিক কাগজপত্র আটকে রাখা হবে।
অন্য ইন্সটিটিউটে বদলিকৃতরা হলেন- ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের পাওয়ার বিভাগের ৬ষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-২০১৭ সেশনের ইলেকট্রনিক্স ৭ম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডু, মেকাট্রনিক্স ৭ম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের মেহেদী হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের ৩য় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার ৩য় পর্বের মাসুদ রানা। তাদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলার ঘটনায় পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
রাজনীতি নিষিদ্ধ
টর্চার সেল ভেঙে করা হবে কমন রুম: এদিকে, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ ও একাডেমিক এবং প্রশাসনিক পরিষদের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দকেও চিঠি দিয়ে জানানো হবে। পুলিশ প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহযোগিতা চাইবে ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ।
ইন্সটিটিউটের দুইজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জানান, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়- প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি চলমান রেখে সুষ্ঠুভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। কমপক্ষে আগামী পাঁচ বছর পলিটেকনিক ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রাখা উচিত। এছাড়া ছাত্রলীগের টর্চারসেল হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ১১১৯ নম্বর কক্ষটি অতিদ্রুত ভেঙে তা ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত করে কমনরুমের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। পরিষদে এগুলো নিয়ে আলোচনা শেষে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত রাজনীতি বন্ধ ও টর্চারসেল ভেঙে কমনরুম করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
জানা যায়, মিডটার্ম পরীক্ষা ফেল এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাসে উপস্থিত না থেকেও ছাত্রলীগ নেতা কামাল ও অপর এক ছাত্রলীগ কর্মীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সুযোগ দিতে অধ্যক্ষকে চাপ দেয় তারা। তাদের অন্যায় আবদার না মানায় গত ২ নভেম্বর নামাজ শেষে কার্যালয়ে ফেরার সময় অধ্যক্ষকে রাস্তা থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার দিন রাতেই নগরীর চন্দ্রিমা থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। মামলাটি বর্তমানে মহানগর ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে। মামলায় এ পর্যন্ত প্রধান আসামিসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।