সংসদের আধুনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় ১২৪ কোটি

  • রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় সংসদ ভবন

জাতীয় সংসদ ভবন

জাতীয় সংসদ ভবনের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনতে চায় সরকার। ভবনের বৈদ্যুতিক সংস্কারেই সরকার ব্যয় করবে ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের আধুনিকায়ন, প্রি-পেইড মিটার স্থাপনসহ সংসদ ভবনের সংস্কার, অবকাঠামো নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনে চলতি বছর থেকেই একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে।

‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন, সংসদ সদস্য ভবন ও এমপি হোস্টেলসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনার নির্মাণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্য ভবন নং- ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ এর পূর্ত কাজ (টাইলস পরিবর্তন, কেবিনেট, এবং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা), অভ্যন্তরীণ আধুনিকীকরণ বৈদ্যুতিক কাজ (এলইডি এবং ইন্টারকম), সংসদ সদস্য ভবন নং- ১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ এর বহিঃস্থ বৈদ্যুতিকসহ অন্যান্য ই/এম কাজ, গণপূর্ত কর্মচারী ও জাতীয় সংসদ ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য ঢাকা মনিপুরী পাড়াস্থ খেজুর বাগান সংলগ্ন এলাকায় ৯ তলা বিশিষ্ট দুটি ভবন নির্মাণ, জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পার্শ্বস্থ আবাসিক এলাকা ও আরবরিকালচার কম্পাউন্ড এবং খেজুর বাগান এলাকায় ভবন সংলগ্ন সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, এমপি হোস্টেলের এলডি-২ (কমিউনিটি সেন্টার) ও এলডি-৩ (পার্লামেন্ট মেম্বার ক্লাব) এর আধুনিকায়ন, জাতীয় সংসদ ভবনের বৈদ্যুতিক আধুনিকায়ন, জাতীয় সংসদের এবং এমপি হোস্টেল ক্যাম্পাসে ল্যান্ডস্কেপিং/সবুজায়নের কাজ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৯২ লাখ ৭ হাজার টাকা। এর শতকরা ৫৩ দশমিক ২৮ ভাগ অর্থ ব্যয় হবে সংসদ ভবনের বৈদ্যুতিক সংস্কারে। এছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য খাতেও বৈদ্যুতিক সংস্কার কাজেও পৃথক অর্থ ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পের ব্যয়বিবরণী থেকে দেখা যায়, প্রকল্পটির বৈদ্যুতিক নকশা তৈরিতে থোক বরাদ্দ আছে ২ লাখ টাকা। এছাড়া সংসদ সদস্য ভবন নং ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬-এর অভ্যন্তরীণ আধুনিকীকরণ, বৈদ্যুতিক কাজ (এলইডি এবং ইন্টারকম) স্থাপনে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, সংসদ সদস্য ভবন নং- ১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ এর বহিঃস্থ বৈদ্যুতিকসহ অন্যান্য ই/এম কাজ ২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, খেজুর তলা, বটতলা এবং আমবাগানে অবস্থিত বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের আধুনিকায়নে ২ কোটি টাকা, গণপূর্ত কর্মচারী ও জাতীয় সংসদ ভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য ঢাকা মনিপুরী পাড়াস্থ খেজুর বাগান সংলগ্ন এলাকায় ৯ তলা বিশিষ্ট দুটি ভবনের বহিঃস্থ বৈদ্যুতিক কাজে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পটি নিয়ে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে আসে। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভায় আলোচনা করা হয়। সভায় প্রকল্পটি ডিপিপি সংশোধনীর জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল খেজুর তলা, বটতলা এবং আমবাগানে অবস্থিত বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের আধুনিকায়ন।

সভাসূত্রে জানা গেছে, সংসদ সচিবালয়ের চাহিদা ছিল চারতলা ভিত বিশিষ্ট নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ। যাতে খরচ ধরা হয়েছিল ৯ কোটি ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। কিন্তু পিইসি সভায় সেটি নাকচ করে বিদ্যমান সাব-স্টেশনগুলো আধুনিকায়নের কথা বলা হয়।

পিইসি সভা শেষে প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠাকামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস মতামত দেন যে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে জাতীয় সংসদ ভবন, সংসদ সদস্য ভবন ও এমপি হোস্টেলের আধুনিকায়নের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য বলেও তিনি সুপারিশ করেন।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য তোলা হয়। সভায় একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এমনকি বিদ্যুতখাতে ব্যয়ের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণও তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান।

একনেক সভা সূত্রে জানা যায়, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাঝে মধ্যে বিল টিল নিয়ে সমস্যা হয়। আমি তো বিদ্যুত বিভাগেরও মন্ত্রী বটে। আমরা প্রিপেইড মিটার লাগাচ্ছি, এখানে কেন লাগাব না? এখানেও লাগাব।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের বৈদ্যুতিক সংস্কার কাজে প্রিপেইড মিটার লাগানোর আদেশ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের সংসদ ভবনের অফিসগুলোতে, বাসভবনগুলোতে প্রিপেইড মিটার লাগান। দিস ইজ দ্য অর্ডার। এটা ভেরি ভেরি ইমপরট্যান্ট। জনগণ যদি প্রিপেইড মিটারে দেয় সংসদ তাহলে কেন দেবে না?’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, সংসদ ভবনের আধুনিকায়নে একটি প্রকল্প মঙ্গলবার একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্পটি একনেক সভায় উঠলে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির খুঁটিনাটি জানতে চান। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি সংসদ ভবন, সংসদ সদস্যদের বাসা, অফিস, এমপি হোস্টেল সবখানেই প্রিপেইড মিটার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।