কদর বেড়েছে গোবরে তৈরি মুঠে-ঘুটের

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাছে মুঠে-ঘুটের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাছে মুঠে-ঘুটের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

গরু ও মহিষের গোবরে তৈরি প্রাকৃতিক জ্বালানি মুঠে-ঘুটের কদর দিন দিন বাড়ছে। একসময় নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন রান্নার জন্য গোবর কুড়িয়ে এনে মুঠে-ঘুটে তৈরি করতো। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস, কাঠ ও অন্যান্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে গ্রামের গরু পালনকারী অধিকাংশ পরিবার এটি তৈরি করছে।

গোবর চটকে শুকনা লম্বা কাঠির গায়ে মুষ্টি মুষ্টি করে লাগিয়ে জ্বালানির যে উপকরণ তৈরি হয়, তাকে বলে মুঠে বা মুইঠ্যা। আবার হাতের তালুতে গোবর নিয়ে গাছ, বেড়া কিংবা দেয়ালে লেপ্টে শুকিয়ে যে জ্বালানি উপকরণ তৈরি হয় তাকে বলে ঘুটে বা ঘুইঠ্যা। মুঠে-ঘুটে পাঁচ থেকে সাত দিন রোদে শুকানোর পর জ্বালানির উপযোগী হয়।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলা ও পৌর শহরের যেসব বাড়িতে গরু ও মহিষ লালন পালন করা হয়। সেসব বাড়ির বেশিরভাগ নারী ও শিশুরা মুঠে-ঘুটে তৈরি করে। অগ্রাহয়ণ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মুঠে-ঘুটে তৈরি হয়। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের জ্বালানি রেখে বাকি জ্বালানি বিক্রি করা দেওয়া হয়। এতে করে নিজের রান্নার কাজের জন্য যেমন জ্বালানি ঘাটতি থাকছে না। অপরদিকে পরিবারগুলো আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছে।

তৈরি করা মুঠে-ঘুটে বিক্রি করে আয়ও করছেন অনেকে

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) হিম্মত নগর, হাঁটশিরা, বাঘবেড়, কোনাপাড়া, লামাপাড়া, বোকাইনগর, মাছুয়াকান্দা সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মুঠে-ঘুটে তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী ও শিশুরা। মুঠে তৈরির আগে পরিমাপ মতো পাটখড়ি বা লাঠি কেটে গোবর ও তুষ (কুড়া) একসঙ্গে মিশিয়ে পাটখড়ি বা লাঠির গায়ে মুষ্ঠি মুষ্ঠি করে এঁটে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। কেউবা হাতের তালুতে গোবর নিয়ে দেয়াল কিংবা গাছের সঙ্গে লেপ্টে দিয়ে ঘুটে তৈরি করছেন।

বিজ্ঞাপন

হিম্মত নগর গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা আক্তার বলেন, আমার গোয়ালে কয়েকটা গরু আছে। গরুর গোবর দিয়া ডেইলি শখানেক মুইঠ্যা বানানো যায়। সংসারের কামের ফাঁকে ফাঁকে মুইঠ্যা বানাই। আমার ছোট বাচ্চাটাও আমারে সাহায্য করে। এতে কইর‌্যা আমার লাকড়ি কিনন লাগেনা। খরচ বাইচ্যা যায়।

পরিবারকে সাহায্য করতে বাড়ির শিশুরাও মুঠে-ঘুটে তৈরি করছে

কথা হলো হাঁটশিরা গ্রামের বাসিন্দা মিশুর সঙ্গে। তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষ। এখন কোনো কাজ নাই। গ্রামের আশেপাশে থেকে গোবর কুড়িয়ে এনে নিজেই মুইঠ্যা-ঘুইঠ্যা তৈরি করি। কয়েকদিন রোদে শুকালে রান্নার উপযোগী হয়। নিজেদের জন্য কিছু রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেই।

গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, মুঠে-ঘুটে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। এটি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। তবে এই জ্বালানির প্রচলন শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি। বর্তমানে জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের কৃষক ও গরু পালনকারী অধিকাংশ পরিবার মুঠে-ঘুটে তৈরি করছে।