সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসাও শুরু হয়েছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে লন্ডন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ তথ্য জানান।
ডা. জাহিদ বলেন, চিকিৎসকরা যতদিন দরকার মনে করবেন, খালেদা জিয়া ততদিন এ হাসপাতালে ভর্তি থাকবেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করার পর খালেদা জিয়ার বেশকিছু টেস্ট করা হয়েছে। ডাক্তাররা তাদের প্রাথমিক কার্যকম শুরু করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) থেকে তার যথাযথ চিকিৎসা শুরু করবেন তারা।
লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক কে এই অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি?
দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি একজন স্বনামধন্য লিভার বিশেষজ্ঞ। লিভারের ভাইরাসজনিত রোগ নিয়ে কাজের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর কেনেডি লন্ডনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। পরে ২০০৯ সালে বার্টস অ্যান্ড দ্য লন্ডন স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড ডেন্টিস্ট্রিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে তিনি যোগ দেন।
অ্যধ্যাপক কেনেডি ক্রনিক হেপাটাইটিস বি (সিএইচবি) রোগ নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার এ গবেষণার প্রধান লক্ষ্য ছিল লিভারের ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ পদ্ধতির বিকাশ ঘটানো। এ বিষয়ে ২০০টির বেশি গবেষণাপত্র, ৯০টির বেশি পিয়ার রিভিউড আর্টিকেলসহ একাধিক বই লিখেছেন তিনি। এ ছাড়া হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি নিয়েও একটি বই সম্পাদনা করেছেন এই চিকিৎসক।
ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, কেনেডি একজন ফিজিশিয়ান কনসালট্যান্ট এবং হেপাটোলজিস্ট হিসেবে আছেন। তিনি তরুণদের লিভার রোগ নিয়ে কাজ করছেন। পেশাদার ক্রীড়াবিদ ও প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের ক্লাবগুলোতেও তিনি লিভার রোগ নিয়ে কাজ করছেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানে খেলোয়াড়দের লিভার রোগ নিয়ে পরামর্শ ও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
কেনেডি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একজন বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা এবং এইচবিভি ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া ইউরোপীয় লিভার রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের এইচবিভি ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস গাইডলাইন কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
এর বাইরে ইউনাইটেড কিংডম অ্যাডভাইজরি প্যানেলের (ইউকেএপি) হয়ে রক্তের ভাইরাস রোগ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে থাকেন কেনেডি। তিনি বর্তমানে ব্রিটিশ ভাইরাল হেপাটাইটিস গ্রুপের চেয়ারম্যান।
কেনেডি লিভারের ভাইরাল রোগের অভিনব থেরাপি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি এই রোগের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল থেরাপির ফেজ ১, ২ ও ৩-এর প্রধান। তিনি এইচবিভি অ্যান্ড মি নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণা ও রোগীদের সঙ্গে সর্বাত্মক যোগাযোগ রেখে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্যাট্রিক কেনেডির রোগী দেখার ফি কত, তাও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, তার রোগী দেখার ফি ৩৫০ পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫২ হাজার ৫৪৯ টাকা প্রায়। আর রোগীর ফলোআপে কেনেডি ফি নেন ২৫০ পাউন্ড বা ৩৭ হাজার ৫৩৫ টাকা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সময় বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান খালেদা জিয়া। এ সময় তাকে স্বাগত জানাতে তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।
রাজবাড়ীতে তিন দিনব্যাপী শুরু হওয়া তারুণ্যের মেলার শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি)। মেলার শেষ দিনের সকালেই মেলা প্রাঙ্গনে দর্শনার্থীর ভিড় বেড়েছে।
৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে আজ ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়।
'এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই'- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর সহযোগিতায় রাজবাড়ী সরকারী কলেজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মেলা।
কলেজের মূল ফটক পার হলেই একাডেমিক ভবনের সামনে মুক্তমঞ্চের ওপর মঞ্চ বানানো হয়েছে। মুক্তমঞ্চের সামনে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাস নিয়ে তাদের তৈরিকৃত জিনিসপত্র প্রদর্শনী করেছেন। এছাড়া মেলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি স্টলে আন্দোলনের ওপর ভিডিও চিত্র দেখানো হচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের খাবারও মেলায় প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। এছাড়া মেলায় ছাত্র সংগঠনে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে স্টল দেওয়া হয়েছে। স্টলে বিভিন্ন ধরনের বই, খাবারের পসরা সাজানো হয়েছে।
মেলা দেখতে আসা রাজবাড়ী সরকারী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, আবিদা সুলতানা, অমিত চক্রবর্তী, জাহিদ হাসানসহ কয়েকজন বলেন, তারুণ্যের মেলা উপলক্ষে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ঢল নেমেছে। শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাস। বিভিন্ন স্টলে হরেক রকমের পিঠাপুলিসহ নানান ধরনের খাবারের সমারোহ রয়েছে। এই প্রথম এই ধরনের মেলার আয়োজন করায় কলেজ কর্তৃপক্ষকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আগামীতেও যেন এ ধরনের মেলার আয়োজন করা হয় সেই প্রত্যাশা রইলো।
রাজবাড়ী সরকারী কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, এই প্রথম কলেজে তারুণ্যের মেলা শুরু হয়েছে। মেলা উপলক্ষে কলেজে অনেকগুলো স্টল বসেছে। অনেক শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীদের আগমন ঘটেছে মেলায়। দেখে খুব ভালো লাগছে। আগামীতে এই মেলা যেন আরও বৃহৎ পরিসরে হয় সেই প্রত্যাশা রইলো।
তারুণ্যের মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক রাজবাড়ী সরকারী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী এই তারুণ্যের মেলা গত ৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। মেলায় কলেজের প্রত্যেকটি বিভাগ, ছাত্র সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মোট ২১টি স্টল রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই মেলা চলবে।
আগামী ৯ জানুয়ারি মেলা শেষ হবে। মেলায় শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবনী জিনিস প্রদর্শন করেছে। এছাড়াও এই তারুণ্যের মেলায় শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের হাতে বানানো হরেক রকমের পিঠাপুলি মেলার স্টলে রেখেছে। শিক্ষার্থীরা ভালো সারা দিচ্ছে। আমি আশা করি জমজমাটভাবেই মেলার সমাপ্তি হবে।
পিঠা উৎসবে শিশুরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে ঘুরছে। নতুন নতুন নামের পিঠা দেখে উৎসাহিত হচ্ছে তারা। কেউ আবার পিঠা খেয়ে স্বাদ নিচ্ছেন। নানা স্বাদের বাহারি পিঠা নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছিল স্কুলের ছাত্রদের অভিভাবকরা। নারী উদ্যোক্তারা এবং শখের বসে বেশ কিছু গৃহিণীও আসেন পিঠা মেলায় অংশ নিতে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ওহাব মাতুব্বর (৬৮) নামের এক কেয়ারটেকারের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে ভাঙ্গা থানা পুলিশ।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের আলেখারকান্দা গ্রাম থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওহাব মাতুব্বর তুজারপুর গ্রামের বাসিন্দা ও নাসিরাবাদ আলেখারকান্দা গ্রামের প্রয়াত ডাক্তার জামাল উদ্দিন খলিফার বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। জামাল উদ্দিন পিজি হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ডাক্তার জামাল উদ্দিন কয়েক মাস আগে মারা যান। খলিফা মারা যাওয়ার পর তার ৩ তলা বাড়িটি ফাঁকা থাকতো। জামালের দুই মেয়ে তারা তাদের পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। তাই ওই বাড়ির দেখভাল করার জন্য ওহাব মাতুব্বর বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, প্রতিদিন বাড়িটিতে অনেক লাইট জ্বালানো হয়। ওই বাড়ির লাইটে আশেপাশে আলোকিত হয়ে যায়। গত তিনদিন যাবত বাড়িটি সন্ধ্যার পরেও অন্ধকার থাকতো। গতকাল রাতেও বাড়িটি অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। পরে তারা কয়েকজন মই দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলে দুর্গন্ধ পায়। তৎক্ষণাত ভাঙ্গা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনতলার সিড়ির রেলিং এর সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা ওহাব মাতুব্বরের মরদেহ উদ্ধার করে। তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাঙ্গা সার্কেল মো. আসিফ ইকবাল জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ফাঁকা বাড়িতে চুরি করার উদ্দেশ্যে এসে দুর্বৃত্তের হাতে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। গতকাল রাতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় জামিন নিতে গিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ৩ আওয়ামী লীগ নেতাকে।
তারা হলেন- গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মোল্লা (৪৮), দৌলতদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসারফ হোসেন মূসা (৫১) ও গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা (৪৫)।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল ইসলাম। বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাজবাড়ী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে গেলে বিচারক তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
তিনি জানান, গোয়ালন্দে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার মামলায় এজাহার নামীয় ৩ জন আসামি বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে গেলে বিচারক তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ওই মামলার মোহাম্মদ আলী ১৩ নম্বর, মোসারফ হোসেন মূসা ২৩ নম্বর ও মো. নুরুল ইসলাম মোল্লা ৩৪ নম্বর আসামি ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বেলা ৩টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংলগ্ন গোয়ালন্দ রেলগেটের পাশে মসজিদের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।
এ ঘটনায় গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মো. শাহজাহানের ছেলে রাজবাড়ী সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১০ ডিসেম্বর ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের করে।