মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত নাদিয়া সোবহান



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
নাদিয়া সোবহান/ছবি: সংগৃহীত

নাদিয়া সোবহান/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকার জর্ডানে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ উইংয়ের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহানকে নিয়োগ দিয়েছে। 

তিনি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত।

নাহিদা সোবহান একজন পেশাদার কূটনীতিক। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের অন্তর্ভুক্ত। কূটনৈতিক জীবনে নাহিদা সোবহান রোম, কলকাতা এবং জেনেভাতে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন সক্ষমতা অর্জন করেন।

নাহিদা সোবহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি নেদারল্যান্ডসের হেগ একাডেমি অফ ইন্টারন্যাশনাল ল-এ পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং ফ্রান্সের প্যারিসের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউট থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তিনি ফরাসি, ইংরেজি এবং বাংলা ভাষায় সাবলীল।

   

চট্টগ্রামে স্ত্রীকে খুনের মামলায় স্বামীর যাবজ্জীবন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে খুনের মামলায় স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড একটি আদালত। একই রায়ে আদালত মামলা অন্য আসামি হুমায়ুন কবিরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ সরওয়ার আলম এ রায় দেন বলে নিশ্চিত করেছেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ভূপাল চন্দ্র চৌধুরী।

দণ্ডিত সাইফুল ইসলাম (৩৮) মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জনার্দ্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা। খালাসপ্রাপ্ত হুমায়ুন কবির সাইফুলের চাচা।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম নাজমা আক্তার সঙ্গে সাইফুল ইসলামের ২০০৯ সালে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই সাইফুল নাজমাকে শারিরীক নির্যাতন করতেন। তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। এজন্য নাজমা প্রায়ই তার বাবার বাড়িতে গিয়ে থাকতেন। ২০১৩ সালের ১৮ জুন রাতে পারিবারিক কলহের জেরে নাজমাকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে সাইফুল। সুরতাহালে তার বুকের ডান পাশে ছুরিকাঘাতের জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নাজমার বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সাইফুল ও তার বাবা-মাসহ ছয়জনকে আসামি করে জোরারগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট সাইফুল ও তার চাচা হুমায়ুন কবিরকে আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার বিচার শুরু করার আদেশ দেন। ১৪ জনের সাক্ষী নিয়ে আদালত এ রায় দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত হুমায়ুন কবিরকে বেকুসুর খালাস দেন।

চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ১৫ বছর আগের স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আসামি সাইফুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই রায়ে আদালত আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাজা পরোয়ানামূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত সাইফুলের চাচা হুমায়ুন কবিরকে বেকুসুর খালাসের আদেশ দেন।

;

২৫ মণের ‘মেসির’ দাম ১০ লাখ



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মেসি বললেই চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকরের ছবি আর তারই অনবদ্য সব গোলের কীর্তি। লিওনেল মেসির ভক্ত তাই বিশ্বজুড়েই। সেই মেসিরই এক পাড় ভক্ত মোহাম্মদ ইসমাইল সন্তানসম মায়া-মমতায় বড় করে তোলা গরুটির নাম রেখেছেন প্রিয় ফুটবলারের নামেই। শুধু নামে নয়, গরুটি যেন মেসির মতোই দাপুটে। চট্টগ্রাম নগরীর এক কিলোমিটার এলাকার নুর নগর হাউজিং অ্যাস্টেটের মাঠে গরু-ছাগলের হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা আর দর্শনার্থী-সবার চোখ তাই চলে যাচ্ছে দশাসই গরুটির দিকেই। ‘মেসিকে ঘিরে সেলফি-ছবি তোলাও চলছে দেদারসে।

জমাট শরীর। ছোট্ট দুটো সরু সিং। পিঠের ওপর টানটান কুঁজ। পুরো শরীরজুড়ে সাদার ওপর হালকা কালো রঙের প্রলেপ। মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল দেখতে হৃষ্টপুষ্ট মেসি নামের এই গরুটির দাম হাঁকাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা। তার দাবি এই গরুটির ওজন ২৫ মণ।

সাতকানিয়ার চরতী এলাকা থেকে দুজন সঙ্গীকে নিয়ে মেসিসহ তিনটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন মোহাম্মদ ইসমাইল। এর মধ্যে মেসিই সবচেয়ে বড়। শুধু ইসমাইলের সঙ্গে থাকা গরুর মধ্যে নয়, এই বাজারে উঠা সবচেয়ে বড় গরুর একটি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে এলাকার নুর নগর হাউজিং অ্যাস্টেট মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মোটামুটি জমে উঠেছে গরুর বাজার। তবে মানুষ এখনো গরু দেখছেন বেশি, কিনছেন কম। জানিয়েছেন কেনার জন্য আরও একটু সময় নিচ্ছেন। হাটের একেবারে শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি খামারি বড় গরু নিয়ে এসে বিক্রির জন্য রেখেছেন। সেখানে অস্থায়ীভাবে শামিয়ানা টাঙিয়ে গরুগুলোকে রোদ-বৃষ্টি থেকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

হাটে প্রবেশ করে একটু এগিয়ে গেলেই হাতের বাম পাড়ে চোখে পড়বে মেসির। মাটিতে গা এলিয়ে ভুসি আর সাগু খাচ্ছিল গরুটি। সাংবাদিকেরা ক্যামেরা দেখতেই মালিক বসা থেকে গরুটিকে দাঁড় করিয়ে পুরো বাজার ঘোরালেন। এ সময় গরুটি দেখতে আশপাশের দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। কেউবা তোলেন ছবি, করেন ভিডিও।

কালো মানিক

এর ফাঁকে কথা বলেন মোহাম্মদ ইসমাইল। বলেন, দুই বছর আগে গরুটি কিনে নিজে লালন পালন করে বড় করে তুলেছি। এখন এটি প্রায় এক টন ওজনের হয়েছে। আমি দশ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছি। মাত্রই হাটে এলাম। আশা করছি চাহিদা অনুযায়ী দাম পাব।

এতো নাম থাকতে মেসি কেন-এমন প্রশ্নে একগাল হাসলেন চল্লিশোর্ধ ইসমাইল। বলেন, মেসি যেমন মাঠের রাজা, দেখতে সুদর্শন, তেমনি আমার গরুটা যেমন শক্তপোক্ত দেখতেও সুন্দর। মেসির মতো বলীয়ান বলেই মেসি নাম রাখা। আর মেসি আমার পছন্দের ফুটবলার, তাই সেই নামেই প্রিয় গরুটির নাম রেখেছি।

ইসমাইল জানান, মেসির প্রিয় খাবার ভুসি, সাগু আর মিষ্টি কুমড়া। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ টাকার খাবার খায় গরুটি।

মেসির বিপরীত পাশেই বিক্রি হচ্ছিল ‘কালো মানিক।’ কে না জানে কালো মানিক কার ডাক নাম। হ্যা, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী পেলেকে এই নামেই ডাকেন ভক্তরা। তবে কালো মানিকের ওজন মেসির চেয়ে বেশি হলেও দামটা একটু কমই আছে।

কুমিল্লার চান্দিনা থেকে কালো মানিককে নিয়ে এসেছেন কামাল হোসেন। এই খামারি সবমিলিয়ে ১২টি গরু এনেছেন। এর মধ্যেই একটি বিক্রি করেছেন। বাকি গরুগুলো আকারে বড় হলেও কালো মানিক ওজনে সবাইকে পেছনে ফেলছে।

কামাল হোসেন বলেন, চার বছর আগে চান্দিনায় একজনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকায় ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি কিনি। তারপর আমার বিসমিল্লাহ এগ্রো খামারে সন্তানের মতো আদর-ভালোবাসা দিয়ে গরুটিকে বড় করে তুলি। এখন প্রায় ২৭ মণ ওজন হয়েছে। দাম ৮ লাখ টাকা চাইলেও ছয় লাখ হলে বিক্রি করে দেব।

মেসি যেখানে ২৫ মণ হয়েও দাম ১০ লাখ দাবি করছে, সেখানে কালো মানিক ২৭ মণ হয়েও দাম কেন কম?-এমন প্রশ্নে মন খারাপের বিষণ্নতা ছড়িয়ে কামাল বললেন, মেসি সাদা, আমার কালো মানিক তো কালো!’ পাশে দাঁড়ানো দর্শনার্থী আবদুল মালেক যেন কামালের মন খারাপ দূর করার দায়িত্ব নিলেন। বলে উঠলেন, ‘এখন তো সময় মেসিরই। তার দাম তো একটু বেশিই হবে!’ এরপর হু-হু হাসি কামালের দুই ঠোঁটে। সেই হাসি সংক্রমিত হলো অন্যদের মুখেও...

;

ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে আসল আটকে পড়া ২৫০, গেলো ৩০০ মানুষ



আবদুর রশিদ মানিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে সেন্টমার্টিনে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আটকে পড়া আড়াইশো মানুষ ফিরেছে মূল ভূখণ্ডে। ৪টি ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে তারা এপারে পৌঁছে। অন্যদিকে টেকনাফে আটকে পড়া ৩০০ মানুষ ফিরেছে নিজভূমি সেন্টমার্টিনে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুর একটার দিকে ৪টি ট্রলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ছেড়ে এসে তিনঘন্টায় পৌঁছে টেকনাফে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে ট্রলারগুলো ভিড়তে পারেনি মিয়ানমারের ওপারে গোলাগুলির কারণে। পরে টেকনাফের সাবরাং মুন্ডারডেইল নৌঘাটে নোঙর করে ট্রলারগুলো। সেখানে গভীরতা এবং ঢেউয়ের কারণে ট্রলার ভিড়তে না পারায় ডিঙি নৌকায় করে সেই মানুষগুলোকে নিয়ে আসা হয় পাড়ে অন্যদিকে এপারে আটকে পড়া মানুষকে তুলে দেওয়া হয় ট্রলারে।


সেন্টমার্টিন ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ জানিয়েছেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেন্টমার্টিনে আটকে দ্বীপে কর্মরত বিভিন্ন এলাকার মানুষ এবং কিছু বাসিন্দা নিয়ে ৪টি ট্রলার নিয়ে ২৫০ জন মানুষ সাবরাং মুন্ডারডেইল নৌঘাটে আসে। সেখান থেকে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে তাদের কূলে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে টেকনাফ থেকে ৩০০ মানুষ সেন্টমার্টিনে পৌঁছেছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, ট্রলারে যারা এসেছে তারা মূলত বিভিন্ন কাজে গিয়ে সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছিল। এদিকে একই ট্রলারে করে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আরো অন্তত তিনশো যাত্রী টেকনাফ থেকে রওনা দেয় সেন্টমার্টিন এর উদ্দ্যেশে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গেল কয়েকদিন ধরে সেন্টমার্টিনে এসে আটকা পড়া এসব মানুষকে বিশেষ ব্যবস্থায় বিকল্প পথে ফেরানোর চেষ্টা চলছিল। অবশেষে আজ তারা ফিরতে পেরেছে। তবে দ্বীপের মানুষের জন্য এখন খাদ্য সহায়তা খুবই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের জলসীমায় নাফ নদীতে মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে, এসময় বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠে শাহপরীর দ্বীপ, এবং ওপারের তুমুল সংঘর্ষে গোলাগুলির শব্দও শোনা যায়।

এদিকে বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ গোলাগুলি আর মর্টারশেলের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছিলো সীমান্তের টেকনাফ। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সেই গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পায় স্থানীয়রা। এছাড়া নাফ নদীতে মিয়ানমারের একটি যুদ্ধ জাহাজ সকাল ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করছিল বলেও জানান স্থানীয়রা।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলছে। দুপক্ষের মর্টার শেল ও ভারী গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। রাতভর ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন দুই দ্বীপের বাসিন্দারা।

;

বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

নজিরবিহীন ১২৬৮৯ ভোট বাতিল, পুনরায় গণনার দাবি পরাজিত প্রার্থীর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
পুনরায় গণনার দাবি পরাজিত প্রার্থীর

পুনরায় গণনার দাবি পরাজিত প্রার্থীর

  • Font increase
  • Font Decrease

সদ্য অনুষ্ঠিত রংপুরে বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ হাজার ৬৮৯ ভোট বাতিল হয়েছে। একটি উপজেলায় এমন ভোট বাতিলের ঘটনা নজিরবিহীন বলে দাবি করছেন কলস প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী আফরোজা বেগম। তিনি ওই পদে পুনরায় ভোট গণনা করতে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাবরে আবেদন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আনীত অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফলাফলের গেজেট প্রকাশ না করতে ও অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিতের দাবি জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আফরোজা বেগম এসব কথা বলেন।

আফরোজা বেগম বলেন, চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যে ভোটের সংখ্যা দেখানো হয়েছে তাতে গরমিল রয়েছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ হাজার ৬৮৯ ভোট বাতিল দেখানো হয়েছে, যা নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগে কখনো এমনটা হয়নি। এটি দেশের ইতিহাসেও নজিরবিহীন। অথচ চেয়ারম্যান পদে ২ হাজার ২২৪ ভোট বাতিল হয়েছে। আমাকে পরাজিত করতে পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার ভোট বাতিল দেখানো হয়েছে। যা নিয়ে সাধারণ ভোটার ও মানুষের মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আমি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখান করে পুনরায় ভোট গণনার দাবি করছি।

এ সময় বক্তব্যের একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ভোট বাতিলের ব্যবধান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের সচিবসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ, অতিরিক্ত সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করেছেন বলেও জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ভোটগ্রহণের দিন অর্থাৎ ৫ জুন সকাল ৭টা থেকে কুতুবপুর, গোপালপুর, মধুপুর, লোহানীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে আমার নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়। আমি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র গিয়ে দেখি ভোটকক্ষে আমার কোনো পোলিং এজেন্ট নাই। আমার পোলিং এজেন্টদের প্রতিপক্ষের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেন। বিষয়টি দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে জানালে তারা কর্ণপাত করেননি। অনেক ভোটকেন্দ্রে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ফুটবল প্রতিকে জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। এবং ভোট গণণার সময়ও অনেক কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোটগণণা করা হয়।

আফরোজা বেগমের দাবি, ভোট গণনার সময় ফলাফলে প্রকাশে বিলম্ব করা হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে ভোট সংখ্যা বড়পর্দায় দেখানো হলেও সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটের হিসাব এক ঘণ্টারও বেশি সময় দেখানো হয়নি। এ নিয়ে সাধারণ ভোটাররা উত্তেজিত হলে সার্ভার জটিলতার দোহাই দেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার। অথচ একই সময়ে চেয়ারম্যান পদে ভোটের ফল ঠিক দেখানো হয়। অনেক দেরিতে ফলাফল ঘোষণা করা হলেও সেখানে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ হাজার ৬৮৯ ভোটটি বাতিল দেখানো হয়েছে। যা নজিরবিহীন ঘটনা ও সন্দেহজনক। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী রুবিনা আখতার ফুটবল প্রতীকে ৩৬ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আমি ভোট পেয়েছি ৩৪ হাজার ৯১৪ ভোট। আর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লিপি ইসলাম প্রজাপতি প্রতিকে পেয়েছে ২৫ হাজার ৪১ ভোট।

তিনি আরও বলেন, বিপুল পরিমাণ ভোট বাতিলের ঘটনা সাজিয়ে আমাকে পরিকল্পিতভাবে পরাজিত দেখানো হয়েছে। আমি এবং সাধারণ জনগণ এতে খুবই মর্মাহত। এই ফলাফল নিয়ে পুরো উপজেলায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভোট বাতিলের এই হিসাব কেউ মেনে নিতে পারছেন না। চেয়ারম্যান পদে দুই হাজার ভোট বাতিল হলেও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ১৩ হাজার ভোট বাতিল অবিশ্বাস্যকর বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে আমি পুনরায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গণনার দাবি করছি। আমার বিশ্বাস সঠিক ভাবে ভোট গণনা হলে জনগণের রায়ে আমার পক্ষে যাবে। এসময় তিনি পুনরায় ভোট গণনা না হওয়া পর্যন্ত গেজেট প্রকাশসহ অন্যান্য কার্যক্রম স্থগিত করতে তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে টানা তৃতীয়বারের মতো বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুইট। কাপ-পিরিচ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৬১ হাজার ৫৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান তবিকুর চৌধুরী মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৫২ ভোট।

অন্যদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৬ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে ফুটবল প্রতিকের রুবিনা বেগম নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আফরোজা বেগম, তিনি কলস প্রতিকে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৯১৪ ভোট। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম নির্বাচিত হয়। বদরগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়নের ১০৩টি কেন্দ্রে গত ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

;