যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর ১৯ মিনিটের ‘মূলমন্ত্র’



মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত

১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় এলেও স্বাধীনতার সংগ্রাম মহানায়ককে কাছে না পাওয়ার অপূর্ণতা থেকে যায় গোটা জাতির। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাতে বঙ্গবন্ধু পাকিন্তানে কারাগারে বন্দি ছিলেন। ২৯০ দিন পাকিস্তানে কারাভোগের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন, তখনই যেন স্বাধীনতার পূর্ণতা আসে বাঙালি জাতির মনে, আনন্দে উদ্ভাসিত হয় গোটা দেশ।

১০ জানুয়ারি সদ্য স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রেখেই কিংবদন্তির এ মহানায়ক আনন্দে আবেগে আক্রান্ত হলেন। প্রিয় দেশ ও দেশের মানুষকে দেখে বেদনা অশ্রু ধরা গড়িয়ে পড়ল চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে পেয়ে সেদিন বাঁধ ভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠেছিল ৭ কোটি বাঙালি। অশ্রুসজল নয়নে বরণ করে নিয়েছিলেন প্রিয় নেতাকে।

রেসকোর্স ময়দানে জনস্রোতের বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান। ৭ মার্চের ভাষণের পর অবিসংবাদিত নেতার এ ভাষণে যুদ্ধাহত বাংলাদেশ অনুপ্রেরণা পায় ঘুরে দাড়ানোর। প্রায় ১৯ মিনিট জাতির উদ্দেশে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে ছিল দেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান।

যাদের প্রাণের ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেদিনের ভাষণ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু ।

 

তিনি বলেন, ‘ভাই ও বোনেরা, আমি প্রথমে স্মরণ করি আমার বাংলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সিপাই, পুলিশ, জনগণকে, হিন্দু, মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমি আপনাদের কাছে দুই একটা কথা বলতে চাই।

আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে আমার জীবনের স্বাদ পূর্ণ হয়েছে। আমার বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে। আমি আজ বক্তৃতা করতে পারব না। বাংলার ছেলেরা বাংলার মায়েরা, বাংলার কৃষক, বাংলার বীরাঙ্গনা শ্রমিক, বাংলার বুদ্ধিজীবী, কিভাবে সংগ্রাম করেছে, আমি কারাগারে বন্দি ছিলাম, ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম আমার বাঙালিকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না, আমার বাংলা মানুষ স্বাধীন হবে। আমার সেই যে ভাইয়েরা আত্মহুতি দিয়ে, স্বাধীন হয়েছে তাদের আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। 

পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর পরও দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন,  ‘ওরা ত্রিশ লাখ লোককে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বাংলার, দ্বিতীয় ও প্রথম মহাযুদ্ধে এত লোক সাধারণ নাগরিক মৃত্যুবরণ করে নাই, শহীদ হয় নাই, যা আমার এই সাত কোটি বাংলাদেশে হয়েছে। আমি জানতাম না, আপনাদের মাঝে আমি ফিরে আসব, আমি খালি একটা কথা বলেছিলাম, তোমরা যদি আমাকে মেরে ফেলে দাও তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই, মৃত্যুর পরে আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে ফিরে দাও। এই একটা অনুরোধ তোমাদের কাছে’।

স্বদেশ পা রেখেই বহু কাঙ্ক্ষিত ‘স্বাধীনতা’ অর্জনে যারা সমর্থন পাশে ছিলেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাননি বাঙালির ইতিহাসের এ বরপুত্র।

আরও পড়ুন:  মহানায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

‘আমি মোবারকবাদ জানাই ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে, আমি মোবারকবাদ জানাই ভারতবর্ষের জনসাধারণকে, আমি মোবারক বাদ জানাই, ভারতবর্ষের সামরিক সদস্যদের, আমি মোবারকবাদ জানাই রাশিয়ার জনসাধারণকে, আমি মোবারকবাদ জানাই বৃটিশ, জার্মানি, ফ্রান্স জনসাধারণকে, আমি মোবারকবাদ জানাই যারা আমাকে সমর্থনকে করেছে, আমি মোবারকবাদ জানাই আমেরিকার জনসাধারণকে, আমি মোবারকবাদ জানাই সারা বিশ্ব দুনিয়ার মুজলিম জনতাকে যারা এই মুক্ত সংগ্রামকে সাহায্য করেছে। আমার বলতে হয় ১ কোটি মানুষ এই বাংলাদেশ থেকে ঘর বাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো, ভারতের জনসাধারণ মিসেস ইন্দিরা গান্ধী তাদের খাবার দিয়েছেন তাদের আমি মোবারকবাদ না দিয়ে পারি না। যারা অন্যরা সাহায্য করেছেন তাদের আমার মোবারকবাদ দিতে হয়।  

তবে মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবাতে পারবে না, বাংলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই। আমি যাবার আগে বলেছিলাম ও বাঙালি এবার তোমাদের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবার তোমাদের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।আমি বলেছিলাম ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, তোমরা ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলে সংগ্রাম করেছো। আমি আমার সহকর্মীদের মোবারকবাদ জানাই।

আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধু বারবার চোখ মুখে দেশকে ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করছিলেন।

‘আমার বহু ভাই, আমার বহু কর্মী, আমার বহু মা বোন আজ দুনিয়ায় নাই তাদের আমি দেখব না। আমি আজ বাংলার মানুষকে দেখলাম, বাংলার মাটিকে দেখলাম, বাংলার আকাশকে দেখলাম, বাংলার আবহাওয়াকে অনুভব করলাম, বাংলাকে আমি সালাম জানাই। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় বড় ভালোবাসি, বোধহয় তার জন্যই আমায় ডেকে নিয়ে এসেছে’।

বাঙালিকে বীরের জাতি উল্লেখ করে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জাতির পিতা।

 

বলেন, ‘আমি আশা করি, দুনিয়ায় সমস্ত রাষ্ট্রের কাছে আমার আবেদন, যে আমার রাস্তা নাই, আমার ঘাট নাই, আমার জনগণের খাবার নাই, আমার মানুষ গৃহহারা সর্বহারা, আমার মানুষ পথের ভিখারী, তোমরা আমার মানুষকে সাহায্য কর। মানবতার খাতিরে আমি তোমাদের কাছে সাহায্য চাই। দুনিয়ার সমস্ত রাষ্ট্রের কাছে আমি সাহায্য চাই। আমার বাংলাদেশকে তোমরা রিকগনাইজ কর, জাতিসংঘে স্থান দাও। দিতে হবে। উপায় নাই, দিতে হবে। আমি, আমরা হার মানব না, আমরা হার মানতে জানি না।

রেসকোর্সের জনসভায় তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাষণে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কবিগুরু বরীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।’ কবি গুরু মিথ্যাকথা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ। আমার বাঙালি দেখিয়ে দিয়েছে, দুনিয়ার ইতিহাসে স্বাধীনতার সংগ্রামে এত লোক আত্মাহুতি, এত লোক জান দেয় নাই। তাই আমি বলি, আমারে দাবায়া রাখতে পারবা না।

আরও পড়ুন:   ৭২’র ১০ জানুয়ারি ছিল বাঙালির পূর্ণ বিজয়ের দিন

রক্তস্রোতে পাওয়া স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না, যদি এ দেশের মা- বোনেরা ইজ্জত ও কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণতা হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।’

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে পা রেখেই ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মহান এ নেতা।

মুক্তিবাহিনী, ছাত্রসমাজ, কর্মীবাহিনী তোমাদের মোবারকবাদ জানাই। তোমরা গেরিলা হয়েছো, তোমরা রক্ত দিয়েছো, রক্ত বৃথা যাবে না। রক্ত বৃথা যায় নাই। একটা কথা, আজ থেকে বাংলায় যেন আর চুরি-ডাকাতি না হয়। বাংলায় যেন আর লুটতরাজ না হয়। বাংলায় যে লোকেরা আছে, অন্যদেশের লোক, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক, বাংলায় কথা বলে না। আজও বলছি তোমরা বাঙালি হয়ে যাও। আর আমি আমার ভাইদের বলছি, তাদের উপর হাত তুলো না। আমরা মানুষ, মানুষ ভালোবাসি। তবে যারা দালালি করেছে, যারা আমার লোকদের ঘরে ঢুকে হত্যা করেছে তাদের বিচার হবে এবং শাস্তি হবে। বিচারের দায়িত্ব বাংলার স্বাধীন সরকারের হাতে ছেড়ে দেন। একজনকেও ক্ষমা করা হবে না। তবে আমি চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিকের মতো স্বাধীন আদালতে বিচার হয়ে এদের শাস্তি হবে। আমি দেখায় দিবার চাই দুনিয়ার কাছে যে, শান্তিপ্রিয় বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপ্রিয় বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে।

ভাষণের এক পর্যায়ে পাকিস্তানীদের কাছে নতি স্বীকার করেননি বলে জানান শেখ মুজিবুর রহমান।

‘আমারে আপনারা পেয়েছেন, আমি আসছি। জানতাম না আমার ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু আইসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব, আমার বাঙালি জাতিকে অপমান করে যাব না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।

দেশের উন্নয়নে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন। আমি সমস্ত জনসাধারণকে বলতে চাই, সেখানে রাস্তা ভেঙে গেছে নিজেরাই রাস্তা করতে শুরু করে দাও। আমি চাই জমিতে ধান বুনাও। সব কর্মচারীদের বলে দিবার চাই একজনও ঘুষ খাবেন না। আমি দোষ ক্ষমা করব না। ভাইয়েরা আমার। যাবার সময় যখন আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাজউদ্দিন, নজরুল এরা আমার কাছে যায়। আমি বলেছিলাম, সাত কোটি বাঙালির সাথে আমাকে মরতে দে তোরা। আমি আশীর্বাদ করছি। তাজউদ্দিনরা কাঁদছিল। তোরা চলে যা, সংগ্রাম কর, আমার আত্মা রইল। আমি এই বাড়িতে মরতে চাই, এই হবে বাংলার জায়গা, এই শহরে আমি মরতে চাই। ওদের কাছে মাথা নত করতে আমরা পারব না।

ভাইয়েরা আমার, ডক্টর কামালকে নিয়ে তিন মাস পর্যন্ত সেখানে ইন্টারোগেশন হয়েছে মুজিবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দাও। কয়েকজন বাঙালি আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। তাদের আমরা জানি এবং চিনি। তাদের বিচার হবে। আজ আমি বক্তৃতা করতে পারছি না। আপনারা বুঝতে পারেন। নব নব নব সুন্দরী মম, জননী জন্মভূমি, গঙ্গার তীর সিক্ত সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি। আমার জীবন। আজ যখন আমি ঢাকায় নামছি, তখন আমি চোখের পানি রাখতে পারি নাই। আমি জানতাম না, যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, যে বাংলাদেশকে আমি এত ভালোবাসি, সেই বাংলায় আমি যেতে পারব কি-না?

আজ আমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছি, আমার ভাইদের কাছে, আমার মা’দের কাছে, আমার বোনদের কাছে, বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলার মানুষ আজ আমরা স্বাধীন।

আরও পড়ুন:  বিমানে অশ্রুসিক্ত বঙ্গবন্ধু গাইলেন ‘সোনার বাংলা’, ঠিক হলো জাতীয় সংগীত

পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি পশ্চিম পাকিস্তানের ভাইদের বলি, তোমরা সুখে থাকো। তোমাদের মধ্যে আমাদের ঘৃণা নাই। তোমাদের আমরা শ্রদ্ধা করতে চেষ্টা করব। তোমার সামরিক বাহিনীর লোকেরা যা করেছে, আমার মা-বোনের উপর রেপ করেছে। আমার ত্রিশ লক্ষ লোককে মেরে ফেলে দিয়েছে। যাও সুখে থাকো। তোমরা সুখে থাকো। তোমাদের সঙ্গে আর না। শেষ হয় গেছে। তোমরা স্বাধীন থাকো। আমিও স্বাধীন থাকি। তোমাদের সঙ্গে আমার স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বন্ধুত্ব হতে পারে, তা ছাড়া বন্ধুত্ব হতে পারে না। তবে যারা অন্যায়ভাবে অন্যায় করেছে তাদের সম্বন্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা করা হবে।

পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চাই। আর একদিন আমি বক্তৃতা করব। কিছুদিন পরে একটু সুস্থ হয়ে নেই। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আমি সেই মুজিবুর এখন আর নাই। আমার বাংলার দিকে চাইলেই দেখেন সমান হয়ে গেছে জায়গা, গ্রাম গ্রাম পোড়ায় দিয়েছে। এমন কোনো ঘর নাই যার মধ্যে আমার লোকদের হত্যা করা হয় নাই, কত বড় কাপুরুষ যে নিরপরাধ মানুষকে এইভাবে হত্যা করে সামরিক বাহিনীর লোকেরা। আর তারা বলে কি আমরা পাকিস্তানের মুসলমান সামরিক বাহিনী। ঘৃণা করা উচিত। জানা উচিত দুনিয়ার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পরে এই বাংলাদেশই দ্বিতীয় স্থান মুসলিম কান্ট্রি। মুসলমান সংখ্যা বেশি দ্বিতীয় স্থান। আর ইন্ডিয়া তৃতীয় স্থান, আর পশ্চিম পাকিস্তান চতুর্থ স্থান। আমরা মুসলমান। মুসলমান মা-বোনদের রেপ করে!

আমরা মুসলমান। আমরা রাষ্ট্রে, এই বাংলাদেশে হবে সমাজতন্ত্র ব্যবস্থা। এই বাংলাদেশে হবে গণতন্ত্র। এই বাংলাদেশে হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।

স্বাধীনতার পর ভারত সম্পর্কে মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, যারা জানতে চান, আমি বলে দিবার চাই, আসার সময় দিল্লিতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে। আমি আপনাদের বলতে পারি যে, আমি জানি তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। সে পণ্ডিত নেহেরুর কন্যা, সে মতিলাল নেহেরুর ছেলের মেয়ে। তারা রাজনীতি করেছেন, ত্যাগ করেছেন। তারা আজকে সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যেদিন আমি বলব, সেইদিন ভারতের সৈন্য বাংলার মাটি ছেড়ে চলে যাবে। এবং তিনি আস্তে আস্তে কিছু কিছু সরায় নিচ্ছেন। তবে যে সাহায্য করেছেন, আমি আমার সাত কোটি দুঃখী বাঙালির পক্ষ থেকে ইন্দিরা গান্ধীকে, তার সরকারকে, ভারতের জনসাধারণকে, মোবারকবাদ জানাই। অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যক্তিগতভাবে এমন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান নাই যার কাছে তিনি আপিল করেন নাই যে শেখ মুজিবকে ছেড়ে দাও। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে দুনিয়ার সকল রাষ্ট্রের কাছে বলেছেন, তোমরা ইয়াহিয়া খানকে বল শেখ মুজিবকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। একটা রাজনৈতিক সলিউশন করার জন্য।

১ কোটি লোক মাতৃভূমি ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে গেছে। এমন অনেক দেশ আছে যেখানে লোকসংখ্যা ১০ লাখ, ১৫ লাখ, ২০ লাখ, ৩০ লাখ, ৪০ লাখ, ৫০ লাখ। শতকরা ৬০টা রাষ্ট্র আছে যার জনসংখ্যা ১ কোটির কম। আর আমার বাংলা থেকে ১ কোটি লোক মাতৃভূমি ত্যাগ করে ভারতে স্থান নিয়েছিল। কত সেখানে অসুস্থ অবস্থায় মারা গেছে। কত না খেয়ে, না খেয়ে কষ্ট পেয়েছে।

রাজনীতির মুকুটহীন এ সম্রাট স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন,   কত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই পাষণ্ডের দল। ক্ষমা কর আমার ভাইয়েরা ক্ষমা কর। আজ আমার কারও বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা নেই। একটা মানুষকে তোমরা কিছু বলো না। অন্যায় যে করেছে তাকে সাজা দেব। আইনশৃঙ্খলা তোমাদের হাতে নিও না।

মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন,  মুক্তিবাহিনীর যুবকরা, তোমরা আমার সালাম গ্রহণ কর। ছাত্রসমাজ, তোমরা আমার সালাম গ্রহণ কর। শ্রমিক সমাজ, তোমরা আমার সালাম গ্রহণ কর। কৃষক সমাজ, তোমরা আমার সালাম গ্রহণ কর। বাংলার হতভাগ্য হিন্দু-মুসলাম আমার সালাম গ্রহণ কর। আর আমার যে কর্মচারীরা, যে পুলিশ, যে ইপিআর, যাদের উপর মেশিনগান চালিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা মা-বোন ত্যাগ করে পালিয়ে গিয়েছে। তার স্ত্রীদেরকে গ্রেফতার করে কুর্মিটোলা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তোমাদের সকলকে আমি সালাম জানাই, তোমাদের সকলকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।

যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ আবার দাঁড়াবে তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তান বলেন, নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা, বাংলার মানুষ হাসবে, বাংলার মানুষ খেলবে, বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, বাংলায় মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে, এই আমার জীবনের সাধনা, এই আমার জীবনের কাম্য। আমি যেন এই দেশে এই চিন্তা করেই মরতে পারি। এই দোয়া এই আশীর্বাদ আপনারা আমাকে করবেন। এই কথা বলে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেবার চাই। আমার সহকর্মীদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই, যারা আমার, তারা একজন একজন করে তা প্রমাণ করে দিয়েছে যে না মুজিব ভাই বলে গেছে তোমরা সংগ্রাম কর, তোমরা স্বাধীন কর, তোমরা জান দাও, বাংলার মানুষকে মুক্ত কর, আমার জন্য চিন্তা কর না, আমি চললাম, যদি ফিরে আসি আমি জানি ফিরে আসতে পারবো না, কিন্তু আল্লাহ আছে, তাই আজ আমি আপনাদের কাছে ফিরে এসেছি। তোমাদের আমি, আমার সহকর্মীরা, তোমাদের আমি মোবারকবাদ জানাই। আমি জানি কি কষ্ট তোমরা করেছে। আমি কারাগারে বন্দী ছিলাম, ৯ মাস পর্যন্ত আমাকে কাগজ দেয়া হয় নাই।

এ কথা সত্য, যাবার-আসার সময় ভুট্টো সাহেব আমাকে বলেছিলেন, শেখ সাহেব চেষ্টা করেন দুই অংশের কোনো একটা বাঁধন দেয়া যায় কি-না। আমি বললাম আমি কিছু বলতে পারি না, আমি কোথায় আছি জানি না। আমার বাংলা, আমার মাটিতে যেয়ে আমি বলব। আজ বলছি ভুট্টো সাহেব, সুখে থাকো। বাঁধন ছুটে গেছে। তুমি যদি কোনো বিশেষ শক্তির সঙ্গে গোপন পরামর্শ করে আমার বাংলা স্বাধীনতা হরণ করতে চাও, এবার মনে রেখ, এবার তাদের নেতৃত্ব দেবে শেখ মুজিবুর রহমান। মরে যাবো, স্বাধীনতা হারাতে ছাড় দেব না। ভাইয়েরা আমার, আমার চার লক্ষ বাঙালি আছে পশ্চিম পাকিস্তানে। আমি অনুরোধ করব তাদের, একটা জিনিস আমি বলতে চাই, তোমাদের এপ্রুভাল নিয়ে আমার সহকর্মীরা, এন্টারন্যাশনাল ফোরামে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়ক, অথবা ওয়ার্ল্ড জুরিসডিকশনের পক্ষ থেকে একটা ইনকোয়ারি হতে হবে। যে কী পাশবিক অত্যাচার, কীভাবে হত্যা করেছে আমাদের লোকদের, এ সত্য দুনিয়ার মানুষকে জানাতে হবে। আমি দাবি করব জাতিসংঘকে হিউম্যান রাইটসকে, বাংলাদেশকে আসন দাও এবং একটি ইনকোয়ারি কর।

ভাইয়েরা আমার, যদি কেউ চেষ্টা করেন ভুল করবেন। আমি জানি ষড়যন্ত্র শেষ হয় নাই। সাবধান বাঙালিরা ষড়যন্ত্র শেষ হয় নাই। একদিন বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি কর। বলেছিলাম, বলেছিলাম যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধ কর। বলেছিলাম? বলেছিলাম এ সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এই জায়গায় ৭ মার্চ তারিখে। আজ বলে যাচ্ছি তোমরা ঠিক থাকো, একতাবদ্ধ থাকো। কারও কথা শুনো না। ইনশাআল্লাহ স্বাধীন যখন হয়েছি, স্বাধীন থাকব। একজন মানুষ এই বাংলাদেশে বেঁচে থাকতে কেউ আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারবেন না।

আজ আমি আর বক্তৃতা করতে পারছি না। একটু সুস্থ হলে আবার বক্তৃতা করব। আপনারা আমারে মাফ করে দেন। আপনারা আমারে দোয়া করেন। আপনারা আমারে দোয়া করেন। আপনারা আমার সাথে সকলে আজকে একটা মোনাজাত করেন আল্লাহুমা আমিন।

বঙ্গবন্ধু সেদিন তার ভাষণে দেশ গড়ার ডাক দিয়েছিলেন। তার সেই নির্দেশনামূলক ভাষণে যুদ্ধে খেই হারানো বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়ানোর মূলমন্ত্র পায়। স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ নিয়ে বিশ্বের বুকে সেদিন থেকেই শুরু হয় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের নব পথচলা।  

   

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মানবাধিকার সম্পর্কিত একটি নতুন শাখা চালু করার পরামর্শ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বৈঠকে ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কুতুপালং এবং ভাসানচর পরিদর্শনের জন্য বৈঠকে প্রস্তাব করা হয়।

কমিটির সভাপতি এ কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শাহরিয়ার আলম, নাহিম রাজ্জাক, নিজাম উদ্দিন জলিল, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাবিবুর রহমান, সাইমুম সারওয়ার, জারা জাবীন মাহবুব অংশ নেন।

 

;

ঢাকাসহ ৮ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকাসহ দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। সেইসঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলা হচ্ছে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং সিলেট জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে, আবহাওয়া অফিসের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

এ অবস্থায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

;

ইসলামি সংগীত শিল্পী সালমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় নিহত তিনজনের একজন সালমান আজাদী। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ইসলামি সঙ্গীত শিল্পী ও প্রশিক্ষক। তার মৃত্যুতে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং স্বজন-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালমান আজাদী।

তিনি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার হাপানিয়া এলাকার মৃত কোরবান আলীর ছেলে। নিহত সালমান স্ত্রী ও এক শিশুপুত্রকে নিয়ে নগরীর মাসকান্দা এলাকায় থাকতেন।

জানা গেছে, ইসলামি সংঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ময়মনসিংহে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সালমান আজাদী। ইসলামি সঙ্গীতের প্রসারে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন সালমান ইসলামি সঙ্গীত একাডেমি। প্রায় দুই বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ইসলামি গান শেখাতেন। এছাড়াও ত্রিশালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ইসলামি সঙ্গীতের প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।

উদীয়মান এ ইসলাম সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, ক্যাম্পাসের সহপাঠী-শিক্ষার্থী, ইসলামি সংস্কৃতি প্রেমিসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শতশত মানুষের ফেসবুক স্ট্যাটাসে যেন শোক বইয়ে পরিণত হয়েছে সানমানের ফেসবুক টাইমলাইন।

আব্দুর রহিম ভূঁইয়া নামে একজন লিখেছেন, কিছু মৃত্যুর সংবাদ মানুষকে ভীষণ বেদনা দেয়, ভীষণ কষ্ট দেয়। আর এই মৃত্যু যদি অকালে হয় বা আকস্মিক হয় তার শোক কাটিয়ে উঠা মোটেও সহজ না। সালমান আজাদী ইসলামিক শিল্প একাডেমির শিক্ষক ও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তিনি বাচ্চাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন। বাচ্চাদের সুস্থ ধারার ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যাপারে তার অনেক পরিকল্পনা ছিল।

হানজালা রমজান মুন্না নামে আরেকজন লিখেছেন, প্রিয় হাসিমাখা মুখ ও সুন্দর করে কথা উপস্থাপন ছিল যার নৈমিত্তিক অভ্যাস। ইসলামি সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়ায় পেছনে ময়মনসিংহ শহরে যাদের অবদান, তাদেরই একজন ছিলেন। মনের মধ্যে ছিল ইসলামের জন্য তীব্র ভালবাসা। ভাইয়ের ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতের উঁচু মাক্বাম দান করুন।

স্বামীর শোকে বাকরুদ্ধ স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, সালমান নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার ক্লাস করতেই ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে ত্রিশাল যাচ্ছিলেন তিনি।

এদিকে সালমান আজাদীর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। এক শোকবার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৭-'১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তরে ২০২১-'২২ সেশনে অধ্যয়নরত মো. সালমান আজাদী (২৫) বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় ত্রিশালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়-পরিবারের পক্ষে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে সালমানের বিদেহী আত্মার চিরশান্তির জন্য প্রার্থনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন জানান, বিনা ময়নাতদন্তের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪ জন। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উপজেলার ত্রিশাল বাজারের সাইফুল কমিশনারের বাসার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত অন্য দুইজন হলেন, উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের রুদ্রগ্রামের এনামুল হকের মেয়ে রুবাইরা তাজনিম (২) ও চিকনা মনোহর এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৪)।

;

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরাঙ্গনাদের সম্মাননা দাবি



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের বহু যুবক ও ছাত্র জনতার আত্মহুতির অবদান। এই যুদ্ধে নারীদের অবদানও কোন অংশে কম নয়। এ যুদ্ধে অসংখ্য নারী সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি ইজ্জতও দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বেদনা দত্ত। বেদনা দত্তের মতো বীরাঙ্গনাদের স্মরণীয় করে রাখতে বীরাঙ্গনা স্মৃতিসৌধ বা রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার বড়ি-বাড়ির বেদনা দত্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বেই স্বামী মারা যাওয়ায় অবুঝ তিন শিশুকে নিয়ে অনেক দুঃখ কষ্টে দিন পার করছিলেন। ঠিক সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করে খাওয়ানোসহ তাদের নানাভাবে সহয়তা করতেন বেদনা দত্ত। আর এমন খবর পেয়ে রাজাকার সদস্যরা বেদনাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের হাতে তুলে দেয়। বাড়ির পাশে রেল ব্রিজের নিচে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে ৪ দিনে নির্যাতন শেষে মৃত ভেবে পাশের জঙ্গলে ফেলে দেয় বেদনাকে।

পরে সেখান থেকে দুইদিন পর প্রাণ ফিরে পেলেও ইজ্জত আর সন্তানদের জীবন রক্ষায় এলাকা ছেড়ে নিজেকে আড়াল করে রাখেন তিনি। দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে আসলেও জীবন চলে অনাহারে অর্ধাহারে। এভাবেই পার করতে হয়েছে জীবনের প্রায় অর্ধশতাব্দি। অবশেষে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের নজরে আসলে তার কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে তাকে বীরাঙ্গনা হিসেবে নথিভুক্ত করেন এবং ভাতার আওতায় আনেন। সেই সাথে মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে তার জন্য তৈরি করা হয় বীর নিবাস। এখন এলাকাবাসীর দাবি বেদনা দত্তের অবর্তমানে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। অথবা তার নামে স্থানীয় কোন রাস্তা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি মুক্তিযুদ্ধাসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

স্থানীয় জিনারদী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দিন পাঠান বলেন, আমরা জানতামই না আমাদের এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছে। সরকার যখন বেদনা দত্তকে একটি বীর নিবাস তৈরি করে দেয় তখনই জানতে পারি এই এলাকায় একজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নির্মম নির্যাতনের শিকার এই নারী হয়তো একদিন থাকবেনা। কিন্তু তাকে যেনো পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখে এবং স্মরণ করে সেজন্য তার নামে একটি সড়কের নামকরণ বা স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানাই।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেদনা দত্তের মতো আরও যারা বীরাঙ্গনা রয়েছেন তাদের অসামান্য অবদান রয়েছে। নরসিংদীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে যা প্রক্রিয়া দিন রয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

;