এমপিওভুক্তির ১৬ বছর পর বেতন পাচ্ছে ৩৬ শিক্ষক-কর্মচারীরা
২০০৪ সালে এমপিওভুক্ত হয় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজ। তবে একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়াই এমপিওভুক্তির কারণে বেতন-ভাতা মেলেনি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের। ৭ বছর প্রচেষ্টার পর ২০১১ সালে মেলে একাডেমিক স্বীকৃতিও। তবে নানা টালবাহানায় কলেজটির ৩৬ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা অনুমোদন করেনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।
বেতন বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০১১ সালের শেষ দিকে উচ্চ আদালতে এ নিয়ে একটি রিট পিটিশন করেন। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন করে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩১ মে আদালত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের নির্দেশ দেন। তবে আদালতের সেই আদেশ মানছিল না মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।
ফলে আবারও আদালতের শরণাপন্ন হন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে বিবাদী করে আদালত অবমাননার মামলা করেন তারা। মামলার পর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে অধিদফতর। পরে ৭ দফা শুনানি শেষে মামলা ও আপিল নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করে আপিল বিভাগ।
ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে গত রোববার (১২ জানুয়ারি) আলীপুর মডেল কলেজটিকে এমপিওভুক্তির আদেশ বাস্তবায়ন করে ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন-ভাতা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও অন্যান্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মোমিনুর রশিদ আমিন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিওভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ব্যবস্থা নেবে।’
এদিকে, আদালতের রায়ের পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় খুশির জোয়ার বইছে উপজেলা পর্যায়ের কলেজটিতে। এমপিওভুক্তির ১৬ বছরেও বেতন-ভাতা না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে এতদিন চরম শঙ্কা বিরাজ করছিল। তা কেটে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও খুশি।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার খবরটি কলেজে পৌঁছে সোমবার (১৩ জানুয়ারি)। এর পরপরই কলেজ ও এর আশেপাশের এলাকায় শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ। জানতে চাইলে কলেজের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১৯৯৯ সাল থেকে কলেজে শিক্ষকতা করছি। গত ২০ বছর এক পয়সাও পাই নি। নিজের একটি হোমিও ঔষধের দোকান আছে। তা থেকে যা আয় হতো, সেটা দিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালাতাম। কি নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হয়েছে, তা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
খবরটি শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন বলে জানান কলেজ অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কঠোর পরিশ্রম করছি। বেতন-ভাতা দূরে থাক, ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি করানো এবং কলেজে ধরে রাখতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। সেই কলেজটি এমপিওভুক্ত হলেও বেতন-ভাতা মিলছিল না। অনেক শিক্ষক কলেজ ছেড়েও গেছে। আবার অনেকে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছে। আজ ২১ বছর পর আমাদের যে সাধনা, তার ফল পেতে যাচ্ছি।’
অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে অবশেষে আমাদের মূল্যায়ন করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন সাধনার স্বীকৃতি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করছে। আমাদের অঙ্গীকার-অল্প সময়ের মধ্যে আলীপুর কলেজ উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে গড়ে তুলবো।’