জামালপুরের ইসলামপুরে বিএনপি নেতা নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুলের নেতৃত্বে ইসলামপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) অধ্যক্ষ ডা. মুজিবুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এসময় প্রতিবাদ করতে গেলে ওই ক্যাম্পাসের ছাত্রদলের নেতা শাওন আহমেদ রনিসহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে আইএইচটির এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে প্রতিষ্ঠানটিতে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম ইসলামপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) এর পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ী পার্শ্ববর্তী শেরপুরের জেলার ঝিনাইগাতী এলাকায়। অভিযুক্ত ওই নেতার নাম নবী নেওয়াজ খান লোহানী ওরফে বিপুল। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি; ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
সোমবার (১০ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাত থেকে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়া বিএনপির ওই নেতার কয়েকটি ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে মারধরের সিসিটিভি ফুটেজও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার (৯ মার্চ) ছাত্রদলের হামলায় আহত হয়ে প্রথমে তাকে ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। পরে দায়িত্বরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএনপি নেতা নবীনেওয়াজ খান লোহানী (বিপুল) রবিবার দুপুরে আইএসটি ক্যাম্পাসে আসেন এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ডা. মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তিনি অধ্যক্ষকে অপমানজনক মন্তব্য করেন, যা শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এরপর নবীনেওয়াজ খান লোহানীর (বিপুল) এর নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা রনি ও তার সহযোগীরা আইএসটি শিক্ষার্থী আশরাফুলের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম গুরুতর আহত হন।
আহত ওই শিক্ষার্থীর বন্ধু মো. নাজিম মিয়া বলেন, আশরাফুল স্যারকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ করলে বিএনপি নেতা লোহানী বিপুলের নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতা রনি ও তার সহযোগীরা আশরাফুলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাকে বেধড়ক মারধর করে ফেলে রেখে যায়। আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। বর্তমানে সে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল বলেন, অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি একদম মিথ্যা কথা। ওইখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি পক্ষের তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে ইন্টার্নির কিছু ফেল করা ছেলেরা অনৈতিকভাবে তাদের উত্তীর্ণ করার জন্য বলেন। বিষয়টি নিয়মের মধ্য না থাকায় তা করতে রাজি হইনি। পরে তারা বিএনপির এই নেতাকে গিয়ে ধরলে তিনি আমার অফিসে আসেন। আসার ১০ মিনিট আগে আমি ছাত্রী হোস্টেলে কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। তখন আমার রুমটি তালাবদ্ধ ছিল। তাকে অন্যস্থানে বসতে দেয়া হয়েছিল। তিনি ছাত্রী হোস্টেলে গিয়ে উত্তেজিত কথাবার্তা বলেন।
এ বিষয়ে ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, সেখানে আমি ওই নেতার সঙ্গে যাইনি। ওই ক্যাম্পাসে বহিরাগত ব্যক্তিরা প্রবেশ করেন। ওই বিষয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীকে মারধর ও লাঞ্ছিতের ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টির তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। তিনি জানান , বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নয় তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে