সিলেটে রাতে বেপরোয়া ট্রাক চালকরা
সিলেট নগরের ভেতরে ট্রাক চলাচলের নেই সুনিদিষ্ট নিয়ম। সেই সুযোগে প্রতি রাতেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে ট্রাক চালকরা। তাদের বেপরোয়া চলাচলের কারণে নগরে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে ঘটছে প্রাণহানি। নগরের ভেতরে চলাচলকারী বেশিরভাগ ট্রাকই ওভারলোড হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নগরের সড়কও।
সিটি করপোরেশন বলছে, ট্রাক চলাচলের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই তাদের কিছুই করার নেই। আর ট্রাফিক পুলিশ দাবি করেছে নগরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন তারা। নির্ধারিত সময়ের আগে নগরে ট্রাক চলাচলে বাধা দেন ট্রাফিক সদস্যরা।
মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরের ভেতরে ট্রাক চলাচলের জন্য তাদের মৌখিকভাবে কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, তেমূখি পয়েন্ট হয়ে সিলেট নগরে ট্রাক ঢুকতে পারবে রাত ৮টার পর। কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক রাত ৯টা ও হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর থেকে রাত ১০টার পর নগরে ট্রাক ঢুকতে পারবে। চলাচল করতে পারবে সকাল ৮টা পর্যন্ত। এসব ট্রাক সিলেট নগরের সাপ্লাই, আম্বরখানা ও সুনামগঞ্জ রোড ব্যবহার করবে।
তবে সরেজমিনে সন্ধ্যার পর থেকেই পুরো নগরজুড়ে অবাধে বেপরোয়া ট্রাক চলাচল করতে দেখা যায়। দিনের বেলাও নগরে পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল দেখা যায়।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন ইমতিয়াজ মাহমুদ রশীদ অর্জন (১৮) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী। এ সময় তার মোটরসাইকেলে থাকা আকাশ দাস দ্বীপ (১৮) ও সানী রায় (২০) নামে আরও দুই আরোহী গুরুতর আহত হন। এর সপ্তাহখানেক আগে গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নগরের সুবিদবাজার এলাকায় একটি পাথরবাহী ট্রাক রিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রিকশার যাত্রী গৃহবধূ মুনতাহা আক্তার তানিয়া (২৭) ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এদিকে জাফলং থেকে আসা ট্রাকগুলো টোল ফাঁকি দিতে শাহজালাল ব্রিজ ব্যবহার না করে টিলাগড় হয়ে সিলেট নগরে প্রবেশ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ট্রাক চলাচল আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এটা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ দেখবে। অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক নগরের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের কার্যকরী কমিটির সভাপতি গোলাম হাদি ছয়ফুল বলেন, রাত ৯টার পর কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক শহরে ঢুকতে পারে। তারা যেকোনও সড়কই ব্যবহার করতে পারে। ট্রাক চালকেরা বেপরোয়া ভাবে ট্রাক চলান না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরাও চাই কোনও ট্রাক যাতে ওভারলোড না করে। তবে ওভারলোড বন্ধে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। যতদিন ওভারলোড কন্ট্রোল স্কেল না বসানো হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত ওভারলোড বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, নগরে ট্রাক চলাচলের জন্য মৌখিকভাবে আমরা কিছু নিয়ম করে দিয়েছে। কেউ নিয়ম না মানলে ট্রাফিক সদস্যরা তাদের আটকানোর চেষ্টা করেন। বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করি। আমাদের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর শুধু আম্বরখানা ও সুরমা বাইপাসে ট্রাফিক পুলিশ থাকে। তাই রাতে নগরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ কঠিন।
তিনি বলেন, ট্রাকে ওভারলোড বন্ধে আমাদের কিছু করার নেই। যদি ওভারলোড কন্ট্রোল স্কেল থাকতো তবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম।