স্মার্ট সিটি নিয়ে বৈঠক, নেই নগরের মেয়র- প্রশ্ন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন

‘স্মার্ট সিটি চট্টগ্রাম’ নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক। তবে যে চট্টগ্রাম সিটির উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার আয়োজন, সেই সিটির মেয়র, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানই পাননি দাওয়াত। আর এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম চেম্বারকেও সমালোচনায় ধুইয়ে দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এমনকি 'গোলটেবিল বৈঠকে ডেকে এনে আমাকে মূল্যায়ন নাকি অবমূল্যায়ন করা হলো আমি জানি না' বলেও মন্তব্য করেছেন মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, লতিফ সাহেব আমার ভালো বন্ধু তিনি আমাকে দাওয়াত দিলেন আর আমি সরাসরি চলে এলাম কিন্তু এসে দেখি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নেই, সিডিএ চেয়ারম্যানও নাই। তো আমি কার সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলবো।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দেশের একমাত্র ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স রুমে ‘স্মার্টসিটি চট্টগ্রাম’ শীর্ষ গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকের আয়োজন করে চট্টগ্রাম চেম্বার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। আর এসব নিয়ে আলোচনা সেই আলোচনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কেউ নেই, কথা বলার জন্য তো সিডিএ চেয়ারম্যানও নেই। অনুষ্ঠানে আমি দাওয়াত পেলাম, কিন্তু আপনারা চেয়ারম্যানকে দাওয়াত দেন নাই। সব প্রতিনিধি যদি অনুষ্ঠানে থাকতো তাহলে স্মার্ট সিটি নিয়ে কিছু প্রশ্ন আসতো। সেসব নিয়ে তখন আমরা কথা বলতাম, এখন তো কেউ নেই- আলোচনা হবে কাকে নিয়ে?

গোলটেবিল বৈঠকে দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিও সিটি মেয়র, সিডিএ, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে বলেন, এসব সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকলে পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। আলোচনাও ফলপ্রসূ হত।

আলোচনায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, স্মার্ট সিটি গড়তে সবচে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিত করা। একটা আইনি কাঠামো তৈরি করা জরুরি যেখানে জনপ্রতিনিধিরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য থাকেন। জনগণের কথা শুনেন।

এদিকে দাওয়াত না পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি, এই সংক্রান্ত কোন চিঠিও পাইনি। পরে এটা শুনে আমি খুবই দুঃখিত ও লজ্জিত হয়েছি। আমি বুঝলাম না কেন আয়োজকরা আমাকে একটা দাওয়াত দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করলেন না! স্মার্ট সিটি গড়ার জন্য তো কোন দরপত্র ডাকতে হবে না। স্টেকহোল্ডারদের দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর সিটি করপোরেশন ছাড়া আর কারও তো সেই কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেই। তাহলে কেন ডাকা হলো না আয়োজকরাই ভালো বলতে পারবেন।

বৈঠকে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমালোচনা করে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি এখন ছাগলনাইয়া হয়ে গেছে। পদ্মাসেতু নির্মিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু চট্টগ্রাম পোর্ট কানেকটিং সড়ক বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। বসবাসের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই চট্টগ্রামে তাহলে ট্যাক্স কেন দিবো আমরা। চট্টগ্রাম এখন ধুলাবালির শহরে পরিণত হয়েছে।

সিটি মেয়রের সমালোচনা করে লতিফ বলেন, নির্বাচিত হয়েও তিনি আমলাদের মতো আচরণ করছেন। চট্টগ্রাম শহরের তিনজন এমপি আছেন কিন্তু উন্নয়ন কাজে এমপিদের সম্পৃক্ততা করা হয় না। এমনকি ওয়ার্ড কাউন্সিলররা পর্যন্ত আমাদের সাথে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেন না।

এম এ লতিফের বক্তব্য প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ধুলোবালির কারণে চট্টগ্রাম শহরে থাকা যাচ্ছে না- এগুলো তো থাকবে। আমাদের কাছে তো ম্যাজিক কোন সমাধান নেই। প্রথমত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম ঠিকাদার তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়ত দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেই। ফলে একই সড়ক বারবার খুঁড়তে হচ্ছে। এজন্য দোষারোপ না করে পরস্পরের সাথে বসে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে।

এ সময় তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামের উন্নয়নে সম্বনিত অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে যারা আপন ভাবেন এবং চট্টগ্রামকে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের উচিত নিজের প্রকল্পে আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নিয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। আমি মন্ত্রী কিন্তু আমার চেয়েও আপনারা চট্টগ্রামকে বেশি ভালোবাসেন। সুতরাং যারা নেতৃত্বে আছেন তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো চট্টগ্রামকে স্মার্ট সিটি গড়া যাবে না।

গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।

মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. রফিকুল আলম।

আরো বক্তব্য রাখেন, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির উপ উপাচার্য প্রকৌশলী আলী আশরাফ, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, সাবেক পরিচালক আমিরুল হক, পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুম চৌধুরী, স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রমুখ।